Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোহিঙ্গারা এখন নিরাপত্তা হুমকি, তিন দেশের সঙ্গে কার্যকর আলোচনার পরামর্শ

বিআইআইএসএস সেমিনার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৩ এএম

মিয়ানমার থেকে বিতারিত বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গারা মাদক, মানবপাচার, অবৈধ অস্ত্রের কারবারসহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে, যা দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তার জন্য চরম ঝুঁকি তৈরি করেছে। তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবসানে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বাংলাদেশকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়াসহ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে রাশিয়া, চীন ও ভারতের সঙ্গে কার্যকর আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা ক্রাইসিস অ্যান্ড দ্য ইম্যারজিং সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জেস: রেসপন্স স্ট্র্যাটেজি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব পরিস্থিতি তুলে ধরে জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলোকে আন্তরিক পদক্ষেপ নিতে আহŸান জানান। এ সময় পশ্চিমা দেশগুলোকে দ্বিমুখী নীতি বদলে মিয়ানমারে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের দাবি, ঝুলে যাচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবসান, জাতিসংঘকে আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ এবং প্রধানমন্ত্রীকে তিন দেশের সঙ্গে কার্যকর আলোচনায় বসার পরামর্শ দেয়া হয়।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএসের সাবেক চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন। সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সাবেক প্রিন্সিপ্যাল অফিসার লে. জে. (অব.) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ‘রিজিওনল সিকিউরিটি ডিমেনশনস অব দ্য রোহিঙ্গা ক্রাইসিস’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস উপস্থাপন করেন ‘দ্য রোহিঙ্গাস অ্যান্ড ইম্যারজিং নন-ট্রাডিশনাল সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক প্রবন্ধ।
এরপর বিআইআইএসএসের রিসার্চ ফেলো এএসএম তারেক হাাসান শিমুল ‘মিয়ানমার অ্যান্ড দ্য রোহিঙ্গাস: দ্য পলিটিক্যাল ইকনমি অব আর্মস অ্যান্ড বিজনেস’ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য ড. দেলোয়ার হোসেন ‘রোহিঙ্গা ক্রাইসিস অ্যান্ড সিকিউরিটি কনসার্নস: রেসপন্স স্ট্র্যাটেজি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বক্তারা বলেন, শুধু নিরাপত্তা ঝুঁকিই নয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবসান প্রক্রিয়া ঝুলে যাওয়ায় বা দীর্ঘ সূত্রিতা সৃষ্টি হওয়ায় এটি জাতীয় সংকটে রূপ নিয়েছে। একইসঙ্গে দেশের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও বৃদ্ধি করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সন্তাসবাদের বীজ বপন হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের নিপীড়িন-নির্যাতনের কারণে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর পশ্চিমা দেশগুলো একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও মিয়ানমারের কাছে ওই দেশগুলোর প্রতিষ্ঠান অস্ত্র বিক্রি করছে। নিষেধাজ্ঞা দিয়েও অস্ত্র বিক্রির দ্বিচারিতামূলক আচরণ থেকে পশ্চিমা দেশগুলোকে সরে এসে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবসানের বিষয়ে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, রোহিঙ্গা সীমান্ত অপরাধ থেকে শুরু করে মাদক, মানবপাচার, অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচা, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক স্থাপনসহ নানাবিধ অপরাধে পড়ছে, যা দেশের জন্য, দেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তিনি আরো বলেন, সমস্যাটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ও রাজনৈতিক। প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় এই ভ‚-রাজনীতির শিকার হয়ে বাংলাদেশ ভুক্তভোগী হয়েছে। বাংলাদেশ মানবিকতা দেখিয়েছে মানবতার গ্রাউন্ড (দৃষ্টিকোন) থেকে। কিন্তু মিয়ানমার নিজ দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনাসহ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে নানা তালবাহানা করছে।
সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধ ও আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকটের নানাবিধ দিক তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। তারা এই সংকটের উত্থান, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গার প্রবেশ-প্রবাহ, বর্তমান অবস্থা, বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে আর কী করা যেতে পারে, সে বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন। রোহিঙ্গা সংকট প্রতিবেশী দেশগুলোকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে তার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়েও সেমিনারে আলোচনা হয়।
বক্তারা বলেন, নিরাপত্তা ঝুঁকির পাশাপাশি অন্য ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কর্মীরা অবস্থান করায় বাসা ভাড়া বেড়েছে ১২০ শতাংশ। এছাড়া ২০২২ সালে ৩৫০০ রোহিঙ্গা সাগর পথে ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিয়েছে অবৈধভাবে। রোহিঙ্গাদের শিশুদের পাচার করা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।
সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশ নেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম. সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ৬ বছর তো পার হতে চললো। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসানে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে ক‚টনৈতিক চ্যানেলে কার্যকর শক্তিশালী উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে নানামুখী নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। শুধু তাই নয়, অর্থনৈতিক ও চাকরির ক্ষেত্রেও রোহিঙ্গারা ঝুঁকি তৈরি করছে বাংলাদেশের মানুষের জন্য।
সমাপনী পর্বে সেমিনারের সভাপতি রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, নিরাপত্তার প্রশ্নে অবশ্যই নিজ দেশের- অর্থাৎ বাংলাদেশের ও এখানকার মানুষের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের নিরাপত্তার সব দিক বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত ও উপযুক্ত পদক্ষেপ বা উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ