Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্তানের মুখ দেখা হলো না আনোয়ারের

গুলশানে আগুন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

অনাগত সন্তানের মুখটাও যে দেখে যেতে পারলেন না আনোয়ার। গুলশানের বহুতল ভবনে অগ্নিকান্ডের সময় আটকেপড়া বাসিন্দাদের মধ্যে কয়েকজন বাঁচাতে ভবন নিচে লাফিয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে একজন আনোয়ার হোসেন (৩০)। তিনি ভবনের সাততলা থেকে লাফিয়ে পড়েন। এরপর তার মৃত্যু হয়। ভোলার দৌলতখানের দিদারুল্লা গ্রামের মো. নুর ইসলামের ছেলে আনোয়ার। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় বাবুর্চি হিসেবে কাজ করতেন। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। আনোয়ারের স্ত্রী আমেনা বেগম গ্রামে থাকেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা। অগ্নিকাণ্ডে স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায় আমেনা। অনাগত সন্তানের মুখটাও যে দেখে যেতে পারলেন না তার স্বামী!
রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত বনানী এবং গুলশান। এই দুইটি এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের কোনও স্টেশন নেই। অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটলে আগুন নেভানোর জন্য পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো থেকে দমকল বাহিনী ছুটে যেতে হয়। আর যানজটসহ নানা কারণে দ্রুত পৌঁছাতে না পারলে অনেক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয় ভুক্তভোগীদের। এতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ফায়ার স্টেশন না থাকার পেছনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) দায়ী করছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অঞ্চলটিতে দেশি-বিদেশি সরকারি ও বেসরকারি অফিস-দফতর যেমন রয়েছে, তেমনি বসবাস করেন অনেক মানুষ। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পাশাপাশি বিদেশিরাও বসবাসের জন্য উপযুক্ত এবং নিরাপদ মনে করেন এই এলাকাটিকে। তাছাড়াও অনেক দেশের দূতাবাসের কার্যালয়ও এখানে। সবকিছু বিবেচনায় গুলশান-বনানী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা নেওয়া হয়ে থাকে সবসময়ই।
জানা গেছে, রোববার রাতে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ার পর রক্তাক্ত অবস্থায় আনোয়ারকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। তবে প্রথমে তার নাম-পরিচয় জানা যাচ্ছিল না। টেলিভিশনে ভবনে আগুন লাগার খবর দেখে তার ভাই জুলহাস ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে তিনি ও তার বোন ছুটে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সেখানে রাত ২টার দিকে ভাইয়ের মরদেহ শনাক্ত করা হয়।
জুলহাস সাংবাদিকদের বলেন, টিভিতে আগুন লাগার খবর দেখে ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে জানতে পারি, আমার ভাই লাফিয়ে নিচে পড়ে আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। পরে আমি ও আমার বোন হাসপাতালে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে ভাইকে আর জীবিত পাইনি। ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
তিনি বলেন, ভাই বিবিসির পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় বাবুর্চির কাজ করতেন। বাসার বাজার করতেন। ভাবি আমেনা বেগম গ্রামে আছেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা। সন্তানের মুখও দেখে যেতে পারলেন না ভাই। ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন বিসিবির পরিচালক ফাহিম সিনহার স্ত্রী সায়মা রহমান সিনহাও। তিনি ১২তলার ছাদ থেকে লাফ দেন। নিচে সুইমিংপুলে পড়েন সায়মা রহমান সিনহা। বর্তমানে তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। সেখানে আরও চারজন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ