Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সময় থাকতে পদত্যাগ করুন, নতুবা রেহাই পাবেন না : সরকারকে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০২ এএম

দেশের জনগণের স্বার্থে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহŸান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সারাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। সময় থাকতে পদত্যাগ করুন, নতুবা রেহাই পাবেন না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন-বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না। তাহলে কেনো পাহাড়া দেন? এখনো সময় আছে, দেয়ালের লিখন পড়েন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গোপীবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচির পূর্বে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। পদযাত্রাটি গোপীবাগ থেকে শুরু হয়ে টিকাটুলি, দয়াগঞ্জ, রায়শাহ বাজার হয়ে নয়াবাজার গিয়ে শেষ হয়। বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি ও মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ও গুলিসহ দমন-নিপীড়নের প্রতিবাদে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তি, গণবিরোধী ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবীতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে জনগণ যাবে না দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগের দাবি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এখনও সময় আছে, পদত্যাগ করুন। সংসদ বিলুপ্ত করুন। নতুন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিন। একটাই দাবি এই সরকারের পদত্যাগ।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ গ্যাস পায় না, বিদ্যুৎ পায় না, শিক্ষা পায় না। আর সরকার তাদের এ অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। র‌্যাবকে ব্যবহার করেছে। সেই র‌্যাবকে স্যাংশন দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এতে আমরা খুশি হইনি। আমাদের দেশের একটা প্রতিষ্ঠানের ওপর স্যাংশন এসেছে, আমরা খুশি হবো কেন। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন এই স্যাংশন এল কেন? এই অবৈধ সরকার র‌্যাবকে জনগণের ওপর গুলি চালাতে নির্দেশ দিয়েছে। তাদের দিয়ে অবৈধ কাজ করিয়েছে। একইভাবে আজ তারা পুলিশকে ব্যবহার করছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি। এটাও আনন্দের কথা না। আমরা ‹৬৯ সালে, ৯০ সালে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। আজ গণতান্ত্রিক সম্মেলনে দাওয়াত পায় না। এমন এক দেশ তৈরি করেছে তারা, কোথাও কোনো ধরনের কোনো মূল্যবোধ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের তাÐব, দখল করছে, অন্যায় অত্যাচার করছে। আওয়ামী লীগ একটা সন্ত্রাসী দল। জনগণকে ভয় দেখিয়ে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেছে। এরা কখনোই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। এরা সবসময় ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। গত কয়েক মাসে তারা আমাদের ১০ জন নেতাকে হত্যা করেছে। বেআইনি ও গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারপরও আন্দোলন থামানো যাচ্ছে না। কারণ এই আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়, গণতন্ত্রকামী সকল জনতার।

বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন করছে এই দেশকে বাঁচানোর জন্য, এই দেশকে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য। আওয়ামী লীগ দেশকে আজ অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। কোথাও কোনো সফলতা পাচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদেশিদের বলেছেন- উনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে! তার এ বক্তব্যে মানুষ হাসে। আমাদের পরিস্কার কথা এ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। দেশের অনেক ক্ষতি করেছেন। শুধুমাত্র নিজ পরিবার ও নেতাদের লুটের কারণে দেশ আজ ফোকলা হয়ে গেছে। দেশের মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি, আপনাদের উন্নয়ন হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১৫ বছরে অনেক অত্যাচার হয়েছে আর নয়, জনগণকে বাসা থেকে বের হতে হবে জেগে উঠতে হবে। এরা দেশটিকে ফতুর বানিয়ে ফেলেছে। একদিকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলছে মানুষ গরিব হচ্ছে অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। আজকে এমন চুরি করেছেন ব্যাংকে টাকা নেই। ডলার নেই। এলসি খোলা যাচ্ছে না। চুরির একটা সীমা আছে। আপনারা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। দেশে গণলুট চলছে। আগে বর্গীরা যেভাবে আসতো, যারা বয়স্ক লোক আছেন তারা জানেন, বর্গীরা এসে সব লুট করে নিয়ে যেত। আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই বর্গীর দল। তারা যখনই ক্ষমতায় আসে লুট করে নিয়ে যায়।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, উনি (নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন) নিজেও জানে না উনি প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। তা তিনি আবার এক সাক্ষাৎকারেও বলেছেন। এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘটনাই প্রমাণ করে এই সংবিধান যেটা আছে তা দিয়ে আর এই দেশের সমস্যার সমাধান হবে না। সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আমরা যে ২৭ দফা দিয়েছি সেখানে সংবিধান সংশোধনের কথা বলেছি। আমরা বলেছি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, মন্ত্রীদের ক্ষমতা এগুলোতে ভারসাম্য আনতে হবে। সব মানুষের যেন অংশগ্রহণ থাকে সেই ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কীভাবে স্থায়ী করা যায় তার চিন্তা করতে হবে।

বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করেছেন, তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশান্তরি করে রেখেছেন। তাতে কি আন্দোলন বন্ধ করতে পেরেছেন? বিএনপি কি ভেঙে গেছে, বরং আরো শক্তিশালী হয়েছে। তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহŸায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রমুখ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এড. শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, কাজী আবুল বাশার, নাজিম উদ্দীন আলম, মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ