Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিচালকের সিন্ডিকেটে বন্দি খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস

এবার নিগৃহীত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ২ জনকে শোকজ

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৩ এএম

খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ প্রায় প্রতিদিনই নানা হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বর্তমান পরিচালক যোগদানের পর এ হয়রানি আরো বেড়েছে বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ। সেবা নিতে আসা মানুষের অভিযোগ, পরিচালক তার অফিসে নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে নানা অপকর্ম করে চলেছেন। এরাই প্রতিনিয়ত হয়রানি করছেন। খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে এবার সেবা নিতে গিয়ে নিগৃহীত হয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার অফিসের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার খুলনা পাসপোর্ট অফিসের দুই কর্মচারীকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজ করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম। পরিচালকের পক্ষে উপ পরিচালক ফাতেমা বেগম চিঠি দুটি সাক্ষর করেন।
সূত্র জানায়, গত ১৫ ফেব্রæয়ারি বিভাগীয় কমিশনার অফিসের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তার দুই আত্মীয়কে নিয়ে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে যান। এ সময় একজন আনসার সদস্য ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক আফসানা আনসারী তাদের হয়রানি ও দুর্ব্যবহার করেন। এ ঘটনায় ওই আনসার সদস্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। গতকাল বৃহষ্পতিবার বিকালে আফসানা আনসারী এবং একই কক্ষে দায়িত্বরত রেকর্ড কীপার টিপু সুলতানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশে তাদের এ বিষয়ে তিনদিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে দুজন কর্মচারীকে শোকজ করা হয়েছে। যদিও ঘটনার পরপরই অভিযুক্তরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ক্ষমা চান। গত ১৫ ফেব্রæয়ারি দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর আত্মীয়রা যখন পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলতে যান তখন একজন বয়স্ক ব্যক্তি ছবি তুলতে আসেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর আত্মীয়দের অনুমতি সাপেক্ষে রেকর্ড কীপার টিপু সুলতান সেই বৃদ্ধের ছবি তোলেন ও তাদের পাশের ডেস্কে থাকা আফসানা আনসারীর কাছে পাঠান। কম্পিউটার অপারেটর আফসানা আনসারীর সাথে তাদের ভুল বুঝাবুঝি হয়। অফিস ফর্মালিটি মেইনটেইন এর জন্য এখন শোকজ করা হয়েছে। এটি প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে না। সতর্ক করার জন্যই শোকজ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ওইদিন ভিড় বেশি থাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অফিসে আসতে নিষেধ করেছিলেন তিনি।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ভ‚পালী সরকার জানান, পাসপোর্ট অফিসের কোনো কর্মচারী তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেননি। একজন আনসার সদস্য তাকে চিনতে না পেরে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। এর বেশি আমি আর কিছু বলতে পারছি না। যাদের শোকজ করা হয়েছে, তারা কোনো প্রকার খারাপ ব্যবহার করেননি। তাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।
এদিকে, বর্তমান পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম প্রায় দু মাস আগে খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে পাসপোর্ট অফিস। এমন অভিযোগ সাধারণ মানুষের। পরিচালকের নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট রয়েছে বলে শোনা গেছে যারা দালালদের সাথে যোগসাজশ করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে থাকেন। নানা ছলছ‚তায় টাকা আদায় করে থাকে এই সিন্ডিকেট।
যা ভাগ পায় তা বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী ভাগাভাগি করে নেন। তার সিন্ডিকেটের বাইরের কর্মচারীদের তিনি প্রায়শ: হয়রানি করে থাকেন। তার সিন্ডিকেটের বাইরের কর্মচারীদের তিনি প্রায়শ: হয়রানি করে থাকেন। এর আগে তিনি সিলেটে কর্মরত ছিলেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমে গিয়েছিল। কোনো কারণ উল্লেখ না করেই তাকে গত ৬ ডিসেম্বর খুলনায় বদলী করা হয়। তার বিরুদ্ধে এক নারী পাসপোর্ট গ্রহীতাকে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে সিলেট মহানগর জজ আদালতে মামলা হয়েছিল। গত বছর ১৬ নভেম্বর জিডি এবং ২১ নভেম্বর সিলেটের মোগলাবাজার থানার গোটাটিকর পাঠানপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাহারা খানম মামলা দায়ের করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সিলেটের সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে উঠলে এক পর্যায়ে খুলনায় বদলী করা হয়। খুলনায় এসেও তিনি ফ্রি স্টাইলে দুর্নীতি অনিয়ম, হুমকি প্রদান ইত্যাদি চালিয়ে যান।
যদিও এমন অভিযোগ পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন খুলনা পাসপোর্ট অফিস এখন শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ