পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশ না নিলেও বিদ্রোহীদের দাপট, বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ, বোমাবাজি, হামলা ও নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনের একদিন পর সিলেটের বালাগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা ও শেরপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও সার্ভার স্টেশনে অগ্নিসংযোগ ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন থেকে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি।
জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সংবিধান পরিপন্থী এবং জেলা পরিষদ নির্বাচন জনগণের নির্বাচন ছিল না বলে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি দাবি করেছে। লক্ষ্মীপুরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে ১২ জন প্রার্থী কোনও ভোট পাননি। একটি ভোটও না পাওয়ায় হাঁকডাক দেওয়ায় ওইসব প্রার্থীদের নিয়ে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
একতরফা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৩ জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। সরকার সমর্থিত প্রার্থীর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ১১ বিদ্রোহী ও দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় নিয়েছেন। তাঁদের জয়ী করার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছেন স্থানীয় মন্ত্রী-এমপিরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিজয় তাদের বিপুল জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছে। দল তাদের মনোনয়ন না দিলেও জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিদ্রোহীরাই ছিল গ্রহণযোগ্য। ফলাফলে দেখা গেছে, ৩৮টি জেলার মধ্যে ২৫টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত, ১১টিতে দলের বিদ্রোহী এবং দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ২১ জেলায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হন। কুষ্টিয়া ও বগুড়ায় চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়েছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন কোনও মৌলিক নির্বাচন ছিল না। সব ভোটার ছিল সরকারি দলের। এরপরও জাতীয় পার্টি দুই-তিন জায়গায় জয়লাভ করেছে। তবে আমরা দলগতভাবে কাউকে সমর্থন করিনি। কারণ, এ নির্বাচনে যাওয়া সমীচীন হতো না। গুলশানের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ‘মিট দ্য প্রেসে’ তিনি এসব কথা বলেন। যেসব জেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন, সেখানেও বিদ্রোহীদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। অন্তত ৩০ জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিদ্রোহীদের চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল।
মওদুদ আহমদ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন যেটা হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান পরিপন্থী। সংবিধানে আছে বাংলাদেশের কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে হলে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট লাগবে। কারণ, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জেলা পরিষদে যদি নির্বাচন করতেই হয়, তাহলে সেই জেলার সকল মানুষকে ভোটাধিকার দিতে হবে। এখন তারা (সরকার) যেটা করেছেন চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সিলেকটিভরা মিলেমিশে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। আইয়ুব খানের (বেসিক ডেমোক্রেসি) বুনিয়াদি গণতন্ত্র এই সরকার ফিরিয়ে এনেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। মওদুদ আহমদের ওই বক্তব্যের বিপরীতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। স্পিকার সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট ও স্পিকার যেভাবে নির্বাচিত হন, সেভাবে ইলেক্টোরাল ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনও বিষয় নয়। ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন রাখেন, বিএনপির কাছে আমরা কিসের সংবিধান শিখব? কোন সংবিধানের বদৌলতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন?
গত বুধবার পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের বাকি ৬১ জেলায় ওয়ার্ডভিত্তিক ভোট কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে। এই নির্বাচনে সরাসরি ভোটের বিধান না থাকায় জনগণের মধ্যে তেমন আগ্রহ ছিল না। দিনের প্রথম ভাগে অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। অধিকাংশ জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারাই। তারপরও নির্দলীয় এ নির্বাচনে প্রভাব খাটানো, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোট কেনাবেচা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে।
এদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে অসদাচরণের অভিযোগে সিলেটের বালাগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন একজন বিচারিক হাকিম। জেলার সিনিয়র বিচারক মো. নজরুল ইসলামের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন বালাগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনকারী বিচারিক হাকিম মো. আতিকুল হায়দার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম আজহারুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান আবদাল মিয়া এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বোয়ালজুড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনহার মিয়াকে আসামি করা হয়েছে। অপরদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনের পর শেরপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও সার্ভার স্টেশনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের দিন বুধবার রাতে কে বা কারা শহরের চক পাঠকে অবস্থিত কার্যালয়ের স্টোরে অগ্নিসংযোগ করে বলে জানান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান। আগুনে ওই কক্ষে থাকা ২৮০ টি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স পুড়ে গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানান তিনি। মোখলেছুর রহমান বলেন, রাত সাড়ে ৩টার দিকে কে বা কারা স্টোর রুমের পেছনের দিকের একটি জানালার কাচ ভেঙে ভেতরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ওই কক্ষে থাকা গত ইউপি নির্বাচনে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে আগুন লেগে যায়। পোড়ার গন্ধ পেয়ে সার্ভার স্টেশনের নৈশ প্রহরী রেজুয়ানুল হক আমাদের মোবাইলে ফোন করে খবর দেয়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তারা এসে আগুন নেভায়। এ ঘটনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক ডা. এএম পারভেজ রহিম এবং পুলিশ সুপার রফিকুল হাসান গনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শেরপুর জেলা পরিষদের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ুন কবীর রুমান চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে ১২ জন প্রার্থী কোনও ভোট পাননি। নির্বাচনের শুরু থেকে এসব প্রার্থী বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী থাকলেও ফলাফল ঘোষণার পর তারা হতাশ হয়ে পড়ে। একটি ভোটও না পাওয়ায় হাঁকডাক দেওয়ায় ওইসব প্রার্থীদের নিয়ে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। তবে এরমধ্যে চারজন সদস্য প্রার্থী প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ভোটাররা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। একেকজন প্রার্থী প্রতিটি ভোটারকে ৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা দিয়েছেন। অনেক প্রার্থী টাকা দিয়ে শপথ করানোর কারণে ব্যালট বাক্সে তাদের ভোট পড়েনি। ভোটারদের বেঈমান ও চরিত্রহীন বলছেন তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।