Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

৫ জানুয়ারি কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি-রিজভী

| প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ‘রাজপথে নামতে দেয়া হবে না’- আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফের দেয়া হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৫ জানুয়ারি ‘কালোপতাকা মিছিল করবে’ বলে পাল্টা ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি
গতকাল শুক্রবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের বক্তব্যের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের এই অবস্থানের কথা জানান। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
তিনি বলেন, দলের পক্ষ থেকে আমরা ৫ জানুয়ারি সারাদেশে মহানগর-জেলায় কালোপতাকা মিছিল ও কালোব্যাজ ধারণের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি, সেটা হবেই। আমাদের জেলা নেতৃবৃন্দ সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সকল নেতা-কর্মীর সমন্বয়ে একটি সাফল্যম-িত কর্মসূচি হবে। আগামী ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ৭ জানুয়ারি সমাবেশও হবে, আইনি যে প্রক্রিয়া তাও চলছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের বক্তব্যে জবাবে রিজভী বলেন, রাজপথে নামতে দেয়া হবে না- এটাই তো গণতন্ত্র হত্যার একটা দৃষ্টান্ত। নামতে দেবেন না কেনো? ওইটা যদি গণতান্ত্রিক ভোট হয়ে থাকে। গণতন্ত্র মানেই তো সমাবেশ, গণতন্ত্র মানেই তো মিছিল।
যারা অগণতান্ত্রিক শক্তি, যারা ভীত-সন্ত্রস্ত্র, তারা লোক দেখলে, তারা ভিড় দেখলে, জনগণের মিছিল দেখলে ভীত-সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়ে, ভয় পেয়ে উঠে। তখন তাদের পেটোয়াবাহিনী, তাদের যে বাহিনী তারা তৈরি করে, সেই বাহিনী দিয়ে চড়াও হয়। তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তারা (ক্ষমতাসীনদল) প্রমাণ করে দিলেন, তারা গণতন্ত্র হন্তারক, গণতন্ত্রহত্যাকারী এবং তারা নিষ্ঠুরভাবে গণতন্ত্রকে মাটিচাপা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালন করবে জানিয়ে শুক্রবার আওয়ামী লীগ দক্ষিণের এক যৌথ সভায় এক সভায় মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, জনগণ বিএনপিকে রাস্তায় নামতে দিবে না। বিএনপিকে এই দিবস নিয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে রাজপথে নামতে দেওয়া হবে না।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি ও তার শরিকরা। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ২০১৫ বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ এবং আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালনের ঘোষণা দিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিলে তৈরি হয় উত্তেজনা। পুলিশ ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সমাবেশের পথ বন্ধ করে দিলে খালেদা টানা অবরোধের ঘোষণা দেন।
দশম সংসদের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চলতি বছর ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। আর আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করেছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে।
নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি এগিয়ে আসায় গত ২৮ ডিসেম্বর কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আগামী ৫ জানুয়ারি কালোপতাকা মিছিল করবে তার দল। আর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ জানুয়ারি হবে সমাবেশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ লুণ্ঠনের রিপোর্ট প্রকাশের দাবি
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, বিশ্বের ব্যাংকিং ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ লুটের ঘটনার তদন্ত সরকার ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। প্রায় একবছর আগে এই লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও অবৈধ সরকারের অর্থমন্ত্রী ঘটনা আড়াল করে রেখেছেন। প্রতিদিন দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশ হচ্ছে, আজো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। অর্থমন্ত্রী কেনো এই রিপোর্ট প্রকাশ করছেন না, তা বুঝতে জনগণের বাকী নেই। কারণ এর সাথে সরকারের রাঘব-বোয়ালরা জড়িত। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে আবারো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারীর তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের আহ্বান জানাচ্ছি।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রসঙ্গে
৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণার জবাবে রিজভী বলেন, খুব ভালো কথা। রং-তামাশার এই দৃষ্টান্ত পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা আমরা জানা নেই। সবকিছু উল্টে যাচ্ছে। শুভ দিককে অশুভ বানানোর প্রচেষ্টা শুধু বাংলাদেশের নয় অন্যান্য দেশেও আমরা দেখতে পাচ্ছি। মহাত্মা গান্ধী একজন শান্তিবাদী নেতা। সেখানে একটি সংগঠন ‘গান্ধী বধ দিবস’ পালনের ঘোষণা করেছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়েছে।
বাংলাদেশেও তাই চলছে। ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হলেন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে মানুষের কোনো পদচারণা নেই, পশু-ছাগল- এদের পদচারণা সেই নির্বাচনে উনারা জিতেছেন বলে মনে করেন এবং উল্লাস করে বলছেন বিজয় দিবস পালন করবেন- এতো বড় হাস্যকর ঘটনা কী হতে পারে? যাদের একেবারেই লাজ-লজ্জা নেই তারাই এসব কাজ করতে পারে। জনগণের কাছে যাবেন না বলেই আওয়ামী লীগ অশুভ শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে কোনো নির্বাচনই ‘নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়নি বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন প্রমুখ উপস্থিত ছ্েিলন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ