Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বস্তির আশা যাত্রীদের

ট্রেনের টিকিটে নতুন নিয়ম

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২৩, ১২:০০ এএম

কলোবাজারি, অনিয়ম ও নানা দুর্ভোগ ঠেকাতে ট্রেনের টিকিটে নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। নতুন নিয়মকে সহজেই মেনে নিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তারা মনে করছেন ট্রেনের টিকিট সিস্টেম একটা নিয়মের মধ্যে চলে আসলে ভোগান্তি কমে আসবে। এই পদ্ধতি ব্যবহারে যার টিকিট সে কাটবে এভাবে সাধারণ যাত্রীরা তার নির্ধারিত গন্তব্যে যাওয়ার টিকিট পাবেন বলে মনে করেন তারা।

জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ ছাড়া ট্রেনের টিকিট কাটা যাবে না। বিদেশি নাগরিকদের ট্রেনে ভ্রমণে পাসপোর্ট দেখিয়ে টিকিট নিতে হবে। রেলের টিকিট কাটতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্মনিবন্ধন দিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। এরপর তা নির্বাচন কমিশনে রক্ষিত ডেটাবেজ থেকে যাচাই করা হয়। এরপরই টিকিট কাটতে পারবেন যাত্রীরা। একজনের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকিট কেটে অন্য কেউ ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবে না।

অনেকেই বলছেন, নতুন এই পদ্ধতি কঠিন লাগছে কারণ জাতীয় পরিচয়পত্র রেলের সার্ভারে গিয়ে নিবন্ধন করতে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, এভাবে টিকিট কাটতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। নিবন্ধনের পর নির্দিষ্ট ব্যক্তি তার কাঙ্খিত টিকিটটি পেয়ে যাচ্ছেন। তবে রেল কর্মকর্তারা বলছেন, ধীরে ধীরে সবাই এই ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। তখন আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

এই প্রক্রিয়া দুইভাবে করা যায়। বিআর (স্পেস দিয়ে) জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর এবং জন্ম তারিখ লিখে এসএমএস করতে হবে ২৬৯৬৯ নম্বরে। স্মার্টফোন বা ডেস্কটপে রেল সেবা অ্যাপ এবং রেলওয়ের ওয়েবসাইটে গিয়েও একই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন করতে হয়। নিবন্ধন একবার করলেই পরে যে কোনো সময় টিকিট কাটা যাবে। এরপর টিকিট কেনা যায় অনলাইনেও, আবার কাউন্টারেও। নিবন্ধন করলেও কাউন্টারে টিকিট নেয়ার সময় অথবা অনলাইনে কেনা টিকিট প্রিন্ট করার সময় সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র বা ফটোকপি নিয়ে যেতে হয়। ট্রেনে যাত্রার সময়ও পরিচয়পত্র সঙ্গে থাকতে হবে। রেলকর্মীরা পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিকিট মিলিয়ে দেখবেন। যদি না মেলে তাহলে গুণতে হবে জরিমানা। যারা টিকিট ছাড়া ট্রেনে উঠবেন, তাদের টিকিট কাটার জন্য রশিদের বদলে থাকবে পস মেশিন। তখনও দেখাতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র।

১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী যাত্রীরা বাবা অথবা মায়ের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা রেলওয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টিকিট কাটতে পারবে। এক্ষেত্রে টিকেটের উপরে লেখা নামের সঙ্গে যাত্রীর সম্পর্ক যাচাই করতে ভ্রমণের সময় বাধ্যতামূলকভাবে ওই শিশুকে জন্মনিবন্ধন সনদের অনুলিপি সঙ্গে রাখতে হবে।
তবে এই বয়সীরা জন্মনিবন্ধন সনদ আপলোড করার মাধ্যমে নিজের নামে অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকেই টিকিট কাটতে পারবে। বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে ও পাসপোর্টের ছবি আপলোডের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবে। ভ্রমণকালে সব ধরনের যাত্রীকে অবশ্যই নিজের এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সনদের অনুলিপি বা অথবা পাসপোর্ট/ছবি সংবলিত পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। নিবন্ধিত এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কাটতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভ্রমণকালে কেবল টিকিট কাটা ব্যক্তির পরিচয়পত্র থাকলেই চলবে। পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিকিটের উপর মুদ্রিত যাত্রীর তথ্য না মিললে যাত্রীকে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে অভিযুক্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার মো. মাসুদ সারওয়ার বলেন, কালোবাজারিসহ নানা অনিয়ম বন্ধে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবাই ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
রেলমন্ত্রী গত বুধবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকেট যার ভ্রমণ তার শীর্ষক সেøাগান কে সামনে রেখে ও স্মার্ট রেলওয়ে গঠনের অংশ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটিং ব্যবস্থার চালু করা ও টিকিট চেকিং ব্যবস্থায় পস মেশিন হস্তান্তর উপলক্ষে এ কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেছেন, যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য আমরা একাধিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এতদিন টিকিট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে অভিযোগ ছিল তা থেকে বের হওয়ার জন্য ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ কার্যক্রম আমরা শুরু করেছি। যাত্রীরা যাতে আরো বেশি সুযোগ সুবিধা পেতে পারে এবং কোন প্রকার কালোবাজারি ছাড়াই নিজের টিকিট নিজে কাটতে পারে সেটি করার জন্যই আমরা টিকিটে জাতীয় পরিচয়পত্র সংযোজন করেছি। এটিই শেষ নয়, প্রয়োজনে আমরা আরো সংস্কার করবো যাত্রীসহ সকলের মতামত নিয়ে।
তিনি উল্লেখ করেন, মূল বিষয় হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া এবং রেজিস্ট্রেশন ছাড়া টিকিট ক্রয় করা যাবে না এবং কেউ ভ্রমণ করতে পারবে না এখন শুধুমাত্র আন্তঃনগর ট্রেনে এর ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে ,পর্যায়ক্রমে লোকাল ট্রেনেও এটি কার্যকর করা হবে।

মন্ত্রী আরো উল্লেখ করেন, এখন থেকে অন্যের টিকিটে ভ্রমণ করলে বিনা টিকিটের যাত্রী হিসেবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া টিটিইদের কাছে পস মেশিন সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করবে এবং এ টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হবে। টিটিইদের বিরুদ্ধে এতদিন যে অভিযোগ ছিল টাকা সরকারি খাতে জমা না দেওয়ার সেটাও এর মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যাবে।

মন্ত্রী জানান, আমি কাউন্টার পরিদর্শন করে যাত্রীদের মধ্যে এ বিষয়ে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া দেখেছি। ভবিষ্যতে আমরা যাত্রীদের জন্য আরো সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে পারবো। এনআইডির তথ্য পাচারের কোন সুযোগ নেই কারণ আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি করেছি। যতটুকু দরকার ততটুকু তথ্যই আমরা নেব এবং মূল সার্ভারের সঙ্গে তথ্যগুলো যুক্ত থাকবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ