Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গুলশানে ১২ তলা ভবনে ভয়াবহ আগুন

নিহত ১ জীবিত উদ্ধার ২৩ আশঙ্কাজনক ৪ জ্বলন্ত ফ্লোর থেকে লাফিয়ে বাঁচার চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের একটি বহুতল ভবনে গতকাল রোববার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে একজন নিহত হয়েছেন। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ২৩ জনকে। আগুন লাগার দীর্ঘ সময় পরেও বাড়ির প্রধান ফটকটি না খোলায় হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের পাশাপাশি, রেড ক্রিসেন্টকর্মী, স্কাউট সদস্যসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। পাশাপাশি বিমান বাহিনীর একটি টিমও অংশ নেয় উদ্ধার কাজে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা সদস্যও মোতায়েন করা হয়। আগুন থেকে প্রাণ বাঁচাতে ৭ তলা থেকে লফিয়ে পড়েন ১ নারীসহ ৪ জন। এদের মধ্যে একজনকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পানি সঙ্কটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে বিলম্ব হয়। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল, গুলশান ইউনাইটেডসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় গুলশান-২ মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাশের রোড নম্বর ১০৪-এর ২/এ হোল্ডিংস্থ ১২ তলা ভবনটির ৭ম তলায় হঠাৎ আগুন লাগে। খবর পেয়ে গুলশান ফায়ার স্টেশন থেকে প্রথমে ৩টি ইউনিট সেখানে পাঠানো হয়। আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়লে আগুনের ভয়াবহতায় পর্যায়ক্রমে ১৯টি ইউনিট পাঠায় ফায়ার সার্ভিস।
কিন্তু এরই মধ্যে আগুন ৮ম ও নবম তলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির পশ্চিম পাশে আগুনের সূত্রপাত হলে ৭ম তলার বিপরীত পাশে অবস্থান নেয় ওই ভবনের বাসিন্দারা। অনেকেই ৯-১০-১১ ও ১২ তলার ছাদে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটে যান। এদিকে ফায়ার কর্মীরা আসার পরেও বাড়ির প্রধান ফটকটি খোলা হয়নি। এরপর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসেও প্রধান ফটকটি খোলার আহবান জানান। কিন্তু কিছুতেই গেটটি না খোলায় উত্তেজিত ৪-৫শ’ জনতা গেটটি ভেঙে ফেলেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গেটটি বন্ধ থাকায় ফায়ার কর্মীদের আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়। অনেক চেষ্টা করেও মেইন গেটটি খোলানো যায়নি। ওদিকে ভবনটির ৭ম তলায় যখন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে, ধোয়ায় যখন আ”্ছন্ন চারদিক, ঠিক সেসময় ভবনটির ৭ম তলার বারান্দা থেকে এক নারীসহ ৪ জন লাফিয়ে পড়েন। তাদের একজনের শরীরে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। লাফিয়ে পড়া ব্যক্তিরা এর আগে নিজেদের বাঁচাতে আকুতি জানাচ্ছিলেন। তারা বারান্দার জানালা ভেঙে নিজেরাই লাফ দেন। তাদের অসহায়ত্ব দেখা ছাড়া কারো কিছু করার ছিল না। ফায়ার সার্ভিস বলছে, তারা প্রাথমিক পর্যায়ে যে পানি নিয়ে এসেছিলেন তা শেষ হয়ে যায়। খুব দ্রুতই পানির ব্যবস্থা করতে পারেননি। এছাড়া রাস্তা সরু থাকায় ঘটনাস্থলে ক্রেনবাহী গড়ি নিতেও বিলম্ব হয়।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ফায়ার কর্মীরা জানিয়েছেন, ভবনটি আবাসিক। আগুন লাগার সময় ভবনটির বিভিন্ন তলায় বাসিন্দারা আটকা পড়েন। আগুন লাগার পর বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। যে কারণে বহুতল ভবনটির লিফট অচল হয়ে পড়ে। ভবনটির বাসিন্দাদের মধ্যে ৭ তলার নিচে বসবাসরতরা নিচে নেমে আসতে সক্ষম হন। কিন্তু ভবনটির নবম তলায় একজন অ্যাজমা রোগী ছিলেন। তিনি নিচে নামার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শেষে ওপরের তলার বারান্দায় গিয়ে আশ্রয় নেন।
এদিকে ঘটনার পরই পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অন্য সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থলের নিরাপত্তা এবং ফায়ার কর্মীদের কাজের সুবিধার্থে ভবনটির সামনের সড়কটি ঘিরে রাখে। স্থানীয় বাসিন্দা-ব্যবসায়ীসহ বিপুল সংখ্যক লোক সেখানে ভীড় করে। যে কারণে ফায়ার ফাইটারদের কাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। তবে ফায়ার কর্মীদের সাথে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয় রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউটসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বিমান বাহিনীর একটি টিমও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। বিমান বাহিনী উদ্ধার অভিযানে তাদের হেলিকপ্টার ব্যবহার করে।
ঘটনার পর সেখানে ছুটে আসেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিসের কাজে সহযোগিতা করেন।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফায়ার কর্মীদের ১৯টি ইউনিটের ১১৪ জন কর্মীর অক্লান্ত চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ফায়ার কর্মীরা ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোর থেকে ১ নবজাতকসহ ২৩ জনকে উদ্ধার করে আনেন। এর মধ্যে ১২ জন নারীও রয়েছেন।
আবাসিক ওই ভবনে অনেকগুলো পরিবারের বসবাস। আগুন ছড়িয়ে পড়লে ভবনের বিভিন্ন তলায় তারা আটকা পড়েন। ভবন থেকে বের হওয়া শিরিন নামের একজন নারী জানান, তিনি নবম তলার ‘হোসেন সাহেবের’ ফ্ল্যাটে কাজ করেন। আগুন লাগার সময় তিনি এবং গৃহকর্ত্রী বাসায় ছিলেন।
১২ তলা ওই ভবনে ছয়টি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট রয়েছে বলে বাসিন্দারা জানালেন। ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম বিভাগের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলছেন, ভবনটির অবস্থান এমন জায়গায় যে আমাদের উঁচু মইগুলো নাগাল পাচ্ছে না। আরো এক ভবন পরে থেকে ফায়ার সার্ভিসের উঁচু মই দিয়ে ওপরের তলাগুলোতে পানি দেয়া হয়।
ভবনের উপরের দুটি ফ্লোরে একমি গ্রুপের ফাহিম সিনহার বাসা। ওই বাসার গৃহকর্মী রিনা ও আলোসহ সাতজন আগুন লাগার পরপরই নেমে পড়েন। রিনা বলেন, আমার পরেও ম্যাডাম শামা রহমানসহ তিনজন বাসায় ছিলেন। পরে ম্যাডাম ওপর থেকে লাফ দেন।
ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেছেন, আগুন লাগা ভবনটির ৭ থেকে ১২ তলা পর্যন্ত ছিলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আগুন নিয়ন্ত্রণে বিলম্ব হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পানি সরবরাহের সোর্স না থাকায় বিলম্ব হয়। আশপাশের বাসা থেকেও প্রয়োজনীয় পানি মেলেনি। পরে লেক থেকে পানির ব্যবস্থা করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, রাত ১০টার দিকে ৩০ বছর বয়সী একজন পুরুষের লাশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ