পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রশাসন থেকে সর্বত্রই মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে অভিজ্ঞতাকে। সুযোগ থাকে পদোন্নতির। ক্রমান্বয়ে সেটি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এক্ষেত্রে যেন উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট, পিটিআই ইন্সট্রাক্টরের গ্রেড বৃদ্ধি হলেও কেবল এটিইওরাই রয়ে গেছেন আগের অবস্থানে। আবার নতুন নিয়োগ বিধিমালায় পদোন্নতির সুযোগ বৃদ্ধির পরিবর্তে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে মাঠ পর্যায়ে নেমে এসেছে হতাশা।
মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সার্বিক কার্যক্রমের সমন্বয় ও সংযোগ ঘটে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারদের (এটিইও) মাধ্যমেই। তারাই মূলত প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম মনিটরিং মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ করে থাকেন। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা-২০২১-এ তাদের পদোন্নতির সুযোগ ৮০ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে প্রাথমিক শিক্ষায় মেধাবীরা আসতেন না। সম্প্রতি সে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নতুন সিদ্ধান্তে মেধাবীদের আসার পথ আবারও বন্ধ হতে যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিজ্ঞদের পদোন্নতি না দিয়ে সরাসরি নিয়োগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে মন্ত্রণালয়। আর এ ধরনের সিদ্ধান্তে মাঠপর্যায়ে হতাশা নেমে এসেছে। বিধিমালায় বলা হয়েছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব বলেন, প্রস্তাবিত নিয়োগবিধিমালার ২৬ নম্বরে উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার পদের নিয়োগ পদ্ধতিতে “৮০ শতাংশ পদোন্নতি এবং ২০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে” এর পরিবর্তে ৫০ শতাংশ পদোন্নতি এবং ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে” প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা-২০২১-এর কাজ চলমান। ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের কাজ শেষ করে তা আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘২৬ নম্বর ক্রমিকের উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার পদের নিয়োগ পদ্ধতিতে ৮০ শতাংশ পদোন্নতি ও ২০ শতাংশ নিয়োগের মাধ্যমে এর পরিবর্তে ৫০ শতাংশ পদোন্নতি ও ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হবে। এর ফলে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারদের পদোন্নতির সুযোগ সংকীর্ণ হয়ে যাবে।
সূত্র জানায়, সর্বশেষ উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার (টিইও) পদে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) পদ থেকে ৮০ শতাংশ পদোন্নতি দেওয়া হতো। আর ২০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হতো। কিন্তু নতুন নিয়োগ বিধিমালায় টিইও পদে এটিইওদের মধ্য থেকে মাত্র ৫০ শতাংশ পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, আমরা চাই নবীনের উদ্যোম ও প্রবীণের অভিজ্ঞতা। দুটোই আমাদের দরকার। এ জন্যই আমরা ৫০ শতাংশ পদোন্নতি ও ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের বিধান রেখেছি।
৮০ শতাংশ পদোন্নতির স্থলে ৫০ শতাংশ করলে প্রাথমিক শিক্ষায় সেটি বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে যে ৮০ শতাংশ পদোন্নতির বিধান ছিল, সেটা একটা জাল রায় বা প্রতারণার মাধ্যমে করা হয়েছিল। এ জন্যই আমরা বিভিন্ন পর্যায়ের মতামত ও বিচার-বিশ্লেষণ করে আগের বিধান থেকে সরে এসেছি। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন জানালে প্রাথমিক সচিব এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষার মাঠপর্যায়ে এটিইও পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারাই মূলত প্রাথমিক শিক্ষা মনিটরিংয়ের কাজ করেন। এ পদে যারা আসেন তারা দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী। আর এ কাজ করতে গিয়ে যারা অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তাদেরই টিইও পদে শতভাগ পদোন্নতি দেওয়া উচিত। কিন্তু মন্ত্রণালয় সেটা না করে উল্টো পথে হাঁটছে। এটিইও পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির। সরাসরি ও বিসিএসে নন-ক্যাডার থেকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন যদি তাদের পদোন্নতির সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে অনেকেই আর পদোন্নতি পাবেন না। এতে মেধাবীরা আর এই পদে আসবেন না।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকের অন্যান্য পদেও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদেরই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটিইওদের ক্ষেত্রেই শুধু ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ৮০ শতাংশের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়েছে। আবার উপজেলা শিক্ষা অফিসার থেকে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (এডিপিইও) এবং এডিপিইও থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) পদে শতভাগ পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়েছে।
জানা যায়, শুধু পদোন্নতিই নয়, এটিইওদের বেতন গ্রেডেও রয়েছে বৈষম্য। ১৯৯৪ সালের নিয়োগ বিধিমালায় বর্তমান এটিইও পদটি দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। সে সময়ে প্রধান শিক্ষক পদটি ১৪তম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষক পদটি ১৮তম গ্রেডে ছিল। প্রধান শিক্ষক পদটি তিন দফায় উন্নীত করার ফলে ২০১৪ সালে ১১তম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষক পদটি চার দফায় ২০২০ সালে ১৩তম গ্রেডভুক্ত হয়। একই সময়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদটি নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে, পিটিআই সুপারিনটেনড্যান্ট পদটি নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে এবং পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদটি নবম গ্রেডে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। কিন্তু ২৮ বছর ধরে সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার পদটি দশম গ্রেডেই রয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করে একাধিক এটিইও জানিয়েছেন, এটিইও এবং টিইও দুই পদেই শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো ব্যবধান নেই। টিইও পদে যারা সরাসরি নিয়োগ পান তাদের মূলত এটিইওদের কাছ থেকেই কাজ শিখতে হয়। এখন মন্ত্রণালয় যদি নবীন কর্মকর্তাদের টিইও পদে চায় তাহলে এটিইও পদে চাকরির অভিজ্ঞতা কমিয়ে পদোন্নতির সুযোগ আরও সহজ করে দিক।
তারা বলেন, শতভাগ পদোন্নতির দাবীতে ৩টি মামলা চলমান রয়েছে। তার মধ্যে ২টিতে স্থগিতাদেশ এবং ১টি মামলায় স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে ‘এক্সটেন্ডেড টিল ডিসপোজাল’।
বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করার জন্য নিয়োগবিধির সংশোধন করে অনেক মন্ত্রণালয়ে ১০ম গ্রেডের পদ হতে ৯ম গ্রেডের পদে পদোন্নতির সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেমন- ৯ম গ্রেডের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে ১০ম গ্রেডের পদ হতে ১০০ শতাংশ পদোন্নতি প্রদান করা হচ্ছে। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হতে রাজস্ব কর্মকর্তা পদে ১০০ শতাংশ, ৯ম গ্রেডের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে ১০ম/ নিম্নতম গ্রেডের পদ হতে ৯০ শতাংশ পদোন্নতি প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু অভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়া ও শিক্ষাগত যোগ্যতায় যোগদানের পরেও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) সমগ্র চাকরি জীবনে একটিমাত্র পদোন্নতির সুযোগও পাচ্ছে না। এছাড়া এই নিয়োগবিধি বাস্তবায়ন হলে সম-গ্রেডের (১০ম) পদে ১১-২০ বছর পরে যোগদান করেও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের (এটিইও) উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে পরিণত হবে।
বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএএস রবিউল ইসলাম বলেন, টিইও পদ ৫১৩টি আর এটিইও পদ ২ হাজার ৬০১টি। সরকার যদি শতভাগ পদোন্নতিও দিত তাহলেও প্রতি পাঁচজনে একজন মাত্র পদোন্নতির সুযোগ পেতেন। কিন্তু সেটা না করে উল্টো পদোন্নতির সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা যদি যোগ্যতার মাঠকাঠিতে পিছিয়ে না থাকি তাহলে কেন আমাদের প্রতি এ অবিচার করা হচ্ছে? পুরো চাকরিজীবনে একটি পদোন্নতি চাওয়া কি আমাদের অন্যায়?
রবিউল ইসলাম আরও বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে আমাদের কর্মকর্তারা সংক্ষুব্ধ। এ জন্যই প্রস্তাবিত নিয়োগবিধির ওপর ইতোমধ্যে শত শত কর্মকর্তা রিট করেছেন। এ ছাড়া অন্য এক মামলায় টিইও পদে সরাসরি নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন করলে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালত তাতে সম্মতি দিয়েছে। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও শিগগিরই কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। তারপরও বলব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আমাদের অভিভাবক। শতভাগ না হলেও তিনি যদি ৮০ শতাংশ পদোন্নতিও আমাদের দেন, তাহলে আমরা সব মামলা ও কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেব।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।