Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাফল্যের দ্যুতি ছড়িয়েছে মেয়েরা

জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনীর ফল প্রকাশ

| প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জেএসসি-জেডিসিতে পাসের হার ৯৩ দশমিক ০৬ : প্রাথমিকে ৯৮ দশমিক ৫১ : ইবতেদায়ীতে ৯৫ দশমিক ৮৫
স্টাফ রিপোর্টার : অষ্টম ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা সমাপনী উভয় পরীক্ষাতেই সাফল্যের দ্যুতি ছড়িয়েছে মেয়েরা। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, পাসের সংখ্যা, পাসের হার, জিপিএ৫ প্রাপ্তিসহ সবদিক থেকেই ছেলেদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে তারা। সার্বিকভাবে এবছর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৯৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৯২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এবার পাসের হার বেড়েছে শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে মেয়েদের পাসের হার ৯৩ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং ছেলেদের পাসের হার ৯২ দশমিক ৯২ শতাংশ। জেএসসি-জেডিসিতে জিপিএ৫ পেয়েছে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮৮জন
শিক্ষার্থী। যা গতবছরের তুলনায় ৫১ হাজার ৩২৫ জন বেশি। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার ৯৮ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই দুই পরীক্ষাতেও পাসের হারে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভালো করেছে। প্রাথমিকে পাসের হার বিবেচনায় ৭ বিভাগের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বরিশাল। এই বিভাগে পাসের হার ৯৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। ৬৪ জেলার মধ্যে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রথম স্থানে রয়েছে। এই জেলায় পাসের হার ৯৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। ইবতেদায়ী সমাপনীতে পাসের হারে শীর্ষে রাজশাহী বিভাগ। এই বিভাগে পাসের হার ৯৮ দশমিক শূন্য ৩। ৬৪ জেলার মধ্যে শীর্ষে লালমনিরহাট, এই জেলায় পাসের হার ৯৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে আয়োজিত দুটি পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এর আগে সকাল ১০টায় সকল বোর্ড চেয়ারম্যানদের সাথে নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে জেএসসি-জেডিসি ফলাফলের কপি তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সাথে নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর ফল তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। এসময় সার্বিক ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী এবং জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, এ পরীক্ষা ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের সৃষ্টি করছে। এই আত্মবিশ্বাস বোর্ডের উচ্চতর পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে।
জেএসসি-জেডিসি’র ফলাফল:
এবছর আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫৯ জন। যা গতবছরের তুলনায় বেড়েছে ৭৪ হাজার ৬৭০ জন। অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছে ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭৫ জন। সার্বিকভাবে মোট পাসের হার ৯৩ দশমিক ০৬ শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৯২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে শূন্য দশমিক ৭৩ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮৮, যা গতবারের তুলনায় ৫১ হাজার ৩২৫ জন বেশি। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৪৫০টি। গতবারের তুলনায় শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৮৬৭টি। একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৮টি। গতবছর এই সংখ্যা ৪৩টি থাকলেও এবার শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে ১৫টি।  
সার্বিক ফলাফলে ছেলেদের তুলনায় সব সূচকেই ভালো করেছে মেয়েরা। জেএসসি-জেডিসিতে মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১০ লাখ ৯৬ হাজার ৫২২ জন ছাত্র এবং ১২ লাখ ৫০ হাজার ৪৩৭ জন ছাত্রী। ছাত্রের তুলনায় এবছর অংশগ্রহণকারী ছাত্রীর সংখ্যা বেশি ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯১৫ জন। পাসের সংখ্যার মতো পাসের হারেও ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে। সার্বিক পাসের হার ৯৩ দশমিক ০৬ শতাংশ হলেও এককভাবে মেয়েদের পাসের হার ৯৩ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং ছেলেদের পাসের হার ৯২ দশমিক ৯২ শতাংশ। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাসের হার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। ছাত্ররা জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৪৫ জন এবং মেয়েদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ২৪৩ জন। ছেলেদের তুলনায় ৩৪ হাজার ৮৯৮ জন মেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে।  
ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ফলাফলের পরিসংখ্যান তুলে ধরার পর বলেন, সবকিছু মিলিয়ে আমরা যে সংখ্যাগুলো দেখলাম, তার মধ্য দিয়ে বলা যায় আমাদের সব সূচকে ইতিবাচক ফল দেখা যাচ্ছে। তারপরও আমরা সন্তুষ্ট এ কথা বলছি না। অবশ্যই আমরা খুশি হয়েছি, দেশবাসী খুশি হলে আমরা আরও খুশি হব। কিন্তু এটা আমাদের অব্যাহত প্রক্রিয়া।
এবছর আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেএসসিতে গড় পাসের হার ৯২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। যা গতবছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। জিপিএ৫ পেয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯ জন। এবার এই সংখ্যা বেড়েছে ৪৭ হাজার ৫৫৭ জন। মাদরাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসি পরীক্ষায় পাসের হার ৯৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এই বোর্ডে পাসের হার বেড়েছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জেডিসি’র পরীক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৫২৯ জন। গতবারের তুলনায় এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৭৬৮ জন।
৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৯৭ দশমিক ৬৮, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ৯৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যশোর ৯৫ দশমিক ৩৫, সিলেট ৯৩ দশমিক ৩৭, দিনাজপুর ৯২ দশমিক ৯৯, ঢাকা ৯১ দশমিক ৩৬, চট্টগ্রাম ৯০ দশমিক ৭৫ এবং কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনীর ফলাফল:
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে এবছর পাসের হার ৯৮ দশমিক ৫১ শতাংশ ও ইবতেদায়ী সমাপনীতে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় পাসের হার প্রাথমিকে কমেছে শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ ও ইবতেদায়ীতে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ। গত বছর প্রাথমিকে পাসের হার ছিল ৯৮ দশমিক ৫২ ও ইবতেদায়ীতে ৯৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। দুটি পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় ৬ হাজার ৩৯৩ জন বেশি জিপিএ৫ পেয়েছে। এবার দুটি সমাপনীতে মোট জিপিএ৫ পেয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৮৪৬ জন। এরমধ্যে প্রাথমিকে জিপিএ৫ পেয়েছে দুই লাখ ৮১ হাজার ৮৯৮ জন, অপরদিকে ইবতেদায়ীতে পেয়েছে পাঁচ হাজার ৯৪৮ জন। গত বছর মোট জিপিএ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩। এরমধ্যে প্রাথমিকে দুই লাখ ৭৫ হাজার ৯৮০ জন, অপরদিকে ইবতেদায়ীতে পেয়েছিলো পাঁচ হাজার ৪৭৩ জন। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। বিস্তারিত ফলাফলে জানানো হয়, দুই সমাপনী পরীক্ষায় এবছর ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ২৩৪ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে পাস করেছে ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ২৫০ জন। প্রাথমিকে মোট অংশ নিয়েছে ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৭৩৪ পরীক্ষার্থী। এরমধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪৩২ জন। অপরদিকে ইবতেদায়ীতে অংশগ্রহণ করেছে দুই লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮১৮ জন। প্রাথমিকে সর্বোচ্চ পাসের হারের দিক থেকে ৭ বিভাগের মধ্যে বরিশাল (পাসের হার ৯৯ দশমিক ০৯ শতাংশ) ও ৬৪ জেলার মধ্যে এবারও মুন্সিগঞ্জ (পাসের হার ৯৯ দশমিক ৯২ শতাংশ) প্রথম স্থানে রয়েছে। ৫০৮ উপজেলা/থানার মধ্যে ১৭ উপজেলায় শতভাগ পাস করেছে। গত বছরের মত এবারও সর্বনিম্ন পাসের হার সিলেট বিভাগে (পাসের হার ৯৭ দশমিক ২৫ শতাংশ)। সুনামগঞ্জ জেলায় পাসের হার সর্বনিম্ন ৯৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় পাসের হার সর্বনিম্ন ৮৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। ইবতেদায়ীতেও ৭ বিভাগের মধ্যে এবারও রাজশাহী বিভাগ পাসের হারে (পাসের হার ৯৮ দশমিক ০৩ শতাংশ) শীর্ষে রয়েছে। সিলেট বিভাগ পাসের হার সর্বনিম্ন ৯২ দশমিক ০৪ শতাংশ। লালমনিরহাট জেলায় পাসের হার সর্বোচ্চ (৯৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ)। ১০৫টি উপজেলায় শতভাগ পাস করেছে। হবিগঞ্জ জেলায় পাসের হার সবচেয়ে কম, সেখানে পাসের হার ৮৭ দশমিক ০৬ শতাংশ। বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলায় পাসের হারে সবার নিচে অবস্থান করছে। এ উপজেলায় পাসের হার ৭০ দশমিক ২৮ শতাংশ।
প্রাথমিকে সর্বোচ্চ পাসের হারের দিক ৭ বিভাগের মধ্যে বরিশাল ৯৯ দশমিক ০৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ৯৮ দশমিক ৫৭, খুলনায় ৯৮ দশমিক ৬৪, ঢাকায় ৯৮ দশমিক ৫৪, চট্টগ্রামে ৯৮ দশমিক ৭৫, সিলেটে ৯৭ দশমিক ২৫ ও রংপুরে ৯৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অন্যদিকে ইবতেদায়ীতে পাসের হারে রাজশাহী ৯৮ দশমিক ০৩ শতাংশ, বরিশাল ৯৭ দশমিক ৬৯, খুলনায় ৯৭ দশমিক ১১, ঢাকায় ৯৫ দশমিক ০৬, চট্টগ্রামে ৯৪ দশমিক ৮১, সিলেটে ৯২ দশমিক ০৪ ও রংপুরে ৯৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।



 

Show all comments
  • আরিফুর রহমান ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:১৮ পিএম says : 0
    সাফল্য অর্জনকারী সকলকে অভিনন্দন
    Total Reply(0) Reply
  • Mariya ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:০২ পিএম says : 0
    khub valo khabor
    Total Reply(0) Reply
  • উজ্জল ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:০৩ পিএম says : 0
    ছেলেদেরকেও সমানভাবে এগিয়ে যেতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মাহফুজ ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:০৪ পিএম says : 0
    ছেলে মেয়ে সকলের জন্য রইলো অনেক অনেক শুভকামনা।
    Total Reply(0) Reply
  • ইব্রাহিম ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:০৬ পিএম says : 0
    আশা করি আগামী বছর ছেলেরা আরো অনেক ভালো করবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জেএসসি-জেডিসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ