পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে বগুড়ার শেরপুর ও ধুনট উপজেলায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা টাকা নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে এবং একই কারণে স্থগিত হওয়া চেয়ারম্যান পদেও দলীয় প্রার্থীর জয়লাভ নিয়েও দলের বেশিরভাগ নেতা-কর্মীর মনে সৃষ্টি হয়েছে শংকা। অন্যদিকে পরাজিতরা ভোট ক্রয় বাবদ দেয়া টাকা ফেরত নিতে ভোটার জনপ্রতিনিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধর্না দিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। পরাজিত প্রার্থীরা এও বলছে, আমাদের মনোনয়ন দেয়ার পর যেসব শীর্ষ নেতা আমাদের তথা মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেনি তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
জানা যায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন বগুড়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও তিনটি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে ভোট স্থগিত করেছে। নির্ধারিত দিনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে ১৫ ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সাধারণ ও সংরক্ষিত ১৭ সদস্য পদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ১০ জন, বিদ্রোহী ৬ জন এবং জাপা থেকে একজন নির্বাচিত হয়েছেন। পরবর্তীতে আদালতের সিদ্ধান্তে চেয়ারম্যান ও তিনটি সদস্য পদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচন শেষ হবার পর বগুড়ার শেরপুর ও ধুনট উপজেলায় পরাজিত প্রার্থী ও ভোটার জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি প্রার্থীই ভোট পেতে ভোটারদের ‘সম্মানীর’ নামে দাবি করা ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা টাকা দিয়েছিলেন। এ টাকার খেলা ও দলের দায়িত্বশীল নেতাদের অসহযোগিতার কারণে এ দুটি উপজেলায় ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং ২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে দলীয় তিন প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। পরাজয়ের জন্য তারা দুটি উপজেলার শীর্ষ নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে দায়ী করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের (ধুনট) সাধারণ সদস্য পদে ৭ জন প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আমানউল্লাহ ছিলেন দলীয় প্রার্থী। অন্য ৫ জন বিদ্রোহী ও একজন জাসদ প্রার্থী। পৌরসভাসহ ১০ ইউনিয়নে ভোটার ১শ’ ৪৫ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১শ’ ৪৩ জন। ৪৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন বিদ্রোহী প্রার্থী এফএম ফজলুল হক। পরাজিত বিদ্রোহী প্রার্থী মাছুদুল হক বাচ্চু অভিযোগ করেন, ভোটের আগে ৯৩ জন ভোটার তার কাছে ‘সম্মানী’ হিসাবে ১৫ হাজার টাকা করে নেন। কিন্তু ভোট দেন মাত্র ১১ জন। তাই তিনি যারা ভোট দেননি তাদের কাছে টাকা ফেরত চেয়েছেন। ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ১৬ জন টাকা ফেরত দিয়েছেন।
অপর প্রার্থী যুবলীগ নেতা রুবেল ৯২ জনকে ২০ হাজার করে টাকা করে দিয়েছিলেন। এ পর্যন্ত ১০ জন তাকে টাকা ফেরত দিয়েছেন। এছাড়া স্থানীয় শীর্ষ এক নেতা অপর প্রার্থী মাসুদ রানার কাছে বেশি সুবিধা নিলেও তাকে বিজয়ী করতে পারেননি। এমনকি তিনি তারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষেও কাজ করেননি।
এ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সদস্য প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আমানউল্লাহ অভিযোগ করেন, ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টিআইএম নুরুন্নবী তারিক ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাই খোকন তাকে কোন সহযোগিতা করেননি। বরং তারা পরোক্ষভাবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেন। ফলে সদস্য প্রার্থী আজমী আরা পারভীন পরাজিত হয়েছেন। অ্যাডভোকেট আমান উল্লাহ বলেন, তিনি ১৯৬৯ সাল থেকে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। অথচ দলীয় নেতাকর্মীদের অসহযোগিতা ও টাকা খরচ করতে না পারায় পরাজিত হয়েছেন। এ পরাজয়ের জন্য তিনি লজ্জায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। বিষয়টি তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে জানাবেন এবং সব গোপন তথ্য ফাঁস করে দিবেন।
৪ নম্বর ওয়ার্ডে শেরপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজার রহমান ভুট্টো ৪৯ ভোট পেয়ে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দলীয় প্রার্থী আহসান হাবিব আম্বিয়ার শোচনীয় পরাজয় সম্পর্কে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এখানে শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আবদুস সাত্তার বলেন, অর্থের মাধ্যমে ভোট কেনাবেচা হয়েছে। এছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজনুর স্ত্রী শিল্পী বেগম ভোটের আগে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শার্টপ্যান্ট দিয়েছেন। তার মতে, শিল্পী বেগম বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দলীয় প্রার্থী আম্বিয়া পরাজিত হয়েছেন। আম্বিয়া পেয়েছেন ৩৭ ভোট আর শিল্পী বেগম ৪৯ ভোট। তিনি অবশ্য দাবি করেন, শিল্পী বেগম তার স্বামীর অসম্মতিতে প্রার্থী হয়েছিলেন। এ জন্য তাদের সংসারে অশান্তি দেখা দিয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধুনট ও শেরপুরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বলেছেন, দুটি উপজেলায় টাকার খেলা ও নেতাদের অসহযোগিতার কারণে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের পরাজয় হয়েছে। এমন অনেক শীর্ষ নেতা ও ভোটাররা দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী ডা. মকবুল হোসেনের পরিবর্তে বিদ্রোহী সোলায়মান আলী মাস্টারের পক্ষে কাজ করছেন। ধুনট উপজেলা সভাপতির বন্ধুর শশুর চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী তাই তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী সোলায়মান আলীর পক্ষে কাজ করছেন। অথচ সাদা মনের মানুষ, যার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই তিনি কি দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থী হলেও হেরে যাবেন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।