Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট গঠন দুদকের

লক্ষ্য দুর্নীতির আলামত সংরক্ষণ

| প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : বিচারাধীন মামলা পরিচালনা সহজ করতে নিজস্ব বিচার পরিচালনা বিভাগ (প্রসিকিউশন ইউনিট) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে এবং কাজে গতিশীলতা আনতে পঞ্চবার্ষিকী (২০১৬-২০২১) কর্মপরিকল্পনা গঠনে কাজ করছে। কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত হলেই কার্যক্রম শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি। সূত্র মতে, দুর্নীতির আলামত নিরাপদ সংরক্ষণ এবং দুর্নীতির মামলার সাজার হার বৃদ্ধি করতেই নিজস্ব বিশেষায়িত বিচার পরিচালনা শাখা করার উদ্যোগ নেয় দুদক। এছাড়াও নির্ভুল অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট গঠনের উদ্যোগও নিয়েছে বলে জানা যায়। এর আগে দুর্নীতি মামলা বিচারে দীর্ঘসূত্রতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে গত ৮ সেপ্টেম্বর দুদক সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনকে চিঠি দেয়। পরবর্তীতে সুপ্রিমকোর্টও দুর্নীতির মামলা ৬০ দিনেই নিষ্পত্তি করতে এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মোস্তফা কামাল ইনকিলাবকে বলেন, দুর্নীতি দমনে কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ার লক্ষে বর্তমান চেয়ারম্যান পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নিয়েছেন। প্রসিকিউশন ও গোয়েন্দা ইউনিট গঠন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এর খড়সা প্রস্তুত করা হয়েছে।   
এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে নিয়োজিত দুদকের প্রধান কৌশলী খুরশেদ আলম খান ইনকিলাবকে  বলেন, এক্ষেত্রে দক্ষ প্রসিকিউটর নিয়োগ দিতে হবে। শুধুমাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি করলেও চলবে না। আমাদের প্রয়োজন কোয়ালিটি, নট কোয়ানটিটি। তিনি আরো বলেন, কার্যকর বিচার ব্যবস্থা গঠনের উদ্যোগটিও অবশ্যই ভালো। এতে করে মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করতে অনেক সহায়ক হবে। দ্রুত অভিযোগ নিষ্পত্তি হবে। জনসাধারণের ভোগান্তিও কমবে।  
দুদক সূত্রে জানা যায়, দুর্নীতি বিচারাধীন মামলাগুলো পরিচালনা করা দুদকের মূল কাজ। কিন্তু অপর্যাপ্ত লজিস্টিকস-এর কারণে বিচার ব্যবস্থাকে সহযোগিতা করতে পারছে না। দুদক ও সংশ্লিষ্ট হোল্ডারের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারবে। দুর্নীতি বিচারাধীন মামলাগুলো পরিচালনা করতে লজিস্টিকস এর কারণে বিচার ব্যবস্থাকে সহযোগিতা করতে পারছে না। প্রসিকিউশন ইউনিট হলে মামলার সাজার হার বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের দায়িত্ব নেয়ার পর দুর্নীতি মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণ চিহ্নিত করা হয়। বিচারাধীন মামলার কারণ বিশ্লেষণ করে, দুদকের কার্যকর বিচার ব্যবস্থার কথা আসে। এসব সমস্যার সমাধানের পর ৫ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা নেয়। সেখানে পঞ্চম অধ্যায়ের কার্যকর বিচার ব্যবস্থা শিরোনামে একটি নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নেয় দুদক। এছাড়াও দুদককে আরও কার্যকর, গতিশীল, স্বাধীন এবং  পেশাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাও চিহ্নিত করা হয়।   
কার্যকর বিচার ব্যবস্থায় : দুদকের স্থায়ী বিচার পরিচালন ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যগুলো হারিয়ে যায়, ফলে মামলা প্রমাণে অনেক জটিলতায় পড়তে হয়। উপযুক্ত আদালতে দুর্নীতির মামলাগুলো কার্যকরভাবে উপস্থাপনা ও আলামত প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়। অপরদিকে এ মামলাগুলোর বিচার সঠিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাস এবং আধুনিক সফটওয়ার ও সিসি টিভি ও কম্পিউটার প্রমাণও আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই স্থায়ী বিচার পরিচালনা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হলে আলামত নিরাপদে সংরক্ষণ, বিচারাধীন মামলা পরিচালনা এবং দুদকের সংশ্লিষ্ট স্টক হোল্ডারের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগে সুনিশ্চিত করবে।
নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট : দুদকে আসে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০০টির  মতা অভিযোগ আসে। এর মধ্যে অধিকাংশ অভিযোগই দুদকের এখতিয়ারবহির্ভূত। মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ অভিযোগ আবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সূত্র মতে জানা যায়। এসব অভিযোগে বিশ্লেষণে দেখা যায়, এসবের পেছনে রয়েছে ব্যক্তি স্বার্থ, পেশাগত বিরোধসহ নানা ষড়যন্ত্র। ফলে এসব অভিযোগের পেছনে অনুসন্ধান করতে গিয়ে অহেতুক সময় নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি অকারণে হয়রানির শিকার হতে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানকে। সেজন্য দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট থাকা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১৫ সালের বার্ষিকী প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ৬৮ শতাংশ আসামি খালাস পেয়েছেন। সাজা হয়েছে ৩২ শতাংশের। এছাড়াও বর্তমানে দেশের ১০টি বিশেষ জজ আদালত, একটি বিভাগীয় বিশেষ আদালত এবং মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দুর্নীতি মামলার বিচার হয়।  
দুদক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এসব আদালতে গত এক বছরে মাত্র ১৮৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক  দেড় বছরে নিষ্পত্তি করেছেন ৮৫টি মামলা। ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক ১ বছর ৪ মাসে নিষ্পত্তি করেন ১০ মামলা।
১৩ মাসে ৩ মামলা নিষ্পত্তি করেন ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের। ১০ মাসে ৩ মামলা নিষ্পত্তি করেন ৭ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক। ২ বছর ৭ মাসে একটিমাত্র দুর্নীতি মামলা নিষ্পত্তি করেন ৮ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক। ১৬ মাসে ৬টি মামলা নিষ্পত্তি করেন ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক। ঢাকার ১০ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ১ বছর ৮ মাসে ১০ মামলা নিষ্পত্তি করেন। নতুন-পুরনো মিলিয়ে আদালতগুলোতে আরও ৭৪৪টি দুর্নীতি মামলা বিচারাধীন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর দুর্নীতি মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণ চিহ্নিত করা হয়। এমনকি প্রসিকিউশন ইউনিটে শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়। এরপর থেকেই মামলা নিষ্পত্তির হার বৃদ্ধির জন্য নানাভাবে  চেষ্টা চালাচ্ছে দুদক। এখন এই নয়া সেবা চালু হলে অভিযোগ ও  মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ