Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হাইকোর্টের নির্দেশনা একযুগেও বাস্তবায়ন হয়নি

শহীদ মিনারের পাশে জাদুঘর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই ’৭১ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্য স্বাধীনতা এসেছে। ’৫২ ভাষা আন্দোলন আমাদের জীবনে পরম পাওয়া। কিন্তু বছরে দিনটিকে একদিন স্মরণ করাই যেন রেওয়াজ হয়ে গেছে। বছর ঘুরে ভাষার মাস শুরু হলেই যেন কদর বাড়ে শহীদ মিনার ও ভাষাশহীদদের। বক্তৃতার মঞ্চে দেশ, ভাষা ও শহীদদের প্রতি ভালোবাসার ফুলঝুরি ছড়ালেও বাস্তবতা ভিন্ন। এক যুগের বেশি সময় আগে উচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের বাস্তবায়ন না দেখে। ১২ বছরের বেশি সময় আগে শহীদ মিনারের পাশে গ্রন্থাগারসহ জাদুঘর নির্মাণ, সেখানে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসসমৃদ্ধ তথ্যপঞ্জিকা রাখা, ভাষাসংগ্রামীদের প্রকৃত তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ ও মর্যাদা রক্ষাসহ ৮টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আদেশের এক যুগ অতিক্রম হলেও নির্মাণ হয়নি ভাষাশহীদদের স্মৃতি রক্ষায় ‘ভাষাশহীদ স্মৃতি জাদুঘর’। ২০১০ সালের ২৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে জাদুঘরটি নির্মাণের আদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
পাশাপাশি সেখানে সার্বক্ষণিক গাইড নিয়োগ, ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস সন্নিবেশ করে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ব্রুশিয়ার তৈরিসহ ৮ দফা নির্দেশনাও ছিল ওই আদেশে। কিন্তু এর দু’য়েকটি ছাড়া বাকিগুলো বাস্তবায়ন হয়নি এতো বছরেও।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, জাদুঘর তৈরির বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্ল্যানিংয়ে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে। সুতরাং সকলে মিলে বাস্তবায়ন করাটা হলো আসল কাজ। ওই নিরিখে কাজটি করা হলো মূলত জাদুঘরের জন্যে প্রথমত সেখানে কিছু ফিজিক্যাল প্ল্যানিং লাগবে। সেই বিষয়টি আমাদের মাস্টার প্ল্যানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্ল্যানে) শহীদ মিনার নিয়ে একটা ভাবনা আছে।
সরেজমিন ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহীদ মিনারের পাশে আদালতের নির্দেশনার আলোকে কোনো জাদুঘর এখনো স্থাপন করা হয়নি। বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য নেই কোনো তথ্যবহুল নির্দেশনা। দূর থেকে আসা সাধারণ দর্শনার্থীসহ কারও জন্য নেই কোনো শৌচাগার।
শহীদ মিনারে প্রবেশের ক্ষেত্রে জুতা নিয়ে কতটুকু যাওয়া যাবে তার জন্য নেই কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা। যদিও হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, মূল বেদিতে জুতা নিয়ে ওঠা যাবে না। কিন্তু মূল বেদি কোন সিঁড়ি থেকে শুরু তার দিক নির্দেশনা দেওয়া নেই। যার ফলে শহীদ মিনারে মূল বেদিতে অনেকেই জুতা নিয়েই প্রবেশ করছে।
আদালতের এক যুগ আগের রায়ের আলোকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা রক্ষায় আবারও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রায় বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিবাদীদের প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত।
আদালত অবমাননা মামলার শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ১৪ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন আদেশ দেন। আদালতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা রক্ষায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা রক্ষায় এইচআরপিবি’র দায়ের করা রিট মামলায় ২০১০ সালের ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট বেশ কিছু নির্দেশনাসহ আদেশ দেন। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে: ১. ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি রক্ষার্থে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। ওই এলাকায় পাহারার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাতে ভবঘুরে ঘোরাফেরা করতে বা অসামাজিক কার্যকলাপ চলতে না পারে। ২. মূল বেদিতে কোনো মিটিং-সমাবেশ থেকে বিরত রাখতে নির্দেশ প্রদান করা হলো। বেদির পাদদেশে মিটিং-সভা করতে বাধা-নিষেধ থাকবে না। ৩. ভাষা আন্দোলনে শহীদদের মরণোত্তর পদক ও জীবিতদের জাতীয় পদক প্রদান করতে হবে। ৪. যে সকল ভাষা সৈনিক জীবিত আছেন, তারা কেউ সরকারের কাছে কোনো আর্থিক সাহায্য চাইলে, তা প্রদান করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। ৫. বিশ্ববিদ্যালয় ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ ও মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। ৬. শহীদ মিনারের পাশে একটি লাইব্রেরিসহ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা এবং সেখানে ভাষা আন্দোলনের তথ্য সংক্রান্ত ব্রুশিয়ার রাখা, যাতে পর্যটকরা তথ্যাবলি জানতে পারেন। ৭. ভাষাসৈনিকদের প্রকৃত তালিকা তৈরির জন্য বিবাদীদের একটি কমিটি গঠন করা এবং ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে গেজেট প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হলো। ৮. ভাষাসৈনিকদের সকল রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো এবং সাধ্যমতো সরকারি সুযোগ নিশ্চিত করা।
ওই রায় সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে ২০২১ সালের ৪ মার্চ হাইকোর্টে আবেদন জানায় বাদীপক্ষ।
মামলার বিবাদীরা হলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুক্তিযুদ্ধ এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার, পূর্ত মন্ত্রণালয়ের চিফ আর্কিটেক্ট, আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট প্রমুখ।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এখন আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন বলতে বলতে হয়রান হয়ে গেছি। বাস্তবায়নতো অনেক কিছুই হয় না, বরং খুব সামান্য কতটুকু হয় সেটাই দেখার বিষয়। এরইমধ্যে তিন-চার বার আদালত অবমাননার অভিযোগ নিয়ে যাওয়ার পর প্রথম দুই বারই শহীদ মিনারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া উপরে সভাসমাবেশ না করার জন্যে বলেছেন আদালত। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলা হয়েছিল, সেটি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। সেগুলো রায় অনুসারে ঠিকমতোই চলছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আংশিক যেটা হয়েছে সেটাও বাস্তবায়ন করতে তৎকালীন সিটি করপোরেশনের মেয়রকে কন্টেম পিটিশন করা হয়েছিল। তারপরে সেটি আংশিক বাস্তবায়ন হয়।
ভাষাশহীদদের স্মরণে জাদুঘর ও গ্রন্থাগার তৈরির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এ বিষয়টি মাস্টার প্ল্যান পর্যায়ে আছে। যোগাযোগের এমন কোনো নোটিশতো আমি দেখছি না। তবে আলোচনায় আছে। ##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ