Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মেরে লাশ ফ্রিজিং গাড়িতে রাখেন গৃহকর্ত্রী

থানায় মামলা, মৌ রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২৩, ১২:০০ এএম

‘আমার কন্যাসন্তানকে তিলে তিলে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। পরে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য আমাকে টাকার লোভ দেখান এবং মেয়ের লাশ লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে রাখেন গৃহকর্ত্রী ফরহাদ বাঁধন মৌ’। গৃহকর্মী নাদিয়ার (১০) বাবা নাজিম উদ্দিন গতকাল ঢামেকে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। গত সোমবার রাতে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে থেকে লাশবাহী ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স থেকে নাদিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। গতকাল
মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত করেন ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। গত দেড় বছর ধরে নাদিয়া শাহজাহানপুরের শান্তিবাগের শান্তি নিকেতন ৮৭/১ নম্বর বাড়ির ২/সি নম্বর ফ্ল্যাটে গৃহকর্ত্রী ফরহাদ বাঁধন মৌ এর বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে আসছিল।
অন্যদিকে গৃহকর্মী হত্যা মামলায় গৃহকর্ত্রী ফরহাদ বাঁধন মৌয়ের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার এসআই মো. রফিকুল ইসলাম আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
নাদিয়ার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন শাহজাহানপুর থানার এসআই মোছা. সোহেলী আক্তার। তিনি ইনকিলাবকে জানান, নাদিয়ার লাশের মাথায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষতচিহ্ন আছে। এছাড়া কপালের ডান পাশে, বাম কানের পেছনে আচড়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ডান গালে থেঁতলানো ফোলা জখম। নাক এবং মুখে রক্ত মাখা। গলায় লালচে দাগ। বুক ও পেটের বিভিন্ন অংশে লালচে-কালো দাগ এবং শরীরের চামড়া উঠানোসহ আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
নাদিয়ার বাবা নাজিম উদ্দিন জানান, তাদের বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর উলুয়ার চাপ গ্রামে। গত দেড় বছর ধরে নাদিয়া শাহজাহানপুরের শান্তিবাগের শান্তি নিকেতন ৮৭/১ নম্বর বাড়ির ২/সি নম্বর ফ্ল্যাটে গৃহকর্ত্রী ফরহাদ বাঁধন মৌ এর বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে আসছিল। তার বড় বোন নাজমাও (১৪) দীর্ঘ সাত বছর ধরে একই বাসায় কাজ করেছে।
তিনি জানান, সবশেষ গত তিন মাস আগে গ্রাম থেকে ঢাকায় ওই বাসায় এসে নাদিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তখন নাদিয়া তাকে জানিয়েছিল, বিভিন্ন কারণে গৃহকর্ত্রী তাকে মারধর করেন। সে বাড়িতে চলে যাবে। তখন তার বাবা তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য গৃহকর্ত্রীর কাছে বলেন। কিন্তু গৃহকর্ত্রী জানান, নাদিয়া তার বাসার পোষা পাখি মেরে ফেলেছে এবং কিছু জিনিসপত্র ভেঙে ফেলেছে। এর জরিমানা দিয়ে তারপর তাকে নিয়ে যেতে হবে। নিরুপায় হয়ে তার বাবা নাজিম উদ্দিন তাকে রেখেই বাড়িতে চলে যান। এরপর আর কথা হয়নি তার সঙ্গে। গত রোববার ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টার দিকে গৃহকর্ত্রী তাকে মোবাইলফোনে জানান, তার মেয়ে অসুস্থ। খবর শুনে ওই রাতে তিনি ট্রেনে করে ঢাকায় আসেন। এরপর ওই বাসায় গিয়ে তার মেয়ের সন্ধান করেন। তখন গৃহকর্ত্রী জানান, তার মেয়ে অসুস্থতার কারণে মারা গেছে। বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন। সেজন্য তাকে ৭০ হাজার টাকায় ঢাকার সাভারে একটি বাড়ি করে দেয়ার প্রস্তাব দেন। তবে সবকিছুর আগে তিনি তার মেয়েকে দেখতে চান। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন তিনি। কোথাও মেয়েকে দেখতে পাননি তিনি। না পেরে সোমবার রাতে তিনি ৯৯৯ নম্বরে কল করে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে পুলিশ তার মেয়ের লাশ উদ্ধার করে।
তিনি অভিযোগ করেন, নানা কারণে ও অকারণে তার মেয়েকে প্রচণ্ড মারধর করতেন গৃহকর্ত্রী ফারহান বাঁধন। তার নির্যাতনের কারণেই মেয়েটি মারা গেছে। তাকে তিলে তিলে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের কঠোর বিচার দাবি করেছেন তিনি। ঘটনাটি কাউকে না বলতে বড় মেয়েকেও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন বাঁধন। সেজন্য বড় মেয়েও নাদিয়ার মৃত্যুর বিষয়ে কিছুই বলছে না।
শাজাহানপুর থানার ওসি মনির হোসেন মোল্লা জানান, এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এ মামলায় বাঁধনকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান ব্যক্তিগতভাবে মনিটরিং করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ