Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অপারেশন করাতে গিয়ে সড়কে প্রাণ গেল মা ও কিশোর পুত্রের

| প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো: আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম থেকে : তিন সন্তানের জননী জয়নব বেগম (৩০)  দীর্ঘদিন  জরায়ু সমস্যায় ভুগছিলেন। স্বামী দিন মজুর হওয়াতে ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। শরণাপন্ন হয়েছিলেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা: আক্তারুন নাহার আখি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: শহিদুল ইসলাম ভূইয়া রুবেলের কাছে। জয়নব বেগমের কথা শুনে দুই ডাক্তার তার পাশে দাড়ান। পরামর্শ দেয়া হয় তাড়াতাড়ি জরায়ু অপারেশন করতে হবে। খরচ হবে প্রায় ২২ হাজার টাকা। কিন্তু জয়নব বেগমের পরিবারের পক্ষে এই টাকাও পরিশোধ করা সম্ভব না। তাই তার কথা শুনে পাশে দাড়ান কুয়েত প্রবাসী এক ব্যক্তি। জয়নব বেগমের খরচ কমাতে দুই চিকিৎসক কথা বলেন চৌদ্দগ্রামের এক প্রাইভেট ক্লিনিকের মালিকের সাথে। কুয়েত প্রবাসীর অনুরোধে দুই চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জয়নব বেগমের চিকিৎসার খরচ অর্ধেকে কমিয়ে আনে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জয়নব বেগম তার দুই সন্তান ১৫ বছরের রবিউল ও তিন বছরের শিশু সন্তান তানবিরকে নিয়ে চৌদ্দগ্রামের ঐ প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হতে আসেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী তার কোনো জিম্মাদার না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি করতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং একজন জিম্মাদার নিয়ে আসতে বলে। কিন্তু জিম্মাদার না পেয়ে মোটরচালিত রিকশায় করে ছুটে যান তার নিয়মিত দুই চিকিৎসক ডা: আক্তারুন নাহার আখি ও শহিদুল ইসলাম ভূইয়া রুবেলের কাছে। কিন্তু পৌঁছা হলো না তার দুই চিকিৎসকের কাছে। তার আগেই ঘাতক কাভার্ড ভ্যান কেড়ে নিলো জয়নব বেগম ও তার বড় ছেলের রবিউলের প্রাণ। ভ্যাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তিন বছরের শিশু সন্তান তানবির। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শুক্রুবার জুমার নামাজের সময় কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চ্ট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের সামনে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মহাসড়ক থেকে নিহতদের ছিন্ন-ভিন্ন দেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।  জয়নব বেগম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের জিনিদকরা গ্রামের ইকবাল হোসেনের ন্ত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, চৌদ্দগ্রাম বাজার থেকে জয়নব বেগম তিন সন্তান নিয়ে মোটরচালিত রিকশাযোগে হাসপাতালে ডাক্তার আখি ও শহিদুল ইসলাম ভূইয়া রুবেলের চেম্বারে সন্তানদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় মহাসড়ক পার হতে গিয়ে কার্ভাডভ্যানের সামনে পড়ে যায় তাদেও বহনকারী রিকশাটি। একপর্যায়ে রিকশা ফেলে চালক সটকে পড়লেও কার্ভাডভ্যান মুখে করে প্রায় ১০ গজ নিয়ে যায় জয়নব ও তার ছেলে রবিউলকে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় জয়নবের কোলে থাকা ৩ বছরের পুত্র সন্তান। পরে স্থানীয়রা দৌঁড়ে এসে ঘাতক কার্ভাডভ্যানটি আটক করে এবং শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে মা হারা শিশুটি এক মহিলার কোলে যন্ত্রণায় চিৎকার করছে আর মা মা বলে ডাকছে। এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত সবার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল।
এ ব্যাপারে জয়নব বেগমের দুই চিকিসক ডাক্তার শহিদুল ইসলাম ভূইয়া রুবেল ও আখতারুন্নার আখি বলেন জয়নব বেগম আমাদের দুজনের রোগী ছিল। তাছাড়া সে অন্ত্যন্ত গরিব ছিল। দিন দিন তার সমস্যা বেড়ে যাচ্ছিল। পরামর্শ অনুযায়ী তিনি একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হতে যান। শুক্রবার অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। তার মৃত্যুতে আমরা সত্যি মর্মাহত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ