পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শামসুল ইসলাম : স্বপ্নের দেশ সিঙ্গাপুরে নিহত সাংবাদিক নহর আলীর ছেলে প্রবাসী আসাদুজ্জামান রিপন ওরফে রিপন শেখ এখন স্বাবলম্বী। কঠোর পরিশ্রম করে সংসারের ঘানি টেনে ক্লান্ত হয়ে উঠলেও বিদেশের মাটিতে বিধবা মায়ের ফোন পেলে সারা দিনের ক্লান্তি মুহূর্তে দূর হয়ে যায়। আনন্দে ভরে উঠে রিপন শেখের মন। সমাজের একজন বড় মনের মানুষের পূর্ণ সহায়তায় এক সময়ের ঢাকার রাজপথের তরুণ রিকশাচালক আসাদুজ্জামান রিপন শেখ এক বছর আগে বিনা খরচে সিঙ্গাপুরে বৃহৎ একটি কোম্পানিতে চাকরি লাভ করেন। গত এক বছরে কর্মকালীন সময়ে আনুষাঙ্গিক খরচের পর সাড়ে চার লক্ষাধিক টাকা দেশে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে প্রবাসী রিপন শেখ। সেই টাকায় তাদের খুলনার ডুমুরিয়ার বাড়িতে তিন রুমের ইটের পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। অভাব-অনটনে দিন কাটানো নিহত সাংবাদিক পরিবারের সবার মুখে এখন হাসি ফুটেছে। হুন্দাই কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কর্মরত অন্যান্য বাংলাদেশিরা জানান, কোম্পানির একজন কর্মঠ ও নিয়মনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কোম্পানির কর্তৃপক্ষসহ রিপন সকলের কাছেই খুব সমাদৃত। চলতি বছরের জন্য (২০১৭) তার কাজের চুক্তির মেয়াদও নবায়ন করা হচ্ছে।
ছুটির দিনগুলোতে রিপন শেখ সিঙ্গাপুরে শ্রমজীবী অভিবাসীদের অবসর যাপন ও বিনোদন কেন্দ্র বাংলাদেশ সেন্টারে নিয়মিত উপস্থিত হয়ে স্বদেশের সহকর্মী ভাইদের সাথে মিলে প্রবাস জীবনের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেন। তাছাড়া রিপন সিঙ্গাপুরে শ্রমজীবী অভিবাসীদের সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র ‘দিবাশ্রম’ এর একজন নিয়মিত সদস্য হিসেবে সিঙ্গাপুরে শ্রমজীবী অভিবাসীদের কবিতা চর্চা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে আত্মীয়-পরিজনহীন প্রবাস জীবনের নিঃসঙ্গতা ভুলে থাকেন।
আসাদুজ্জামান রিপন ওরপে রিপন শেখের বাবা মরহুম নহর আলী খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক অনির্বাণ পত্রিকার ডুমুরিয়া প্রতিনিধি ছিলেন। ২০০১ সালের ১৭ এপ্রিল রিপনের বাবাকে নিজ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর থেকে অসহায় হয়ে পড়ে নহর আলীর পরিবার। পরিবারে দুর্ভোগ নেমে আসে। নহর আলীর স্ত্রী আসমানী বেগম ছেলে আসাদুজ্জামান রিপন, মেহেদী হাসান রানা, মেয়ে রেহেনা পারভীন ও হীরা খাতুনকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন। এ অবস্থায় বড় ছেলে রিপন শেখ কিছু দিন খুলনায় এবং পরে ঢাকা শহরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। রিপন শেখকে নিয়ে ২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর ‘নিহত সাংবাদিকের ছেলে ঢাকায় রিকশাচালক!’ শিরোনামে ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
রিকশাচালকের দুঃসহ জীবন থেকে রিপন শেখকে মুক্তি দেয়ার ও তার কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেন দেশের গণমাধ্যম কর্মী শ্রম ও অভিবাসন বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তিনি তার জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনা খরচে সিঙ্গাপুরে হুন্দাই কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে রিপনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। রিপন শেখ গত বছর জানুয়ারিতে সিঙ্গাপুরে পৌঁছে কাজে যোগ দেন। সম্প্রতি এ প্রতিবেদক সিঙ্গাপুর সফরে গেলে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাংবাদিক পুত্র রিপন শেখ জানান, তার বাবাকে হত্যা করার পর খুলনার সাংবাদিকরাও ভয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিতেন না। খোঁজ নিতেন একজন, তিনি খুলনা মেট্রো পলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের তৎকালীন সভাপতি বেলাল হোসাইন। তিনিও পরে সন্ত্রাসী হামলায় মারা যান। রিপন শেখ জানান, সিঙ্গাপুরে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে এখন তিনি খুবই ভালো আছেন। নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন। অভিবাসন বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে গেলে প্রবাসী রিপন শেখ বাকরুদ্ধ কণ্ঠে তার কাছে পরম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সে তাদের পরিবারের চরম দুঃসময়ে বিনা অভিবাসন খরচে তাকে দেশে প্রশিক্ষণ ও বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করায় মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া প্রকাশ করেন। এ সময় আবেগাপ্লুত হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ প্রবাসী রিপন শেখকে একটি বই উপহার দেন। অভিবাসন বিশ্লেষক কিরণ জানান, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে তিনি রিপন শেখকে উচ্চতর কারিগরী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। মানুষের যখন কোথাও সহযোগিতার পাওয়ার সুযোগ থাকে না তখন গণমাধ্যম তাদের পাশে দাঁড়ায়। সেই গণমাধ্যম পরিবারের একজন সাংবাদিককে হত্যার পর তার পরিবারে সদ্যসরা রিকশা চালিয়ে জীবনযাপন করবে এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সমাজের যারা উচ্চবিত্ত রয়েছেন তাদের অসহায় মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসা উচিত বলে উল্লেখ করেন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।