Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৪৫ সেকেন্ডের ভুমিকম্প বিশ্ববাসীর জন্য একটি বার্তা : জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০২ এএম

সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ভয় করুন। তিনি যেমন সকল কিছুর স্রষ্টা ঠিক তেমনি ধ্বংস করার ক্ষমতাও তারই হাতে। সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের নিয়ন্ত্রণ তারই হাতে। তাঁকে অস্বীকার করার কোনোই সুযোগ নেই। গতকাল রাজধানী মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে খতিব মুফতি মাওলানা মাহবুবুর রহমান এসব কথা বলেন।

সম্প্রতি তুরস্ক ও সিরিয়ার ভ‚মিকম্পের উদ্বৃতি দিয়ে খতিব সাহেব বলেন, একটু খেয়াল করলে দেখবেন মাত্র ৪৫ সেকেন্ডের ভ‚মিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার দৃশ্যপট কিভাবে পাল্টে গেলো। এই ৪৫ সেকেন্ডে কত হাজার মানুষ গৃহহারা হয়েছে, কতশত শিশু মাতা-পিতা হারিয়ে ইয়াতিম হয়েছে, কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, কত বিত্তবান ব্যবসায়ি বেকার হয়েছে। এটি পুরো বিশ্ববাসীর জন্য একটি বার্তা। তাহলো আল্লাহ সর্বক্ষমতার অধিকারী। আল্লাহর অনুগ্রহ ব্যতীত আমরা হাজারো চেষ্টা করলেও অর্জিত সম্পদ রক্ষণা-বেক্ষন করতে পারব না। চাইলেও আপনজনদের ধরে রাখতে পারব না। তবু কেন এতো প্রতিযোগিতা? কেন এতো প্রতিহিংসা? কেনই বা লোভ, অহংকার, সম্পদের মোহ আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আবার আমরা অনেকে তো স্রষ্টাকেই অস্বীকার করছি। দূর্বলদের ওপর জুলুম করছি অকাতরে। আপনার আমার সম্পদ, শক্তি, ক্ষমতা আল্লাহ কেন দিয়েছেন একটু ভাবুন। অন্যথায় সকল কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হতে হবে। দুনিয়ায় দাম্ভিতকা দেখিয়ে কেহই পরিত্রাণ পায়নি। আল্লাহর সাথে প্রতিযোগীতার দুঃসাহস দেখাতে যাবেন না। সাময়িক আনন্দ, তৃপ্তি ও বিজয়ের জন্য চিরস্থায়ী দুঃখ ও পরাজয়কে বরণ করতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এক মুহূর্তের জন্য ভুলে যাবেন না আমাদের প্রত্যাবর্তন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকটেই। অসীম ক্ষমতার অধিকারীর নিকট প্রত্যেক কৃতকর্মের জবাব দিতেই হবে। আমরা প্রতিদিন মানুষের মৃত্যু দেখি, দুর্ঘটনাসমূহ অবলোকন করি, দুঃসময়য়ের স্বাক্ষী হই, অথচ একবারও ভাবি না আমারও ঐ মানুষটির মতো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হবে। দুর্ঘটনা, দুঃসময় আমার জীবনে আসতে কতক্ষণ।

খতিব পবিত্র কোরআনের আয়াত উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, আকাশমÐলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই আল্লাহর। বস্তুতঃ তোমাদের মনে যা আছে তা প্রকাশ কর অথবা গোপন রাখ, আল্লাহ তার হিসেব তোমাদের নিকট থেকে গ্রহণ করবেন। অতঃপর যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে খুশি শাস্তি দেবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান (সূরা বাকারা : ২৮৪)। আমরা ক্ষমতার দাপটে আজ নিজের অস্তিত্ত¡কে ভুলতে বসেছি। ভুলতে বসেছি দুনিয়াবি সাময়িক ক্ষমতা নির্ধারণ করেন মহান রাব্বুল আলামীন। আল্লাহ বলেন, হে মানব স¤প্রদায়! তিনি (আল্লাহ) ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে অপসারিত করতে ও অপর (জাতি) কে আনয়ন করতে পারেন এবং আল্লাহ তা করতে সম্পূর্ণ সক্ষম (সূরা নিসা : ১৩৩)। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যুগে যুগে সীমালঙ্ঘনকারীদের ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখিন করেছেন। আমাদের কৃতকর্মের কারণে যেন এমন কোনো আজাব কিংবা গজব না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। ভ‚মিকম্প, জলোচ্ছ¡াস, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, দাবানল, খড়া ও শীতের তীব্রতা থেকে আপনি-আমি নিরাপদ তো? আজ লক্ষ্য করলে দেখা যায় সমাজে গোনাহের ছড়াছড়ি। সংস্কৃতির নামে অশ্লিলতা শিক্ষা দেয়া হয়। গান, বাজনা, নৃত্য দ্বারা পাঠ্যপুস্তক সন্নিবেশিত করা হয়। বেপর্দা, বেহায়াপনাকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি উৎসাহিত করা হয়। মাদকে সয়লাব সর্বত্র। জেনা, ব্যভিচার এখন মামুলি ব্যাপার। হত্যা, গুম, লুটপাট, জুলুম, নির্যাতনের সংবাদ যেন সাধারণ বিষয়। যুবসমাজ ইন্টারনেটের কালো থাবায় ইবাদাত থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখছে। এছাড়াও আরো কত গুনাহ তার হিসেব নেই। আল্লাহর গজব ও আজাবের জন্য যেন আমরা পুরো প্রস্তুত হয়ে আছি। সময় বেশি নেই প্রত্যাবর্তন করুন মহান স্রষ্টার দিকে। ভয় করুন তাঁর পক্ষ থেকে প্রেরিত ধ্বংসযজ্ঞকে। সকল প্রকার গুনাহ থেকে নিজেদের হেফাজত করুন। অন্যথায় পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই।

খতিব সাহেব তুরস্কের ভ‚মিকম্পে নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করে সকলকে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। চরমোনাই বার্ষিক মাহফিলে গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, ব্রিটিশরা এদেশের ওলামায়ে কেরামদের রাজনীতি থেকে দূরে রেখে গোলামীর জিঞ্জির পড়িয়ে দিয়েছে। রাজনীতি জায়েজ নেই এমন কথা মূলত ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের শেখানো বুলি। তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ক্ষমতায় যাবার জন্য নয় ইসলামকে ক্ষমতায় নেবার জন্য কাজ করছে। আজ জুমার নামাজে অংশ নেন বরিশালের প্রশাসনিক, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ।

মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সীরাতের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় ইসরা ও মেরাজ। মুমিনের আবেগ, অনুভ‚তি, ভক্তি ও বিশ্বাসের সাথে মিশে আছে ইসরা ও মেরাজের সত্যতা। বিশুদ্ধ মতে ইসরা ও মেরাজ নবুওয়াতের ১১তম বছরের ২৬ রজব দিবাগত রাতে সংঘটিত হয়েছিল। নবীজির (সা.) বয়স তখন ৫১ বছর। ইসরা অর্থ নৈশভ্রমণ, রাত্রিকালীন ভ্রমণ। মেরাজ অর্থ সিঁড়ি, সোপান, ঊর্ধ্বলোকে গমন ইত্যাদি। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, পবিত্র সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দাকে রাতের একটি অংশে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি, যাতে তাকে আমার কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখাই। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা। (সূরা বনি ইসরাঈল : আয়াত নং-১)। বস্তুত ইসরা হচ্ছে, মক্কা মুকাররমা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণকে যা রাতের একটি অংশে সংঘটিত হয়েছিল।

আর সেখান থেকে ঊর্ধ্বজগৎ পরিভ্রমণের বিস্তৃত অধ্যায়কে মেরাজ বলে। পবিত্র কোরআনে ইসরার কথা স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও মেরাজের কথা প্রচ্ছন্ন আকারে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, অবশ্যই তিনি (হযরত মুহাম্মদ সা.) তাকে জিবরাঈল (আ.)-কে আরও একবার দেখেছেন, সিদরাতুল মুনতাহার কাছে। তার পাশেই রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া। (সূরা নাজম : আয়াত নং-১৩-১৫)। ইসরা ও মেরাজের ব্যাপারে কোরআনে সংক্ষেপে এতটুকুই বলা হয়েছে। বিস্তারিত বিবরণ বর্ণিত হয়েছে হাদীসের নির্ভরযোগ্য কিতাবগুলোতে। বিশেষ করে প্রায় ত্রিশজনের মতো নির্ভরযোগ্য সাহাবী থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে মেরাজের ঘটনার সত্যতা ও বিবরণ বর্ণিত হয়েছে। ইসরা ও মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল সশরীরে জাগ্রত অবস্থায়। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ হলো কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের অস্বীকৃতি ও অবিশ্বাস। যদি আধ্যাত্মিক বা রূহানী ভাবে কিংবা স্বপ্নযোগে হওয়ার কথা বলা হতো, তাহলে তাদের অবিশ্বাস করার কোনো কারণ ছিল না। এবং এটা নিয়ে তারা শোরগোল করতো না। মেরাজের রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালাকে স্বচক্ষে দেখেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি আমার রব আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছি। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৫৮০)।

খতিব আরও বলেন, মেরাজের ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখা। শিরক থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহর সাথে বান্দার আবদিয়াত তথা দাসত্বের সম্পর্ক আরও মজবুত করা। নামাজের প্রতি যতœবান হওয়া। কেননা এটা মেরাজে লাভ করা উম্মতের জন্য নবীজির (সা.) তোহফা। আল্লাহ তায়ালা ও বান্দার হকের প্রতি যতœবান হওয়া এবং গীবত, পরনিন্দা থেকে বেঁচে থাকা। মানুষের সম্ভমহানি না করা। কাউকে অপদস্থ ও লাঞ্ছিত না করা। কারণ এটা অনেক বড় কবিরা গুনাহ। জান্নাতের ব্যাপারে আগ্রহী এবং জাহান্নামের ব্যাপারে ভীত থাকা। হাউজে কাউসারের প্রত্যাশী হওয়া। সব ধরনের গুনাহ, বিশেষ করে মদ, জেনা ও অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকা। যেই পবিত্র ও বরকতময় ভ‚মিতে নবীজি (সা.)-এর ইসরা ঘটেছে সেই বাইতুল মুকাদ্দাস ও জেরুজালেম আজ বেদখল। সেখানে প্রতিনিয়ত আগ্রাসী ইহুদিদের হাতে প্রবাহিত হয় আমার মুসলমান ভাইয়ের রক্ত। বাইতুল মুকাদ্দাস দখলমুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় ও নিয়ত রাখাও ইসরা ও মেরাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ