Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আটকে আছে রায় কার্যকর হওয়ার সিদ্ধান্ত

পিলখানার সেই বিভীষিকাময় দিন আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ইতিহাসের সেই কালো দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি আজ। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হয় পিলখানা হত্যাকাণ্ড। নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডে শহীদদের স্মরণে শাহাদৎ বার্ষিকী পালন করবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ১৪ বছর আগে তখন সকাল ৯ টা ২৭ মিনিট। দরবার হলে চলমান বার্ষিক দরবারে একদল বিদ্রোহি বিডিআর সৈনিক ঢুকে পড়ে। সিপাহী মঈন নামে একজন বিডিআর সদস্য মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। এরপরই ঘটে যায় ইতিহাসের সেই নৃশংস ঘটনা। বিডিআরের বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে। পুরো পিলখানায় এক ভীতিকর বীভৎস ঘটনার সৃষ্টি করে। এ সময় তারা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বিজিবি’র সদর দফতর পিলখানায় সেদিন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা যে তান্ডব চালিয়েছিল, তা পৃথিবীর কোনও বাহিনীর বিদ্রোহের ইতিহাসে পাওয়া যায় না। প্রতিবছর এই দিবসটি স্মরণ করতে এসে নিহতদের স্বজনরা বনানীর সামরিক কবরস্থানে শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তাদের একটাই আক্ষেপ, ‘আমরা আর কি চাইবো? আজও হত্যার বিচার পেলাম না।
হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলা :
পিলখানায় নারকীয় হত্যার ঘটনায় দায়ের করা হয় দুটি মামলা। এর মধ্যে সেনা কর্মকর্তাদের নিহতের ঘটনায় দণ্ডবিধি আইনে করা হয় হত্যা মামলা। অপরটি হয় বিস্ফোরক আইনে। বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলাটি ১৩ বছর ধরে সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যে আটকে আছে। হত্যা মামলায় নিম্ন আদালত ২০১৪ সালে ১৫২ বিডিআর জওয়ানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ১৬১ জনকে। সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পান আরো ২৫৬ জন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৮ জন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা। ২০১৭ সালে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জওয়ানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যাবজ্জীবন দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় আরো ২০০ জনকে। খালাস পান ৪৫ জন।

উচ্চ আদালতে মৃত্যুদন্ডের আপিল শুনানির অপেক্ষায়: হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে খালাস ও সাজা কম পাওয়া আসামিদের মৃত্যুদন্ড চেয়ে লিভ টু আপিল দায়ের করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ ধরনের আপিলের সংখ্যা ১৩৯ টি। অন্যদিকে, যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়া প্রায় ৩শ আসামি খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে আপিল করেছেন। রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের এসব আপিল এখন চুড়ান্ড নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। পরে এই আপিল দায়েরের বিষয়টি ব্যয় সাপেক্ষ হওয়ায় মেমো অব আপিলের মাধ্যমে আপিলের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করে আসামি পক্ষ। প্রধান বিচারপতি আসামি পক্ষের আবেদন মঞ্জুর করায় অন্যান্য আসামীদেরকে পূর্ণাঙ্গ পেপারবুক ছাড়াই আপিল দায়ের করার সুয়োগ হয়েছে। ফলে তাদের কাউকে ১০ লাখ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা ব্যয় করে আপিল দায়ের করতে হবে না। তারা বড় অংকের অর্থ খরচের হাত থেকে বেঁচে গেছেন বলে জানিয়েছেন আসামী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী এম আমিনুল ইসলাম।

বিস্ফোরক আইনের মামলা: ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বিস্ফোরক আইনের মামলাটি। এই মামলায় আসামি রয়েছেন ৮৩৪ জন। এর মধ্যে একজন সিভিলিয়ান, বাকি আসামিরা বিডিআরের জওয়ান। এই মামলায় আসামীদের মধ্যে ২৪ জন মারা গেছেন। জীবিত আসামী ৭৯০ জন। পলাতক রয়েছেন ২০ জন আসামী। এই মামলায় ২৫৫ জন সাক্ষী দিয়েছেন।

মামলার বিচার কার্যক্রম কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে, জানতে চাইলে মামলার পাবলিক প্রসিকিউশন (পিপি) মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রায় ১২ শত সাক্ষী রয়েছেন। সবার সাক্ষ্য গ্রহণের প্রয়োজন নেই। এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। মামলায় আসামী পক্ষ যদি সহায়তা করে, তাহলে এ বছরেই এই মামলার রায় দিতে পারবে আদালত।

শোকাবহ দিবসের কর্মসূচি : পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে শহীদ ব্যক্তিদের স্মরণে আজ শনিবার শাহাদাতবার্ষিকী পালন করবে বিজিবি। দিনের কর্মসূচিতে রয়েছে, পিলখানাসহ বিজিবি’র সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন, বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সকাল ৯টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ৩ বাহিনীর প্রধান (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একসঙ্গে) শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া দিবসটি পালন উপলক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সকল স্থাপনায় বিজিবি পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং বিজিবি’র সকল সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করবে।



 

Show all comments
  • Sanjum Al-Nur Shaon ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:৫৪ এএম says : 0
    পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ইতিহাসের দ্বিতীয় কাল রাত্রী
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar Hossain ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:৫৪ এএম says : 0
    সরকার ক্ষমতায় এসে ওদেরকে আগে মেরেছে তাতে নিজেদের পছন্দ লোক দিতে পারে
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Ismail ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:৫৪ এএম says : 0
    যারা এই খুনের সাথে জড়িত আল্লাহ আপনি তাদের বিচার করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Alamgir Hossain ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:৫৪ এএম says : 0
    খুনিদের যেন দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah Al Mamun ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:৫৪ এএম says : 0
    যেখানে সরকার জড়িত থাকে সে রায় এ সরকার করবে না,কিন্ত ইনশাআল্লাহ আমাদের দেশপ্রেম সেনাবাহিনীর এ হত্যা বিচার হবে একদিন ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Ferdous Jaman ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:৫৫ এএম says : 0
    যাতে সেনাবাহিনী কে চুড়ি পরাতে পারে এজন্য এ জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে। সাপ জাতে মরে নাঠিও না ভাঙ্গে,, এদিকে সেনাবাহিনী ওদিকে বিডিআর দুইদিকের........ কত বড় পরিকল্পনা যাতে সরকারের দোষ না হয়, সে ধরবে মাছ না ছুঁইবে পানি কথা টা এমন হলো।।।
    Total Reply(0) Reply
  • Abd rahman ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:১৪ এএম says : 0
    আপনাদের কষ্ট হচ্ছে এটা পরিকল্পিত ছিল
    Total Reply(0) Reply
  • Abd rahman ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:১৪ এএম says : 0
    আপনাদের বলতে কষ্ট হচ্ছে এটা পরিকল্পিত ছিল
    Total Reply(0) Reply
  • salman ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৭:১৭ এএম says : 0
    Bortoman Sorkar Jorito, tai Bechar Druto hocche na, kochob gotite cholse
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ