এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারীরাও
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। লিঙ্গ সমতার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি
রাফিজা খান একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। কাক ডাকার আগেই বিছানা ছেড়ে চলে যেতে হয় রান্না ঘরে। স্বামীর জন্য দুপুরের খাবার, বাড়ির সদস্যদের জন্য নাস্তা, বাচ্চার স্কুলের টিফিন ইত্যাদি করে ভালোই চলে যায়। তারপরও অতীতের সেই স্কুলজীবনের বিভীষিকাময় দিনগুলির চেয়ে হাজারও ভালো আছি নিশ্চিত আছি। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু নিয়তির খেলা বোঝা দায়, হলাম স্কুল শিক্ষিকা। প্রাইমারী স্কুল পার করার পর যখন হাই স্কুলে ভর্তি হই অমনি ওদের চোখে পড়ি কথাগুলো অনেক কষ্টে হৃদয়ের গভীর থেকে বললেন রাফিজা খান। বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক পরিবারে জন্ম রাফিজার। রাফিজা তার অতীতের বেদনায়ক স্মৃতি প্রসঙ্গে বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে সে, প্রায় দুই মাইলের মতো পথ হেঁটে স্কুলে যেতে হত। স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত মহল্লার কয়েকটি বখাটে ছেলে। রাফিজা দিশেহারা হয়ে বাবা-মাকে জানান ব্যাপারটি, বাবা-মা গ্রামের মাথাওয়ালা লোকদের কাছে বিচার দেয় কিন্তু ফল শূন্য। বাবা-মা প্রায় দিশেহারা হয়ে মেয়েকে বিয়ে দেয়। রাফিজার ভাগ্য ভাল যে, সে একজন আদর্শ এবং ভিন্নমনা স্বামী পেয়েছিল সে থেমে থাকেনি। তার শিক্ষা জীবন তার স্বামী ধ্বংস হতে দেয়নি।
কিন্তু আমাদের দেশে গ্রামে-গঞ্জে শহরের স্কুলগুলোতে যাওয়ার পথে বাধার অন্ত নেই, নারী নির্যাতনের একটি বিশেষ প্রকৃতি অনেকদিন যাবৎই চোখে পড়ছে। মেয়েরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মেয়েদের স্কুল কলেজে যাওয়ার পথে বখাটে মস্তানরা ওঁৎ পেতে থাকে, তাদের প্রতি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করছে। খারাপ ব্যবহার, খারাপ প্রস্তাব এমনকি ভয়ভীতির পাশাপাশি এসিড নিক্ষেপ করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে অপহরণ, খুন, হত্যা, আর ধর্ষণ তো বলার অপেক্ষা রাখে না। পত্রিকার পাতা খুললেই হাতেগোনা দুই একদিন বাদ যেতে পারে এসব ঘটনা চোখে পড়বেই। তারপর কত কত ঘটনা আছে যা সংবাদপত্র অফিস পর্যন্ত পৌঁছায় না। পথে-ঘাটে বখাটেদের অত্যাচার সহ্য করতে হয়Ñবহু ছাত্রীকে। বাবা-মায়েরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সঙ্গত কারণেই। নিরাপত্তার অভাবে অসংখ্য মেয়ের পড়াশুনা বন্ধ হচ্ছে। ফলে পরিবারের বোঝা হচ্ছে মেয়েরা যার কারণে বাবা-মা সহজেই মেয়েটিকে ধরে বিয়ে দিচ্ছেন, সব ক্ষেত্রেই ভাল ছেলে আশা করা যায় না। এতে করে মেয়েটির উজ্জ্বল ভবিষ্যত নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশে ছেলের চেয়ে মেয়েদের শিক্ষার হার কম। প্রাথমিক পর্যায় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর ঝড়ে পড়ার হার ছেলে শিক্ষার্থী তুলনায় অনেক বেশি। সরকার মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি প্রোগ্রাম প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে অবৈতনিক শিক্ষা, উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু সমস্ত সুযোগ-সুবিধাটাই অর্থহীন হয়ে যাবে যদি মেয়েরা স্কুলে যাওয়ার পথেই বাধাগ্রস্ত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি নিরাপদে পৌঁছতে না পারে। সারাক্ষণ যদি আতঙ্কের মধ্যে থাকে তবে সব সুবিধাই অচল রূপ ধারণ করবে। শিক্ষা ছাড়া মেয়েদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি কোনক্রমেই সম্ভব নয়। অপরদিকে নিরাপদ সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ ছাড়া শিক্ষা অর্জন সম্ভব নয়। সরকার যদি কঠোর হোন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের মাধ্যমেই মেয়েরা স্বাভাবিকভাবে নিরাপত্তার সাথে শিক্ষা জীবন চালিয়ে যেতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
য় নাসিমা বিলকিস
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।