পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে দেশের আলেম সমাজের যে সুসম্পর্ক তা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীন। তিনি বলেন, দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত মাদরাসা শিক্ষার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার মাদরাসা শিক্ষা ও ইসলামি শিক্ষার জন্য যেটা করেছেন সেটা অভাবনীয়, অকল্পনীয়, অচিন্তনীয়। মাদরাসা শিক্ষকগণ এখন যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন এটা উনারা আগে কল্পনাও করতে পারেননি। সরকারও এর ফল পেয়েছে। কিন্তু এখন এমন একজনকে শিক্ষামন্ত্রী ও আরেকজনকে উপমন্ত্রী করা হয়েছে যারা ইসলামবিদ্বেষী, মুসলিম বিদ্বেষী। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে তারা অন্য কাজ করতে পারে কিন্তু মাদরাসা শিক্ষার দায়িত্বে থাকতে পারেন না।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরে মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের একমাত্র পেশাজীবী অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রতিনিধি সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজীর সভাপতিত্বে ও গাজীপুর জেলা জমিয়াতের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা মো. জহিরুল হকের পরিচালনায় প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এড. আ ক ম মোজাম্মেল হক। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন- গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান।
প্রতিনিধি সম্মেলনে জমিয়াত সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ বামপন্থী ছিলেন, তাকে প্রথম শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়ার পর যেভাবে হোক ২০১০ সালে শিক্ষানীতি নিয়ে যখন বিতর্ক দেখা দিলো, আলেম সমাজ যখন রূখে দাঁড়ালো, উনি কিন্তু দেরি করেননি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের সঙ্গে, মোদার্রেছীনের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। উনি (নুরুল ইসলাম নাহিদ) মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষাকে চমৎকারভাবে শিক্ষানীতিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষকদের বেতন-বৈষম্য দূর হয়েছে সে সময়। ওই সময়ে আলেম-ওলামা, মাদরাসা শিক্ষার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার যা করেছে তার ফল সরকারও ভোগ করছে। কিন্তু এখন এমন একজনকে (দীপু মনি) শিক্ষামন্ত্রী করেছেন, উনাকে আরও বড় মন্ত্রী করতে পারতেন। কারণ উনি একজন ইসলামবিদ্বেষী, উপমন্ত্রী নওফেল (মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল) দুজনই ইসলামবিদ্বেষী, মুসলিম বিদ্বেষী, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে তারা অন্য কাজ করতে পারে কিন্তু মাদরাসা শিক্ষার দায়িত্বে তারা থাকতে পারেন না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখনো যারা পড়াশুনা করছেন তাদের এক-তৃতীয়াংশ মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রী। সেটা আলিয়া, কওমী, দ্বীনিয়াসহ নানাবিধ দিক দিয়ে। এত বড় সংখ্যক শিক্ষার্থীকে অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই। যারা মাদরাসায় পড়াশোনা করে তারা ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে বড় হতে পারেন কিনা? কারণ মোদী (ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী) যেভাবে শিক্ষানীতি চায়, ভারতের ইতিহাস যেভাবে পাল্টে দিতে চায়, বাংলাদেশে সেটা কেউ করতে পারে না সেটা ভাবতে পারেনা। ইতোমধ্যে দুইটা বই বাতিল করা হয়েছে, আরো কিছু অসঙ্গতি আছে। কিন্তু দীপু মনি উল্টাপাল্টা কথা বলে বেড়াচ্ছেন। বই নিয়ে কেউ বিভ্রান্তি ছড়াননি। বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই, বই ছাপিয়েছে সরকার। যেসব অসঙ্গতির কথা বলা হচ্ছে তা সরকারের ছাপানো বই থেকেই। তাই এসব কথা বলের সরকারকে অপ্রয়োজনে বিতর্কিত করছেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রীই।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিল ও উপবৃত্তি না দেয়ার কঠোর সমালোচনা করে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, বলা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে টিফিন-উপবৃত্তি দেয়া হবে। তাহলে ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষার্থীরা কার সন্তান? এদেশের কৃষকের, গরিবের সন্তান না? তাহলে প্রাথমিকে দেবেন কিন্তু মাদরাসার শিক্ষার্থীদের দিবেন না এটা কেমন কথা? এই বৈরী নীতি, বৈষম্যমূলক নীতি কেন?
সমাজ স্থিতিশীল রাখতে আলেম সমাজের ভূমিকার কথা তুলে ধরে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি বলেন, আজকে সমাজে ড্রাগস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, ড্রাগসের কারণে ভাই-ভাইকে, স্ত্রী -স্বামীকে হত্যা করছে। মানুষের নৈতিক অধঃপতন কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে? সেটা থেকে উত্তরণ করতে হলে নীতি-নৈতিকতা মানুষ এবং ইসলামের আলোকে সুন্দর চিন্তা ছাড়া উত্তরণের কোনো সুযোগ নেই। সরকার এবং পুলিশ শত চেষ্টা করেও যেটা কন্ট্রোল করতে পারে না, সেটা সপ্তাহে অন্তত একদিন মসজিদে খুৎবা দিয়ে ইমাম সাহেবগণ করতে পারেন। সেখানে তারা সমাজকে স্থিতিশীল রাখার শিক্ষা দেন, নীতি-নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ তৈরির কথা বলেন। এগুলোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন পয়সা তাদের দেয়া হয়না। অথচ আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ১ ঘণ্টা একটি ভাষণ দেন এজন্য তাকে ১১ কোটি টাকা দিতে হয়। দেশের ইমামগণ সমাজ ও রাষ্ট্রকে এই ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরই এর সঙ্গে ছিলেন কিন্তু দীপু মনি গংরা এই সম্পর্ক নষ্ট করছে এবং সরকারের বিরাট ক্ষতিসাধন করছে।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ভারতে আগামীদিনের প্রধানমন্ত্রী যাকে ভাবা হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ। সেখানে মুসলমানদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে, তাদের বাড়ীঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে তছনছ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই রাজ্যেই এখন প্রাকৃতিকভাবে খরা দেখা দিয়েছে, প্রচন্ড গরমে কল-কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে। মানুষ কাজকর্ম করতে পারছে না। সেখানকার রাজনীতি, অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে।
সারাদেশের মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারী ও আলেম-ওলামাদের এই প্রতিনিধি বলেন, যখন থেকে আমাদের দেশে ইসলামবিদ্বেষী কার্যক্রম শুরু হয়েছে তখন থেকে আমাদের দেশের পরিস্থিতি ভালো না। যদিও এটি প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা বিরোধী, আওয়ামী লীগের চিন্তা-চেতনা বিরোধী। এটার প্রাকৃতিক পরিবেশ কিন্তু আপনারা (সরকার) দেখতে পাচ্ছেন। আপনি (সরকার) চাইলে রিজার্ভ ট্রিলিয়ন ডলার করতে পারবেন কিন্তু বৃষ্টি নামাতে পারবেন না। ইচ্ছে করলেই খরা দূর করতে পারবেন না। এই সমস্ত কিছু একজনের হাতে, যার কাছে দেশের লাখ লাখ আলেম-ওলামা প্রতিরাতে চোখের পানি ফেলেন। এই সমস্ত আলেম-ওলামাকে বাইরে রেখে, দূরে ঠেলে দিয়ে কোন কিছু অর্জন সম্ভব হবে না।
মাদরাসা শিক্ষার জন্য সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকী এক বছরের কম সময়। এরকম একটা সময়ে সরকারের রাজনীতিতে জ্ঞান-সুবিধা সবকিছুর জন্য সব সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র যে, চিন্তা করেই করতে হয় তা নয়। রাজনৈতিক সুবিধার জন্যও কিছু কাজ করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের সঙ্গে বৈঠক করে আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমাদের দাবির পর উনি বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন, অর্থমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন, তার কাছে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত চেয়েছেন, আমরা তৈরি করে দিয়েছি। আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় এটি পাস হয়েছে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন হয়েছে। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।