পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাণিজ্যমেলা উদ্বোধনকালে ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ সংবাদদাতা : জিএসপি সুবিধার পেছনে না ছুটে নতুন বাজার সৃষ্টি এবং পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়াতে ব্যবসায়ীদের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল রোববার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা বলেন, কয়েকটি দেশ ঘুরে, কোন দেশ জিএসপি দিল না, তাদের কাছে ধর্ণা না দিয়ে, আপনি খুঁজে বের করুন অন্য জায়গা। অন্য মার্কেট খোঁজেন।
ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, ওরাই আপনার পেছনে দৌড়াবে। কারণ বাংলাদেশ যত পণ্য, যত দ্রুত সরবরাহ করতে পারবে, পৃথিবীর কোনো দেশ তা পারবে না।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এতো যোগ্য। তারা মেধাবী। একটু সুযোগ সৃষ্টি করলে যে কোনো কিছু তারা করতে পারে। সেই সক্ষমতা বাংলাদেশের মানুষের আছে। তাদের শুধু পথ দেখাতে হবে।
পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করছি। গতানুগতিক কিছু পণ্যের ওপর নির্ভর করে না থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যর বহুমুখীকরণ করতে হবে। সে অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করতে হবে।
তিনি বলেন, উৎপাদিত পণ্যের যাতে একটা স্ট্যান্ডার্ড থাকে, বাজারজাত করার মতো উপযুক্ত হয়, সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। পণ্য উৎপাদনে মান নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী চামড়াজাত পণ্যকে ২০১৭ সালের জন্য ‘প্রডাক্ট অব দি ইয়ার’ (জাতীয়ভাবে বার্ষিক পণ্য) ঘোষণা করেন। উদীয়মান চামড়া শিল্পখাতের অন্তর্নিহিত সকল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে আমি আগামী ২০১৭ সালের জন্য চামড়া ও পাদুকাসহ চামড়াজাত পণ্যকে জাতীয়ভাবে বার্ষিক পণ্য বা প্রডাক্ট অব দি ইয়ার হিসেবে ঘোষণা করছি। বার্ষিক পণ্য ঘোষণার প্রেক্ষিতে এ পণ্যকে সব ধরনের সহযোগিতা ও প্রণোদনা প্রদানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার শুধু পোশাক শিল্পের মধ্যে রপ্তানি আয়কে সীমাবদ্ধ না রেখে রপ্তানি পণ্যের বাজার বহুমুখী করার উপর গুরুত্বারোপ করে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তা আরও কার্যকর করার পন্থা অবলম্বন করেছে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত সাড়ে চার দশকে চামড়া খাতে রপ্তানি প্রায় ৭১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথম সারির বৈশ্বিক পণ্যগুলোর চামড়াজাত পণ্য এখন বাংলাদেশেই প্রস্তুত হয়। এ পণ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য-সংযোজন সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বের সাথে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাব সেই চিন্তা-চেতনা নিয়েই কিন্তু আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করে যাচ্ছি। অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল করার জন্য বেসরকারি খাতকে আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। বেসরকারি খাতের যেন পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে সেজন্য বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন, বিদ্যুৎ উৎপাদনকেও আমরা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে আমি বলব, বেসরকারি খাতেরও যথেষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। ব্যবসায়ীরা নিজেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করে কেবল নিজেরাই সম্পদশালী হবেন, আর বড় লোক হবেন সেই চিন্তা-ভাবনা যেন না থাকে। মনে রাখতে হবে আপনাদেরকে যে সুযোগ-সুবিধাগুলো দিচ্ছি অর্থাৎ আমরা সরকার হিসেবে ফ্যাসিলেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি আপনাদের সেই সুযোগ নিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণ করতে হবে, দেশের মানুষের উন্নতি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন এবং এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমদ। ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান মাফরূহা সুলতানা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যারা শিল্প কল-কারখানা গড়ে তুলবেন তাদের খেয়াল রাখতে হবে আমরা রপ্তানিকে গুরুত্ব দেই। আবার এটাও ভাবতে হবে আমার নিজের দেশে বাজার সৃষ্টি করতে হবে। নিজের দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে। আজকে আমার দেশের মানুষের যদি আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে আমার দেশের মানুষের যদি ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে তাহলে মানুষ যেমন ভালো থাকবে তেমনি আপনাদের শিল্পের প্রসার ঘটবে।
ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজারই শুধু না কোন দেশের কোন এলাকায় কোন পণ্যের চাহিদা বেশি এবং কোন পণ্যের উৎপাদন আমাদের দেশে সম্ভব তা আপনাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। সেই সাথে সাথে সেসব পণ্য আপনাদের উৎপাদন করে নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে।
’৯৬ সালে তার সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে সেখানে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেন এবং পরবর্তীতে জাপান এবং ভারতসহ প্রতিবেশি বেশ কয়েকটি দেশেও বেশ কিছু পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের জনগণের ওপর আস্থা রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তারা এত যোগ্য, তাদের মেধা এত ভালো একটু সুযোগ পেলেই তারা যেকোন পণ্য উৎপাদন করতে পারবে সে ধরনের সক্ষমতা বাংলাদেশের মানুষের আছে। তাদেরকে শুধু পথ দেখাতে হবে, ট্রেডিং দিতে হবেÑ এটাই আমি আপনাদের কাছে বলতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর একশ’টি দেশে এখন আমরা পণ্য রপ্তানি করছি। আমাদের বহুপণ্য আজকে বিদেশে যাচ্ছে। বিশ্ব এখন পরিবেশ বিষয়ে সচেতন। যে কারণে পাট ও পাটজাত পণ্যের বিরাট একটা বাজার আজকে সৃষ্টি হয়েছে কারণ পাট হলো একটি কৃষি পণ্য। কাজেই পাট ও পাটজাত পণ্য যতটা উৎপাদন করা যায় তা আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারি। পাট ও পাটজাত পণ্য নিয়ে গবেষণা করে আমরা পাটের জন্ম রহস্য যেমন উন্মোচন করেছি তেমনি পাট নিয়ে গবেষণা করে পাটের বেশ কিছু প্রডাক্ট আমরা পেয়েছি। যেগুলো উৎপাদন করে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারি আবার দেশের কাজেও লাগাতে পারি। যাতে করে কৃষকরাও লাভবান হবে। এভাবেই আমাদের রপ্তানিকে বহুমুখীকরণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী গবেষণার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, আপনারা ব্যবসায়ীরা ঐ গতানুগতিক কিছু পণ্যের দিকে তাকিয়ে না থেকে কিভাবে পণ্যের বহুমুখিকরণ করা যায় সেদিকে নজর দেবেন আমার মনে হয় এফবিসিসিআই’র একটি পৃথক গবেষণা সেল থাকা উচিত। যাদের কাজ হবে গবেষণা করা পৃথিবীর কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা সেই পণ্য উৎপাদন করার মত সক্ষমতা আমাদের দেশের রয়েছে কি না, আমাদের কাঁচামাল আছে কি না, সেগুলো আমদানি করা। এ ধরনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা যেতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে যদি আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই তাহলে অন্যান্য দিকে থেকেও আমাদের এগোতে হবে। শিল্পায়নটাও দরকার। সে দিকেই লক্ষ্য রেখে আমরা একশ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় করে দিচ্ছি। আপনারা যদি বিনিয়োগ করতে চান তাহলে এসব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে করতে হবে কারণ সেখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সুবিধা আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি।
এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্েয জাতীয় রপ্তানি ট্রফি বিতরণ করেন। স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ তিন ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। এবার সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসাবে জাতীয় রপ্তানি ট্রফিতে স্বর্ণপদক পেয়েছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড। নির্ধারিত ৩২টি পণ্য ও সেবা ক্যাটাগরির ১৯২টি আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৯টি স্বর্ণ, ২২টি রৌপ্য এবং ১৫টি ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।