পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া থেকে মেডিকেল সরঞ্জামাদি নিয়ে রিকশাযোগে মোহাম্মদপুর যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন। কিছুটা সামনে যেতেই নষ্ট হবার ভান করে রিকশা থামিয়ে দিলেন এর চালক। দ্রুত নামতে বলেন ওই ব্যবসায়ীকে। রিকশা থেকে নেমে সামনে পা বাড়াতেই ওঁৎ পেতে থাকা কয়েকজন যুবক আপত্তিকর কথা বলতে থাকেন ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে। শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক। উত্তেজনা সবার মধ্যে। এরই মধ্যে মালামালসহ লাপাওা রিকশাচালক সাইদুর। ঘটনাটি ঘটে গত ২০ ফেব্রুয়ারির।
এর মাত্র তিন দিন পরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মালিবাগ থেকে গণপরিবহনে বাড্ডায় যাচ্ছিলেন কবির হোসেন। বাস রামপুরা ব্রীজ ছেড়ে যেতেই জানালা দিয়ে ছুঁ মেরে তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায় টানা পার্টির এক সদস্য। এভাবেই রাজধানীতে সালাম, কাইজ্যা, অজ্ঞান, ধাক্কা ও টানা পার্টির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। প্রতিদিনই একাধিক সাধারন মানুষ তাদের শিকার হচ্ছেন। বাদ যাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। সমাজ বিজ্ঞানী ও মনোবিদরা বলেন, বর্তমান সময়ে দেশে চুরি, ছিনতাই, দস্যুতা, ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে। খুন ও মাদকের ঘটনাও কম নয়। তারা বলেন, দেশে অর্থনৈতিক মন্দার কারনে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। কর্মহীন ছিন্নমূল কিছু মানুষও চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধকে বেছে নিচ্ছে জীবিকার তাগিদে। আবার নেশার অর্থের যোগান পেতে চুরি, ছিনতাই ও দস্যুতার মতো অপরাধে জড়াচ্ছে। এক কথায় সামাজিক বৈষম্য, অভাব, অনটন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেতিবাচক প্রবণতার কারনে অপরাধ বাড়ছে। আবার গ্রেফতারের পর অপরাধীরা জামিনে বেরিয়ে একই ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে।
এদিকে আলম নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারী মিরপুর মাজার রোড এলাকা বাসে ওঠার সময় টানা পার্টির সদস্যরা তার হাতের ঘড়ি টান দিয়ে ছিড়ে ফেললেও নিতে ব্যার্থ হয়। এ সময় তার হাতে আঘাত লাগে বলে জানান তিনি। সাকিব ফেরদৌস নামে এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, গত ১০ জানুয়ারী তেজগাঁও এলাকা দিয়ে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে ধাক্কা পার্টির খপ্পরে পড়েন তিনি। পেছন থেকে ঘুসি দিয়ে ধাক্কা দিলি কেনো বলে তাকে ঘিরে ধরে তার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় আত্মরক্ষার্থে চিৎকার দিলে লোকজন জড়ো হয়ে পড়লে কেটে পড়ে ধাক্কা পার্টির সদস্যরা।
র্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, কাইজ্যা, অজ্ঞান, ধাক্কা ও টানা পার্টির সদস্যদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সবসময়ই থাকে। চলতি মাসেও এ ধরনের শতাধিকের বেশি অপরাধীদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তবে দেখা যায় এ ধরনের অপরাধীরা বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বের হয়ে ফের একই অপরাধে জড়ায়। কিন্তু আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে। এ ধরনের অপরাধীদের হাত থেকে বাঁচতে সাধারণ নাগরিকদেরও সচেতন থাকার দরকার।
এ ধরনের সামাজিক অবক্ষয় ও অপরাধ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মিসেস সালমা আক্তার ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের দেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক সঙ্কটে। বিশেষ কারে সাধারণ কিংবা খেটে খাওয়া মানুষ খুবই কষ্টের মধ্যে রয়েছে। অনেকের চাকরি নেই, কারো কারো কোনো কাজ নেই। অর্থনৈতিক সঙ্কটে কিশোররা বিপথগামী হবার একটা অন্যতম কারণ হতে পারে। অনেক অভিভাবক সন্তানদের প্রয়োজন হয়তো মেটাতে ব্যর্থ। এ কারনে কেউ কেউ বিপথে চলে যায়। সবচেয়ে বড় কথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শিশু-কিশোরদের জন্য প্রডাকটিভ কিংবা চিন্তাশীল কিছু কাজে ব্যস্ত রাখে। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারিভাবে এরকম কোনো ব্যবস্থা নেই। শুধু তা-ই নয় শিশু কিশোরদের ব্যস্ত রাখার জন্য তেমন চিন্তাশীল কোনো ব্যবস্থা নেই।
তিনি আরো বলেন, আগে সন্তানরা কোথায় যায় কিংবা কার সাথে সময় কাটায় সেটি পরিবার জানতে পারতো। কিন্তু এখন ডিজিটালাইজ যুগ। সন্তানরা মোবাইল ফোনে নিজেদের বন্ধু বান্ধব কিংবা তার সহকর্মীদের সাথে নিজেরাই যোগাযোগ রাখে। পরিবার কিংবা অভিভাবকরা কিছুই জানতে পারে না। একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে কিংবা শহরে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পর্যন্ত তাদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থানরত কিশোরদের ব্যাপারে মনিটরিং করার একটা সিদ্বান্ত নিতে পারে। শিশু কিশোর কিংবা সন্তানদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।
মিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, কাইজ্যা পার্টি’র দুই প্রতারককে গত ২৩ র্ফেরুয়ারী গ্রেফতার করি। এই চক্রে আরও সাত থেকে আটজন সদস্য রয়েছে, যারা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে একই কৌশলে মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। মিরপুর এলাকার একটি ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এ চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে সাইদুর রহমান হাওলাদার নামে একজন রয়েছেন, যিনি চক্রটির প্রধান। গ্রেপ্তার অন্যজন হলেন মোর্শেদ।
ওসি বলেন, তারা ‘কাইজ্যা পার্টি’ নামেই পরিচিত। মূলত ঝগড়া করে মালামাল লুট করার কারণেই এই নাম হয়েছে। গ্রেপ্তার দুজনের কাছ থেকে লুট করা চার লাখ টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং দুই লাখ টাকার বেশি প্রসাধনী উদ্ধার করা হয়। প্রায় দুই বছর ধরে তারা এ ধরনের কাজ করছে।
ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীতে সক্রিয় কাইজ্যা, অজ্ঞান, ধাক্কা, সালাম ও টানা পার্টির দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। গত ৩ র্ফেরুয়ারী শুক্রবার উত্তরখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে যানবাহনে থাকা যাত্রীদের মোবাইলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া টানা পার্টির মহাজনসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করে ডিবি। ঢাকায় প্রতিদিন অন্তত ৩শ’ মোবাইল ছিনতাই হয়। এ চক্রের শতাধিক সদস্য মোবাইল ছিনতাই অপরাধের সাথে জড়িত। বাস-ট্রেন বা প্রাইভেটকারে চলাচলরত যাত্রীরা মোবাইলে কথা বলার সময় জানালা দিয়ে ছোঁ-মেরে নিয়ে যায় চক্রটি। গাড়ির জানালা দিয়ে যাত্রীদের বা পথচারীদের ব্যাগ, স্বর্ণের চেন, ল্যাপটপও নিয়ে যায় তারা।
তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের পর নামমাত্র দামে মোবাইলসহ বিভিন্ন পণ্য ‘মহাজনের’ কাছে বিক্রি করে তারা। এরপর মহাজনরা নির্ধারিত দোকানে সেসব বিক্রি করে। এসব দোকানি তুলনামূলক কমদামী মোবাইল ক্ষেত্রে খুচরা বাজারে বিক্রি করলেও দামী মোবাইলের যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করে। অনেক ক্ষেত্রে দামী মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি, আবার কখনো দেশের বাইরেও পাচার করে দেয়। গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। সাধারণত মাদক কেনার টাকা জোগাড় করতেই তারা ছিনতাই করে। কখনো কখনো দলনেতা তথা মহাজনরাই তাদেরকে মাদক সরবরাহ করে। যাতে তাদেরকে দিয়ে ছিনতাই কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া যায়। চক্রের সদস্যরা গ্রেফতার হলে তাদের জামিন করানো এবং পরিবারকে অর্থ সহায়তাও করে থাকে এই মহাজনরা।
সালাম পার্টির ৩২জন গ্রেফতার: গত রোববার মতিঝিল, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা, শাহজাহানপুর ও কোতোয়ালি এলাকায় অভিযান চালিয়ে সালাম পার্টির ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩। র্যাব-৩-এর এএসপি ফারজানা হক বলেন, ছিনতাইয়ের অভিযোগে ৩২ জন আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েন। ২১ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল এলাকা থেকে এক নারীর সোনার চেইন ছিনতাই হয়। পরে তদন্তে নামে র্যাব। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন দলনেতা আছেন। তারা হলেন-মাসুম ও মোহাব্বত।
তিনি বলেন, মূলত সন্ধ্যার পর ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা সক্রিয় হন। ভোররাত পর্যন্ত তারা ছিনতাই করেন। প্রথমে তারা কাউকে নিশানা (টার্গেট) করেন। কাছে গিয়ে সালাম দেন। পরে তারা তার কাছ থেকে টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেন। কেউ মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে না চাইলে তারা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।