পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আম লিচুতে ভরপুর, জেলার নাম দিনাজপুর। এটি জেলার ব্রান্ডিং নাম। রসে ভরা টসটসে লিচুর কথা রসপিপাসুদের অজানা নয়। বছর ঘুরে আবার এসেছে আম লিচুর মৌসুম। জেলার হাজার হাজার গাছে শোভা পেতে শুরু করেছে মুকুল। গাছভরা মুকুল দেখে বাগানি, কৃষক ও ফড়িয়ারা বুকভরা আশা নিয়ে পরিচর্যার পাশাপাশি বাগানে অবস্থান করতে শুরু করেছেন। এবারও লিচু’র বাম্পার ফলনের আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। আমের চেয়ে দিনাজপুরের লিচুর খ্যাতি ও চাহিদা অনেক বেশি। কিন্তু দাম ও পরিবহন খরচের কারণে জেলার বাহিরে রসপিপাসুদের লিচুর স্বাদ গ্রহণ অনেকটা ফিকে হয়ে যায়। গত বছর প্রকৃত চায়না-থ্রি ও বেদেনা লিচু প্রতিটা বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ১৮ টাকা পর্যন্ত। দামের কারণে চায়না-থ্রি’র জায়গায় চায়না-টু এবং বেদেনার জায়গায় উন্নতমানের বোম্বে ও মাদ্রাজি লিচু গুছিয়ে দেয়া হয় রসপিপাসুদের। কিন্তু কিছুই করার থাকে না ক্রেতা ও বিক্রেতাদের।
দিনাজপুরের লিচুর খ্যাতি দেশব্যাপী। লিচুর জন্য উপযোগী দিনাজপুর ও আশপাশের জেলাগুলিতে গত দুই দশকে হাজার হাজার বাগান গড়ে উঠেছে। প্রকারভেদে ৫০টি থেকে একেকটি বাগানে ৪শ গাছ রয়েছে। যার অধিকাংশতেই মুকুল এসেছে। বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে বাম্পার ফলন হবে এবার। গত মৌসুমে দিনাজপুর অঞ্চলে চায়না থ্রি লিচু’র ফলন বিপর্যয় ঘটেছিল। তবে এবার মুকুল দেখে কৃষকেরা মনে করছে রসালো চায়না-৩ ও ২ এবং বেদেনা লিচুর ফলন ভাল হবে। চুক্তিতে গাছের ফল কিনে নেয়া ফড়িয়ারা গাছের পরিচর্যা শুরু করে দিয়েছেন। গাছের গোড়ায় সেচ দেয়ার পাশাপাশি মুকুল রক্ষায় ভিটামিন ও কিটনাশক প্রয়োগ করছেন। পর্যায়ক্রমে ফল রক্ষা, দানা বড় করাসহ প্রয়োজনীয় স্প্রে করা হবে। প্রতিবছরের মত দিনাজপুরের লিচুর বাজারে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। লিচুর সাথে কৃষক, ফড়িয়া, মৌসুমী ব্যবসায়ী, পরিবহন ব্যবসায়ী, খাঁচা তৈরিতে নৃ-গোষ্টিসহ গ্রামের হাজারো নারী পুরুষ সম্পৃক্ত হয়ে থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ খালেদুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে দিনাজপুরে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টরে লিচু ও সাড়ে ৬ হাজার হেক্টরে আমের আবাদ হয়েছে। তার মতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লিচুর বাম্পার ফলন হবে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বেদেনা লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুর সদর উপজেলার দক্ষিণাংশে মাশিমপুর ও তার আশপাশ এলাকা। অন্যান্য এলাকাতেও বেদেনা লিচু উৎপাদিত হলেও মাশিমপুরের লিচুর স্বাদই আলাদা। বেদেনা লিচুর বৈশিষ্ট হলো, এর ভিতরে বিচি অনেক ছোট। পুরোটাই যেন মাংস। আর মিষ্টির স্বাদ মুখে লেগে থাকে। মাশিমপুর গ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার জানালেন, বাড়ির পাশেই তার ছোট বাগানে ১৬টি গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি বেদেনার গাছ। তার মতে গত বছর ৫টি গাছে ভাল মুকুল এসেছিল আর এবার ৯টি গাছেই মুকুল এসেছে। গত বছর প্রখর রৌদ্র তাপের কারণে লিচুর দানা বড় না হতেই পাক ধরে গিয়েছিল। কিন্তু এবার এখনও শীতের ভাব রয়েছে। আশা করছেন এবার ভাল ফলন হবে।
লিচুতে নগদ টাকা পাওয়ায় গত এক দশকে দিনাজপুর ও আশপাশে ব্যাপকভাবে লিচুর বাগান গড়ে উঠেছে। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মাধববাটি, কাজিপাড়া এলাকায় গেলে হাজার হাজার গাছের বাগান দেখতে পাওয়া যায়। এখানকার বাগান মালিক ইসমাইল হোসেন জানালেন, তার বাগানে ৩শ গাছ রয়েছে। গাছের পূরো ফল বিক্রি করে দিয়েছে তিন বছরের জন্য। ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় । এই তিন বছর ফল ক্রেতা ফড়িয়াই বাগান পরিচর্যা করবেন। সার ভিটামিন ও বিষ প্রয়োগ করবেন। প্রতিবছর তাকে ৭ হাজার লিচু খাওয়ার জন্য দিবে। তার মতে লিচুর গাছ পাহারা, পরিচর্যাসহ লিচু’র দানা গঠন থেকে ফল রক্ষায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও বিষ প্রয়োগের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। পেশায় চাকুরীজীবী হওয়ায় তার পক্ষে এসব সামলানো কষ্টকর। খুব সহজভাবেই সবদিক বিবেচনায় বাগান তৈরির পর ফল বিক্রি করে তিনি লাভবান হয়েছেন। করোনার পর গত বছর লিচুর চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ফলন বিপর্যয়ের কারণে মৌসুমের শেষ মুহুর্তে টাকা দিয়েও ভাল মানের লিচু পাওয়া যায়নি। এবার রোজা ও ঈদের লিচু বাজারে উঠবে তাই লিচুর চাহিদা অনেক বেশি হবে। আর ফলন বাম্পার হলে কৃষক থেকে ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা লাভের মুখ দেখতে পাবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।