Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবারও বিপজ্জনক পর্যায়ে ঢাকার বায়ুদূষণ

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০২ এএম

ঢাকাবাসী গত দেড় মাস যাবৎ দূষিত বাতাসে নিশ্বাস নিচ্ছে। এ নগরী প্রায়ই বিশ্বের বায়ুদূষণের শহরের তালিকায় শীর্ষে থাকছে। বায়ু মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) এর তথ্য মতে, কখনো অস্বাস্থ্যকর কখনো খুবই অস্বাস্থ্যকর আবার কখনো বা বিপজ্জনক পর্যায়ে থাকছে। একিউআই স্কোর ৩৩৫ নিয়ে গতকালও দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষেস্থানে রয়েছে ঢাকা। বায়ু মান অনুযায়ী ৩৩৫ স্কোরকে বিপজ্জনক ধরা হয়। একিউআই স্কোর ২৫৮ নিয়ে ঢাকার পরে অবস্থান করছে ভারতের রাজধানী দিল্লি এবং ২১৩ স্কোর নিয়ে দূষিত শহরের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। এছাড়া ১৮৮ স্কোর নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে আফগানিস্তানের কাবুল এবং স্কোর ১৮৭ নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতা। এর পরের স্থানগুলোতে রয়েছে যথাক্রমে চীনের বেইজিং, ভারতের মুম্বাই, ভিয়েতনামের হ্যানয়, চীনের উহান এবং উগান্ডার কাম্পালা।
একিউআই স্কোরকে ১০১ থেকে ২০০-এর মধ্যে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। অন্যদিকে ৩০১ থেকে ৪০০-এর এর মধ্যে থাকা একিউআই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ অর্থাৎ বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হয়। যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
চলতি বছরের শুরু থেকে ঢাকা প্রায়দিনই দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষে থাকছে। বলা যায় গত মাসে এবং চলতি মাসে একদিনও বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারেনি ঢাকাবাসী। প্রতিদিনই বিষে ভরা বাতাস নিশ্বাস নিচ্ছেন এ নগরবাসী। তাতে বাড়ছে স্বাস্থ্যগত সমস্যাও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণ শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন বায়ুদূষণের মধ্যে থাকলে বা এরকম পরিবেশে কাজ করলে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হৃদরোগের দেখা দিতে পারে। এমনকি সেটা মস্তিষ্ক, লিভার বা কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাও তৈরি করতে পারে। বিশ্বব্যাপী যেসব অসংক্রামক রোগে মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে তার অধিকাংশই বায়ু দূষণজনিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী বায়ু দূষণের কারণে বছরে ৪২ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়, বায়ুদূষণে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু কমেছে ৭ বছর। আর রাজধানীবাসীর গড় আয়ু কমছে ৮ বছর করে। ওই গবেষণায় বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৪টি জেলারই বায়ুর মান আদর্শ মাত্রার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে।
অপরিকল্পিত নগরায়ন, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন ও শিল্পকারখানা স্থাপনের ফলে রাজধানীর বায়ূদূষণ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ঢাকার বাতাসে সিসাজনিত দূষণ জাতিসংঘের গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে কমপক্ষে হাজার গুণ হওয়ায় ঢাকায় বসবাসকারী মানুষ শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু শ্বাসকষ্টজনিত জটিল সমস্যার শিকার হয় এই বায়ুদূষণে। ইউনিসেফ বলছে, বিশ্বে ৩০ কোটি শিশু দূষিত বায়ু অধ্যুষিত এলাকায় বাস করে, যার মধ্যে ২২ কোটিই দক্ষিণ এশিয়ায়।
বায়ু দূষণ রোধে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, দূষণের মাধ্যমে মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। বায়ু দূষণের হাত থেকে মানুষকে বাঁচান। আদালত বলেন, উচ্চ আদালত বায়ু দূষণ রোধে যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার ছিটেফোঁটাও বাস্তবায়ন হয়নি। অবৈধ ইটভাটাও বন্ধ করা হয়নি। দূষণের মাধ্যমে মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। অনেকে বিদেশে থাকেন, তাদের ছেলে মেয়েরাও বিদেশে থাকে। ঢাকার বায়ু দূষণে তাদের কিছু আসে যায় না। কিন্তু আমরা তো এ দেশেই থাকি। এ দেশেই থাকতে হবে। বায়ু দূষণের হাত থেকে মানুষকে বাঁচান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ