পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তুচ্ছ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রথমে মারধর, হুমকি ধামকি দিয়ে হল ছাড়া করা, অতঃপর আদরের ছোট বোন দাবি করে মীমাংসা! এভাবেই একের পর এক অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের নেত্রীরা। ঢাকা পড়ে যাচ্ছে অপরাধ। এক রিভার পর তৈরি হচ্ছে আরেক রিভা। একজনের পর নির্যাতনের ঝান্ডা হাতে তুলে নিচ্ছেন আরেকজন। তার জলন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায় গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে কলেজের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের ঘটনা।
কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হাতের আঙুল ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নুজহাত ফারিয়া রোকসানার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাকে পেটানোর পর মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলেন ও বটি দিয়ে ধাওয়া করেন ওই ছাত্রলীগ নেত্রী। প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানান একই কথা। নির্যাতনের পর কান্না করতে করতে হল থেকে বের হয়ে যান ওই শিক্ষার্থী। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ৫০৬ নং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হলের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা হল সুপার নাজমুন নাহার বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। ভুক্তভোগীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার অভিযোগ সমর্থন করে রোকসানার শাস্তি দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
তবে ঘটনাটি জানাজানি হলে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে ডেকে মীমাংসা করে দেন হল প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে তার নামে বরাদ্দ দেয়া রুমে উঠতে বলা হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীও প্রথমে গণমাধ্যমে নির্যাতনের কথা স্বীকার করলেও পরবর্তীতে বলেন একটা ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে নিজেদের মাঝে। এখন তা মীমাংসা হয়ে গেছে। নির্যাতনের পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী গণমাধ্যমে বলেন, ছাত্রলীগ নেত্রী রোকসানা টাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের হলে তোলেন, ছাত্রীদের সাথে বাজে আচরণ ও নিজের কাপড় ধোয়াসহ ব্যক্তিগত কাজও করান। আমি প্রতিবাদ করায় আমার চুল ছিঁড়ে ফেলেছে, স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে আঙুল ভেঙে দিয়েছে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। তবে গতকাল শুক্রবার তিনি ইনকিলাবকে বলেন, ঘটনার মীমাংসা হয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, নুজহাত ফারিয়া রোকসানা হল ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এর আগে আরেক ছাত্রলীগ নেত্রীকে মারধর, সিট বাণিজ্য, নির্যাতন করার অভিযোগে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন ছাত্রলীগের এই নেত্রী। আর শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রিভার কথা তো পুরো দেশ জানে। নিজেকে কলেজের প্রিন্সিপালের চেয়ে ক্ষমতাধর দাবি করে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অডিও ক্লিপ এখনো রয়েছে ইনকিলাবের হাতে।
শিক্ষার্থীরা জানান, যখনই এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করা হয় যাতে বিষয়গুলো নিয়ে মুখ না খোলে। এভাবেই কলেজ প্রশাসন আসলে ছাত্রলীগ বা ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। বারংবার অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি, এটাই শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের স্পৃহা নষ্ট করে দেয়। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের পর ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে তার বৈধ সিট দিয়ে তাকে চুপ রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একাধিক শিক্ষার্থী। জানা যায়, এর আগে ওই শিক্ষার্থী যে রুমে থাকতেন তা নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগ নেত্রীরা। অর্থাৎ সেটি একটি পলিটিক্যাল রুম!
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, নেত্রী আপুরা প্রথমে এভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করে, পরে গণমাধ্যমে বিষয়টি আসলে ভালো একটা সিট দিয়ে ভুক্তভোগীকে সন্তুষ্ট করে দেয়। এভাবেই হয় মীমাংসা! একটার পর একটা নির্যাতনের ঘটনা ঘটে আর অপরাধীরা পার পেয়ে যায় প্রতিটি ক্ষেত্রে। ছাত্রলীগ থেকেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। হল প্রশাসন থেকে নামে মাত্র তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তার প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না।
ইডেন কলেজ ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সুমি বলেন, একদিকে এখানকার শিক্ষকরা, যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তারা দলীয়ভাবেই এখানে দায়িত্বে বসেন এবং তাই দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে কোনো কথা বলতে পারেন না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা তারা ভাবেন না; তারা মূলত ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগকে সার্ভ করেন। হলে হলে পলিটিক্যাল রুম থাকাই প্রমাণ করে সিট বাণিজ্যের সাথে প্রশাসনও জড়িত।
সুমি বলেন, অন্যদিকে যখনই ছাত্রলীগের কোনো নেত্রীর এ ধরনের অপরাধের বিষয় গণমাধ্যমে আসে তখন ছাত্রলীগের নাটকীয় একটা বহিষ্কারাদেশ আমরা দেখতে পাই। কিন্তু ওই সকল নেত্রীরা বহাল তবিয়তে হলেই থাকে এবং সব ধরনের অপকর্ম আগের মতোই করে বেড়ায়। পরবর্তীতে আবার কোন ফাঁকে যে সেই বহিষ্কারাদেশ উঠিয়ে নেয়া হয় তাও জানতে পারে না শিক্ষার্থীরা। এভাবেই একের পর এক অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা।
গত ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় কলেজ পরিদর্শক প্রতিনিধি টিমের দুই সদস্য ইনকিলাবকে বলেন, আমরা আলাদা আলাদা দুইজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। দুইজনই নিজেদের ভুল স্বীকার করেছে। তারা বলেছে যে তাদের মাঝে একটা ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে। এবং তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে একে অন্যের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। আমরা বিষয়টা মিমাংসা করে দিয়েছি। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে তার নামে বরাদ্দ দেয়া রুমে যেতে বলেছি। এসময় দুই একটা পলিটিক্যাল রুম থাকার কথাও স্বীকার করেছেন একজন প্রফেসর।
এঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী রোকসানা বলেন, ও (ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী) আমার খুব কাছের ছোটবোন। আমরা দু’জন রুমমেট। আমাদের মাঝে ছোটখাটো একটা ঝামেলা হয়েছে কিন্তু এখন মিটমাট হয়ে গেছে। তবে কি নিয়ে ঝামেলা ছিল জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিতে রাজি হননি। এসময় তিনি বলেন, সে আমার সাথেই আছে, আপনি চাইলে তাকেও জিজ্ঞেস করতে পারেন। রোকসানার ফোন থেকেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের মাঝে একটু ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে। পরে আপুরা আমাকে হেল্প করেছে। এখন বিষয়টা মীমাংসা হয়ে যাচ্ছে। তবে কীভাবে সমাধান হলো তা জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলে ফোন রেখে দেন। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী জানান, গণমাধ্যমে প্রচারিত মারধরের সংবাদের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ জানাবেন।
এসব বিষয়ে জানতে কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্যকে একাধিকবার ফোন দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বিষয়টিকে ছাত্রলীগের কোনো বিষয় বলে মানতে নারাজ সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। তিনি বলেন, একই প্রতিষ্ঠানের একই রুমের দুই শিক্ষার্থীর মাঝে ঝগড়া হতেই পারে। এটাকে আসলে কোনো সংগঠনের সাথে যুক্ত করা সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি। এবং একই পরিবারের দুই ভাই কিংবা বোনের মাঝে ঝগড়া হবে আবার মীমাংসাও হবে এটাই স্বাভাবিক।
সার্বিক বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি, সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা প্রত্যাশা করছি আমাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে প্রশাসন রয়েছে তারা এই বিষয়গুলোকে এড্রেস করবে। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ফৌজদারি আইন প্রয়োগ করবে। এক্ষেত্রে আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে। আমরা অতি শীঘ্রই শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ হিসেবে প্রতিটি ক্যাম্পাসে এন্টি র্যাগিং ক্যাম্পেইন শুরু করতে যাচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।