Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বক্সারকে পেটালো ছাত্রলীগ

সাড়ে ৩ লাখ টাকা চাঁদাবাজি

| প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাথে ছিল ছাত্রদল নেতাও!
চবি সংবাদদাতা : সাড়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মোনায়েবুর রহমান খানকে (১৯) পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। তবে ছাত্রলীগের এসব কর্মীদের সাথে এক ছাত্রদল নেতাও জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারী বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। রাতে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। মোনায়েবুর রহমান জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বক্সার।
গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে চবি’র এ এফ রহমান হলের ২১২ নং কক্ষে আটকে রেখে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মোনায়েব বিশ^বিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগে ভর্তি হয়।
জানা যায়, মোনায়েব রহমান বিশ^বিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ থেকে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে। মোনায়েবুর রহমানের ছোট ভাই মেজবাউল হক খানও এবার একই শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সাইয়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়। দুইজনই তারা বিকেএসপি’র শিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই কম্পিউটার সাইয়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সাইফুর রহমান উজ্জ্বল নামের এক শিক্ষার্থী তাদের কাছে সাড়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছিল। উজ্জ্বল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাজমুল করিম নিপুনের সাথে মিলে সে একটি চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, এ কারণে ছাত্রদল নেতা হয়েও সে ছাত্রলীগের আশ্রয়ে ওই হলে অবস্থান করছে।  
নতুন বর্ষের ক্লাস করতে তারা ক্যাম্পাসে আসলে উজ্জ্বল সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ ছয় জন ছাত্রলীগ কর্মী মোনায়েবকে এ এফ রহমান হলের ২১২ কক্ষে এনে মারধর করে। পরে  তারা ঐ কক্ষ থেকে মোনায়েবকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করার জন্য বের করলে মোনায়েব তাদের কাছ থেকে দৌড়ে চবি পুলিশের কাছে আশ্রয় নেয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে চবি মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।
এদিকে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সাইফুর রহমান উজ্জ্বল নামের কম্পিউটার সাইয়েন্স এন্ড ইজ্ঞিনিয়ারিং বিভাগে কোন শিক্ষার্থী নাই তবে উজ্জ্বল নামের অনেকেই আছে। কিন্তু সালাউদ্দিন মোহাম্মদ উজ্জ্বল নামের ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন। তিনি এ ঘটনার সাথে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মোনায়েব সাংবাদিকদের জানান, আমি ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের বিকেএসপি কোটায় প্রথম স্থান অধিকার করি। আমার ভাই মেজবাউল হক খান আমার সাথেই এ বছর কম্পিউটার সাইয়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু সাইফুর রহমান উজ্জ্বল প্রথম থেকেই মুঠোফোনে সাড়ে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। তার বক্তব্য ছিল এ রকম সাড়ে তিন লাখ টাকা না দিলে আমরা দুই ভাই ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে পারবো না। তার বাবা ডা. মাহবুবুর রহমান খান বলেন, আমাকে সাড়ে তিন লাখ টাকার জন্য উজ্জ্বল নামের এক ব্যক্তি বেশ কয়েকবার ফোন দেয়। এ সময় উজ্জ্¦ল নিজেকে একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে দাবি করেন।
এ বিষয়ে ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান এ এইচ এম রাকিবুল মাওলা বলেন, মোনায়েব এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় আমার বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে। তাছাড়া সে একজন জাতীয় পর্যায়ে বক্সার। সে বিশে^র বেশ কয়েকটি ইভেন্ট এ বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে অংশগ্রহণ করেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হবে বলে আমি আশাবাদী।
বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, আমরা ঘটনা স্থান পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সাইফুর রহমান উজ্জ্বল নামের এক জনের নাম পেয়েছি। তবে সে সাইফুর রহমান উজ্জ্বল না সালাউদ্দিন মোহাম্মদ উজ্জ্বল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ