Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

স্বস্তিতে কাটেনি ২০১৬

বছরজুড়ে দলীয় মন্ত্রী-এমপি, নেতা, ছাত্রলীগের বিতর্কিত কর্মকান্ড আলোচনায়

| প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগকে বিদায়ী বছরে রাজপথে বিরোধীদলের কোনো আন্দোলন মোকাবেলা করতে না হলেও সামাল দিতে হয়েছে মন্ত্রী-এমপিদের বিতর্কিত কর্মকা-, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকা-, নিজেদের অন্ত:কোন্দল, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী, জঙ্গিবাদ ইস্যু। এসব কারণে গত বছরটি আওয়ামী লীগের খুব একটা স্বস্তিতে কাটেনি। এছাড়াও দলের জাতীয় সম্মেলনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিদায়ী বছরটি ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই পার করেছে ক্ষমতাসীন দলটি।
দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের ‘বিতর্ক’ নিয়ে আওয়ামী লীগের বছর শুরু হলেও নাসিক নির্বাচনে ‘শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু’ ভোট উপহার ছিল দলটির বছরের শেষ ‘চমক’। যদিও বছরের শেষ সপ্তাহে বিরোধীদলবিহীন দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়েও নিজ দলের বিদ্রোহ ও বিতর্কও মোকাবেলা করতে হয়েছে দলটিকে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, চলতি বছরে আমাদের একটি সফল কাউন্সিল হয়েছে। দলে নতুন সাধারণ সম্পাদক এসেছেন। নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এগুলো আমাদের অর্জন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী কমিটি হয়েছে। এই কমিটি দলকে অটোমেটিক এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি অতিক্রম করে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ ছিল। ফলে আমাদের বিজয় সম্ভব হয়েছে। নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
দলটির নেতাকর্মীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ। তার সঠিক নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অনেক বেশি শক্তিশালী। একটি সফল কাউন্সিলের মধ্য দিয়েও দল আরো সুসংগঠিত হয়েছে। জঙ্গি দমন ইস্যুতে দল ও দলের নেতাকর্মীদের কঠোর অবস্থানের ফলে বিএনপি এটা ইস্যু বানাতে পারেনি। আপাতভাবে বিদায়ী বছরকে দলের নেতাকর্মীরা একটি সফল রাজনৈতিক বছর হিসেবেই দেখছেন।
ইউপি নির্বাচন : বিদায়ী বছরের শুরু থেকেই নির্বাচনী ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে পার করতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। মোট ৬ ধাপে ৪ হাজার ২৭৯ ইউনিয়নে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিদ্রোহ দমন করতে ব্যর্থ হয়। নজিরবিহীন প্রাণহানী, ভোট ডাকাতি, ব্যাপক সংর্ঘষ ও রক্তাক্ত ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতাসীন দলের লোক নির্বাচিত হয়। এই নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ২৬৭২টি ইউপিতে জয় পায়। বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষ সমর্থিতরা পায় ৩৭২ এবং জাতীয় পার্টি ৫৭টি। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মধ্যে ৮৮০টি ইউপিতে জয় পায়। এর বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয়ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হওয়া এই নির্বাচনে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১৩১ জন। আহত হয়েছেন ১০ হাজারেরও অধিক। অনিয়মের অভিযোগ ছিল ৬ ধাপের ভোটেই।
এমপি-মন্ত্রীদের বিতর্কিত কর্মকা-
দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বিদায়ী বছর আপাতদৃষ্টিতে ভালোভাবে পার করলেও কয়েক মন্ত্রী ও কিছু সংসদ সদস্যর বিতর্কিত কর্মকা-ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে দল ও সরকার। তাদের বিতর্কিত মন্তব্য ও কর্মকা-ের জন্য সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হয়।
বরাবরের মতো বিতর্কিত মন্তব্য করে এবারও সমালোচনায় আসেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে মন্তব্য করায় তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমানার ও শপথ ভঙ্গ করার রায় দিয়েছিল আদালত।  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে তারা মূলত সরকারকে বেকায়দায় ফেলেন। তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। রায়ে আদালত তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। রায়ে বলা হয়, দুই মন্ত্রী আইন লঙ্ঘন এবং সংবিধান রক্ষা ও সংরক্ষণে নেয়া শপথ ভঙ্গ করেছেন। আদালতের রায় অনুযায়ী শপথ ভঙ্গ করে দুই মন্ত্রী তাদের পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের এমপি আমানুর রহমান খান রানা বিদায়ী বছরের ২০ জুন সংসদে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। কিন্তু তার আগেই রানার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে হাইকোর্ট। কিন্তু পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছিল না। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে না পারলেও পরবর্তীতে তিনি নিজেই আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। এ হত্যা মামলা ছাড়াও এমপি রানা ও তার অপর তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে পুরো টাঙ্গাইল জেলাকে সন্ত্রাসকবলিত অঞ্চলে পরিণত করার অভিযোগ উঠে। রানা কারাগারে গেলেও তার অপর তিন ভাই দেশ ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে গেছে বলে গুজব রয়েছে।
ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর সংসদ পদ থাকা না থাকা নিয়ে সারা বছর আলোচনা চলে। ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় দুটি ধারায় ১০ বছর ও সাত বছর কারাদ- হয় নিজাম হাজারীর, যা আপিলেও বহাল থাকে। সেই হিসেবে ২০১৫ সালের আগে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন না। কিন্তু ২০১৩ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ নিয়ে আদালতে রিট করে স্থানীয় এক সরকার দলীয় নেতা। গত ২২ নভেম্বর নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদ থাকা নিয়ে আদালত রায় দেন। যদিও বিচারকরা বিভক্ত রায় ঘোষণা করেন।
এর বাইরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, জমি দখল, ইয়াবাসহ অন্য মাদক ব্যবসা জড়িত থাকা,  রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া নিয়ে সরকারের বেশকিছু এমপি আলোচনায় ছিলেন। এর মধ্যে মাদক ব্যবসার জন্য কক্সবাজারের এমপি আব্দুর রহমান বদি, বালিয়াডাঙ্গীতে সংখ্যালঘু হিন্দুদের জমি দখলের অভিযোগ উঠে ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম, গাইবান্ধার রামগঞ্জ মিশন ও আশ্রমের জমি দখলের অভিযোগ উঠে সংসদ সদস্য মাহবুব আরা গিনির বিরুদ্ধে। এদিকে দলীয় কোন্দলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম রবিউল মুক্তাদির চৌধুরীর সঙ্গে মৎস্যমন্ত্রী ছায়েদুল হকের দ্বন্দ্বও এ ঘটনার পেছনে বড় উস্কানি বলে অভিযোগ উঠে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু মন্দিরে ভাংচুর ও বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট ও অগ্নি সংযোগে জড়িত অভিযোগে গত ২৭ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ আবদুল আহাদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এছাড়াও বিদায়ী বছরে নিজেদের বিতর্কিত কর্মকা-ে ও ক্যাডার বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপে বিতর্কিত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনÑ ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণচন্দ্র চন্দ, পিরোজপুর-১ আসনের একেএমএ আউয়াল, সিলেট-৩ আসনের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস, সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ, যশোর-১ আসনের শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-৪ আসনের রণজিত কুমার রায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের গোলাম রব্বানী, রাজশাহী-৪ আসনের মো. এনামুল হক, গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন, ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য রহিম উল্যাহ, গাইবান্ধা-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য পিনু খান।
এদের বাইরে অতিকথনের কারণে গত বছর দলকে বেকায়দায় ফেলেছিলেন টাঙ্গাইল-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। হজ ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে দল  থেকে ছিটকে পড়েন। মন্ত্রিত্ব হারান, পদত্যাগে বাধ্য হন সংসদ থেকেও। এছাড়াও ‘সুযোগ পেলে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়া হবে’ বলে মন্তব্য করে বিতর্ক উস্কে দেন সদ্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে আসা টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। তার এমন স্পর্শকাতর মন্তব্যের পরদিনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের এমপি এম আবদুল লতিফ কম্পিউটার ফটোশপের মাধ্যমে ‘নিজের শরীরের অংশের’ সঙ্গে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মুখম-ল লাগিয়ে তুমুল বিতর্কের জন্ম দেন। সরকারি কর্মকর্তাকে হুমকি ও অস্ত্রসহ উত্তরার একটি বাড়িতে হামলা চালাতে গিয়ে নেত্রকোনা-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং স্কুল বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘক্ষণ রাজপথে দাঁড়িয়ে রেখে ভূমিমন্ত্রী ও পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ ডিলু এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম নিজেদের বিতর্কিত করেছেন। এছাড়াও গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লীতে হামলার ঘটনায় উঠে আসে গাইবান্ধা-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এবং তার ক্যাডার বাহিনীর নাম। এই ঘটনা দেশের ভেতর ও বাইরে ক্ষমতাসীন দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য বলেন, যে এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে আগামী নির্বাচনে তাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে না। এমপি-মন্ত্রীর নেতিবাচক কর্মকা- নিয়ে ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট দিয়েছে।
ছাত্রলীগের বিব্রতকর কর্মকান্ড
আওয়ামী লীগসহ তাদের বিভিন্ন অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা বছর জুড়ে নানা অঘটন ঘটিয়ে দলকে বিব্রত ও ভোগান্তির মধ্যে ফেলে। গত ৩ সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজে পরীক্ষা দিতে আসা সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এক ছাত্রলীগের পদধারী নেতা। হামলাকারী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) অর্থনীতি শেষ বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগের সহসম্পাদক বদরুল আলমকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা। যদিও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ দাবি করে বদরুল ছাত্রলীগের কেউ নয়। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে খাদিজা বর্তমানের সুস্থ হয়ে উঠছেন।
খাদিজা ইস্যু ছাড়াও সিলেট ছাত্রলীগ নিজেদের কর্মকা-ে বারবার বিতর্ক তৈরি করে। এর আগে তারা টেন্ডার সন্ত্রাসের কারণে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমসি কলেজের ছাত্রবাস জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করে। এছাড়া গেল সপ্তাহে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগের গোলাগুলি ও নিজেদের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়।
ছাত্রলীগের টেন্ডার সন্ত্রাসের কারণে ও নিজেদের অন্তঃকোন্দলে বারবার আলোচনায় আসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। তাদের এ বিতর্কিত কর্মকা-ে একাধিকবার প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগও বিভিন্ন সময় সৃষ্টি করেছে বিতর্ক। নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও টেন্ডার সন্ত্রাসে মহানগর ছাত্রলীগেরও একাধিক নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। গেল কয়েকদিন আগে দিয়াজ নামের এক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু নিয়েও তৈরি হয়েছে ব্যাপক রহস্য।
জঙ্গি ইস্যু মোকাবেলায় সাফল্য
বিদায়ী বছরে হঠাৎ করেই দেশে দেখা দেয় বিশ্বরাজনীতির বিষফোঁড়া জঙ্গিবাদ। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, অপর ধর্মের প্রতি সহনশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশ বাংলাদেশে মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তবে, সঠিক নেতৃত্ব, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সরকার এবং আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর দৃঢ়তায় এ জঙ্গিবাদ এদেশে ভয়াবহ রূপ নিতে পারেনি। তবুও এ ইস্যুটি সরকার ও দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। আর এ থেকে উত্তোরণ ও জঙ্গিবাদকে সহনীয় মাত্রায় স্থিমিত করে রাখার সাফল্য অবশ্যই আওয়ামী লীগ ও সরকার দাবি করতেই পারে বলে সাধারণের অভিমত।  
চলতি বছরের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা চালানো হয়। ওই রেস্তোরাঁয় দেশি-বিদেশি নাগরিকসহ প্রায় অর্ধশত নারী-পুরুষকে জিম্মি করে জঙ্গিরা। এ হামলায় ২ দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও বিদেশি নাগরিকসহ ২৮ জন নিহত হন। হামলায় দেশি-বিদেশি চাপ বাড়তে থাকে আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর। এছাড়া ঈদুল আযহার দিন সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাঁ মাঠের অদূরে জঙ্গি হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় ২ পুলিশ, এক  ‘জঙ্গি’ ও একজন সাধারণ নাগরিক নিহত হন।
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জঙ্গি ইস্যুতে ৪ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সব ভেদাভেদ ভুলে দলমত-নির্বিশেষে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যের মাধ্যমে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার উদাত্ত আহ্বান জানান। তবে সরকার তার ডাকে সারা না দেয়ায় বিএনপির জাতীয় ঐক্যে ডাক শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
বছরব্যাপীই সভা-সমাবেশ ও মানবন্ধন করে জঙ্গিবাদ ইস্যুতে সোচ্চার থাকে আওয়ামী লীগ। রাজধানীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত মানবন্ধন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয়  জোট।
নাসিক নির্বাচন
নাসিক নির্বাচন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর এই প্রথম নাসিক নির্বাচনের মেয়র পদের ভোটগ্রহণ দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনকে সদ্য বিদায়ী মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়ে মেয়র পদে একক প্রার্থী নিশ্চিত করে দলটি। এটি আওয়ামী লীগের বিজয়ের জন্য একটা ইতিবাচক দিক। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতা এ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে  দিন-রাত কাজ করেন। এছাড়া দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জ গিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালায়।
দলের জাতীয় সম্মেলন
বিদায়ী বছরের ২২ ও ২৩ অক্টোবর অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন হয়। সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়া সম্মেলনের এক সপ্তাহের মধ্যেই আওয়ামী লীগ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে সক্ষম হয়। ৮১ সদ্যসের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনেক নতুন মুখ নেতৃত্ব আসে। দলের কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ২৮ জন সদস্যের মধ্যে ১৮ জনই নতুন।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, এ বছরই আমাদের দলের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি কাউন্সিলই নতুন করে প্রত্যয় ঘোষণার সুযোগ দেয়। নতুন  নেতৃত্ব তৈরি হয়। দলকে গুছানোর সুযোগ দেয়। নিজেদের যাচাই বাছাই, দেশকে নিয়ে চিন্তা করে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আসে।
তিনি বলেন, যেহেতু আগামী দুই বছর পর জাতীয় নির্বাচন এ জন্য কাউন্সিলটা অনেক গুরুত্ব বহন করে। আমাদের নতুন নেতৃত্ব দলকে আরও গতিশীল করেছে। যার প্রতিফলন আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে পেয়েছি।
যুদ্ধাপরাধীদের রায় বাস্তবায়ন
নির্বাচনী ইশতেহারে একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের রায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতির ধারা অব্যহত রাখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ বছরও যুদ্ধাপরাধ ইস্যু কোনো আপোষ করেনি দলটি। চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে হত্যার দায়ে বিদায়ী বছরের ৩ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গত ১০ মে দলটির আমীর মতিউর রহমান নিজামী, গেল বছর ২২ নভেম্বর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী, একই বছর ১৫ এপ্রিল জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করে আওয়ামী লীগ সরকার। এর আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসি কার্যকর করা হয় জামায়াতের আরেক নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের এ প্রতীক্ষিত বিচার শুরু করে।
জেলা পরিষদ নির্বাচন
২০১৬ সালের শুরু থেকেই শুরু হয়ে একেবারে শেষ পর্যন্তও নির্বাচনী ব্যস্ততা ছিল আওয়ামী লীগের ঘরে। ২৮ ডিসেম্বর ৬১ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত না হলেও এই নির্বাচনে দল থেকে প্রার্থীদের সমর্থন দেয়া ও নাম ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচন বিরোধীদল বর্জন করায় নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে বলেন, আমরা একটা পর্যায়ে চিন্তা করলাম যে, অপজিশন নেই ইলেকশনটায়, একেবারেই আনঅপোজড সবাই হয়ে যাবে, এটা কেমন যেন একটা রং মেসেজ যায়। যারা প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচন করছে, দলীয় লোক হলেও তাদের প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ বা কনভিন্স করার সে বিষয়টা আছে, কিন্তু চাপাচাপিটা করা থেকে আমরা বিরত থেকেছি।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৯:৩১ পিএম says : 0
    তারেক সালমানকে ধন্যবাদ, আমি প্রতিবেদনটা পড়লাম। যাই হোক এখানে লিখক তার দৃষ্টিতে যেভাবে দেখেছেন এবং যেদিকটা প্রচার করতে চেয়েছেন সেটা খুবই সুন্দরভাবে করেছেন। তবে শেষাংশে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের যে কথাগুলো উল্লেখ করেছেন আমি ওবায়দুল কাদেরের ঐ কথা গুলো সমর্থন করি না। তিনি দলের দ্বিতীয় ক্ষমতা ধর হয়ে এভাবে কথা বলতে পারেন না। নির্বাচনে প্রতিপক্ষ আছে কি নেই এটা দলের দেখার বিষয় নয়। দল তার নিয়ম ও নীতিতে চলবে এটাই প্রকাশ্যে আমরা দেখতে চাই। ভিতরে কি হচ্ছে এটা আমরা দেখতে চাই না বা আমাদেরকে জানানো ঠিক নয়। .......................
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ