Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কম্পিউটার, ইন্টারনেটের যুগেও কাগুজে বইয়েই স্বাচ্ছন্দ্য পাঠকদের

রাহাদ উদ্দিন | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৩ এএম

সুজন,জোবায়ের,হাসানের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা গভীর।স্কুল,কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে বর্তমানে এদের সবাই প্রবেশ করেছেন চাকরি জীবনে। শহুরে জীবনের ব্যস্ততায় দীর্ঘদিনের বন্ধুদের মধ্যে আগের মতো গল্প-আড্ডা হয় কদাচিৎ। গতকাল তিনবন্ধুই সময় বের করে একই সঙ্গে এসেছিলেন বইমেলায়।
মেলা ঘুরা ও পছন্দের বই কেনা শেষে তাদের কফি হাতে আড্ডা দিতে দেখা গেল মেলার এক প্রান্তে। ডিজিটাল যুগে যেখানে সব ধরনের বই আঙ্গুলের ছোঁয়ায় সামনে চলে আসে সেখানে মলাট বাঁধা কাগুজে বই কি আবেদন হারাচ্ছে?এমন প্রশ্নে একটু চিন্তার পর জোবায়ের জানালেন, বই পড়ার অভ্যেস আমার ছোটবেলা থেকেই।সেই সময় প্রতিবছর হুমায়ূন আহমেদের নতুন বইয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতাম। রঙিন মলাটে মোড়ানো নতুন বই সে সময় ছিল এক আবেগের নাম। বর্তমান জীবনে যান্ত্রিকতায় সময় বাঁচাতে অনেকে হয়তো অনলাইনে বই পড়াকেই সুবিধাজনক মনে করেন, তবে অনলাইনে পড়া বই কাগুজে বইয়ের মতই অন্তরে এক স্থায়ী মুগ্ধতার রেশ রেখে যাতে পারে আমার মনে হয়না।
দ্বিতীয় বন্ধু হাসান বলেন, নতুন বইয়ের সেই চিরচেনা গন্ধ, পাতা উল্টানোর সুখ, মলাটে থাকা গল্পের নায়কের ছবিতে হাত বুলানোর মতো অনুভূতিগুলো অনলাইনে পাওয়া অসম্ভব। এতক্ষণ দুই বন্ধুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালেন সুজন।
বর্তমান বিশ্ব বিজ্ঞানের, যন্ত্রের,প্রযুক্তির। এসবের সৌজন্যে বিশ্ব এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। প্রয়োজনীয় কিংবা পছন্দের বই কিনতে আমাদের এখন দোকান লাইব্রেরী অন্য কোথাও যাওয়া লাগেনা। মুঠোফোনে কয়েক ক্লিকেই আমাদের সামনে এসে হাজির হয় সব ঘরানার বই।
বইয়ের এত সহজলভ্যতার পরেও গতকাল মেলায় আগত পাঠক, দর্শনার্থী ও বইপ্রেমীরা জানাচ্ছিলেন, অনলাইন বই পড়ার হাজার সুবিধা থাকলেও তাকে কাগুজে বইয়ের উপরে স্থান দেওয়া যাবে না। তারা ভিন্ন ভিন্ন কারণও বলছিলেন। এই যেমন গতকাল মেলায় সাদাত হোসেনের দুটি উপন্যাসের বই কেনা অরুণিমা জানালেন বুকসেল্ফে সাজানো পছন্দের বই আমাকে সারাজীবন তার ভেতরকার চরিত্রগুলোর কথা মনে করিয়ে দিতে থাকবে।পড়ার সময় ব্যক্তিগত জীবনের স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দিতে থাকবে। অনলাইনে তা কোথায় পাব?
একই প্রশ্নে কলেজ পড়ুয়া মার্জিয়ার উত্তরটা ছিল আরো সোজাসাপ্টা, নতুন বইয়ে আমার পছন্দের লেখক অটোগ্রাফ দিলেন, সঙ্গে অনিন্দ্য সুন্দর এক বাক্যে শুভকামনা জানালেন ভবিষ্যতের জন্য। স্বপ্ন পূরণের আনন্দ মার্জিয়ার চোখেমুখে। পাল্টা প্রশ্ন করলেন, অনলাইনে কী এটা সম্ভব?
এবারের মেলা গতকাল তার ২২তম দিন পার করেছে। বিকেল বেলার স্নিগ্ধ হওয়া, বৃক্ষে বৃক্ষে নতুন ফুলের সমারোহ, থেকে থেকে ভেসে আসা পাখির কুঞ্জন-প্রকৃতিতে শীতের রুক্ষতার বিদায় আর বসন্তের উপস্থিতি স্পষ্ট। এমনই মন ভালো করা গতকালের বিকেল-সন্ধ্যাটা মেলা প্রাঙ্গণে এসে কাটিয়েছিলেন বইপ্রেমীরা। মেলার নিয়মানুযায়ী সময় গড়ানোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেলায় বাড়তে থাকে দর্শনার্থীদের সংখ্যা, মুখর হতে থাকে মেলা প্রাঙ্গন।
গতকাল মেলার ২২তম দিনে নতুন বই এসেছে ৬৪টি। বিকাল ৪:০০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা ও ছড়া এবং জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত লোকায়ত সাহিত্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন রফিকুর রশীদ, আহমাদ মাযহার, অদ্বৈত মারুত এবং মামুন খান।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ