Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আ’লীগের সাবেক এমপি কারাগারে

ডিএনএ টেস্টে উদ্ঘাটন হলো কিশোরীর পিতা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৩ এএম

বহুল সমালোচিত প্রতারণা ও ধর্ষণ মামলায় অবশেষে কারাগারে গেলেন পাবনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওরফে ফারুক। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং ডিএনএ টেস্টে তিনিই কিশোরীর পিতা এসব বিষয়ে সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু অতি প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের সাবেক ওই এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতা আরজু তখন সব কিছু অস্বীকার করেন।
তার বিরুদ্ধে নিজের নাম-পরিচয় গোপন করে তালাকপ্রাপ্তা নারীকে বিয়ে ও প্রতারণাসহ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ওই নারীর গর্ভে নিজের সন্তানকে অস্বীকার করেছিলেন। ভুক্তভোগী নারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) টেস্টে’ অভিযুক্ত সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজুই ওই সন্তানের পিতা বলে প্রমাণিত হয়।

এর আগে সন্তানের পিতৃপরিচয় এবং স্ত্রী হিসেবে নিজের মর্যাদা ফিরে পেতে ভুক্তভোগী নারীর দায়ের করা প্রতারণা ও ধর্ষণ মামলায় গতকাল বুধবার তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহারের আদালতে আ’লীদের সাবেক ওই এমপি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী এস এম লুৎফর রহমান জাহাঙ্গীর বলেন, গত বছর মামলা দায়ের করা হয়। ট্রাইব্যুনাল মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের আদেশ দিয়েছিলেন। পিবিআই তদন্তের করে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে। সেই প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনাল আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। গতকাল ছিল পরোয়ানা সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের দিন।
এর আগে, গত বছর ২২ এপ্রিল ভুক্তভোগী নারী আদালতে মামলা দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনাল বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের আদেশ দেন। অভিযোগ তদন্তের পর ঢাকা মহানগর উত্তর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম ট্রাইব্যুনালে গত ৫ জানুয়ারি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

আর্জি মতে, ঘটনা ২০০১ সালের। খন্দকার আজিজুল হক আরজু নিজেকে ‘ফারুক’ পরিচয়ে পরিচিত হন মামলার বাদিনীর সঙ্গে। বাদিনী জানান, তার স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে ২০০০ সালে। ওই নারীকেও ফারুক জানান, তারও স্ত্রী মারা গেছেন। দু’জনের মন দেয়া-নেয়া হয় এর মধ্যেই। ফারুক এক পর্যায়ে বাদিনীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে নারী তাতে সম্মতও হন। ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর। বাদিনীর চাচা মোবারক হোসেন বাবুর উপস্থিতিতে ফারুক ও বাদিনীর শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে সম্পন্ন হয়। পরে তারা প্রথমে মগবাজার, পরে মোহাম্মদপুর মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটির একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। সেখানেই কাটছিল তাদের সুখের দাম্পত্য জীবন। বাদিনীকে ফারুক স্বপ্ন দেখান। ফ্ল্যাট কেনার উচ্ছ্বাসে ওই নারী স্বামীর হাতে তুলে দেন নিজের জমানো ১০ লাখ টাকা। খুলে দেন হাতের বালা, গলার চেইনসহ অন্তত ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। এরই মধ্যে বাদিনীর পেটে চলে আসে সন্তান। তথ্যটি জানাতেই বাদিনীকে সন্তান নষ্ট করে দিতে বলেন। কিন্তু বেঁকে বসেন বাদিনী। ক্রমে তার ওপর বাড়তে থাকে ফারুকের বহুমাত্রিক চাপ। সৃষ্টি করেন দূরত্ব। বাসায় আসাই কমিয়ে দেন। ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ভূমিষ্ঠ হয় কন্যাসন্তান। পরে স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগই বন্ধ করে দেন। তখন বাদিনী বুুঝতে পারেন, তার সঙ্গে বিয়ের নামে প্রতারণা হয়েছে। ফারুক পরিচয়ে বিয়ে করলেও তার প্রকৃত নাম খন্দকার আজিজুল হক আরজু। তার আগের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে।

গোমর ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর বাদিনীর সঙ্গে স্বাভাবিক যোগাযোগও বন্ধ করে দেন। তবে চলতে থাকে সম্পর্কের টানাপড়েন। সন্তানের পিতৃত্ব সম্পূর্ণ অস্বীকার করলে দেড় দশকের মাথায় মামলা করতে বাধ্য হন বাদিনী। সন্তানের পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করতে আদালতে ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) টেস্ট’র আবেদন জানান। এতেই বিগড়ে যান ফারুক। আশ্রয় নিতে থাকেন নানা কূটকৌশলের। অবশেষে আদালতের নির্দেশে প্রায় একবছরের চেষ্টায় ডিএনএ টেস্ট সম্পন্ন হয় ফারুকের। টেস্ট করানো হয় বাদিনী ও তার কিশোরী কন্যার। সিআইডি’র ল্যাবের দেয়া ডিএনএ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফারুকই হচ্ছেন কিশোরীর জৈবিক পিতা। পিবিআই’র তদন্তে বেরিয়ে আসে, কথিত ফারুকের অজানা অধ্যায়।

গত ৫ জানুয়ারি পিবিআই’র প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম সামসুন্নাহার মামলাটি নারী ও শিশু ২৭/২৩ নম্বর মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে আসামি আজিজুল হক আরজুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গতকাল বুধবার ধার্য ছিল তামিল-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ