Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ছুটির দিনে পাঠকের চেয়ে দর্শনার্থী বেশি

রাহাদ উদ্দিন | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০২ এএম

দেখতে দেখতে ১৭ দিন পার করলো বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা। গতকাল শুক্রবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ছুটির দিনে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয় ও অফিস আদালত বন্ধ থাকায় সকাল থেকেই বাবা মায়ের হাত ধরে মেলায় আসতে শুরু করে শিশুরা। বেলা গড়াতেই শিশু কিশোর বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষের আগমনে মেলায় দেখা যায় জনস্রোত। পাঠক, দর্শনার্থী ও লেখকদের ভীড়ে প্রাণ ফিরে পায় মেলা। তবে প্রকাশকের দাবি এদিন সত্যিকারের পাঠকের চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যাটাই ছিল বেশি। তাদের মতে, মেলায় ভীড় দেখা গেলেও যারা মেলায় আসছেন তারা বই কিনতে নয়, অধিকাংশ ঘুরতে আসছেন।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় ধুলায় ধূসরিত ছিল গতকালের মেলা। হাজারো মানুষের ভীড়ে পছন্দের লেখককেও খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে বইপ্রেমীদের। আবার এরই মাঝে স্বস্তি খুঁজে পেয়েছেন অনেকেই। বন্ধু বান্ধব নিয়ে মেলায় এসে সেলফি তোলায় ব্যস্ত দেখা গেছে তরুণদের। কেউ বা দুই একটা বইও কিনেছেন এ দোকান ও দোকান ঘুরে। তবে সামগ্রিক বিচারে পাঠকের চেয়ে দর্শনার্থীই বেশি ছিল বলে জানান প্রকাশনা সংস্থাগুলো।
মেলার বাংলা একাডেমি অংশে স্টল বসিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মাতৃভূমি প্রকাশনীতে গিয়ে দেখা যায় সংগঠনের নেতাকর্মীও মেলায় আগত দর্শনার্থীদের ভীড়। ভেতরে বসে পছন্দের বইগুলোতে সাইন করে কর্মীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। প্রকাশনীর দায়িত্বে থাকা ছাত্রলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম শফু বলেন, ভাইয়েরা আসলে স্টলে অনেক ভীড় হয়। তখন অনেকেই বই কিনে নেয় কিন্তু অন্য সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সেলফি তোলার হিড়িক। বই খুব একটা কিনছেন না মেলায় আগতরা।
গতকাল মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, স্ত্রী, সন্তান, বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জনদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন নানা বয়সী মানুষ। এসব মানুষের ভীড়ে দেখা হয় গাজীপুর থেকে আসা সরকারি কর্মকর্তা আসিফ আকবরের সাথে। ছোট মেয়ে মারিয়া ও স্ত্রীকে নিয়ে এ বছরের জন্য প্রথমবার এসেছেন মেলায়। তিনি বলেন, প্রতিবছরই আসার চেষ্টা করি প্রাণের মেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে আজ থেকে ৮ বছর আগে স্নাতকোত্তর শেষ করে এখন একটি সরকারি অফিসের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন বলে জানান আসিফ। বলেন, বইমেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাই না কখনোই। প্রযুক্তির এই যুগ আমাদের সন্তানদের বইয়ের থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। তাই ভবিষ্যত প্রজন্মকে মেলার সাথে কানেক্টেড রাখাটা এখন অনেক বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্টলে স্টলে ঘুরে দেখা যায় অনেকেই ৫/৬ টা বই দেখে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ১ কিংবা ২টা বই। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মেলায় পাঠক বাড়তে থাকলেও তাদের খুব বেশি বই কিনতে দেখা যায়নি। পাঠকদের মধ্যে অনেকে ক্যাটালগ নিতে, আবার অনেকে দেখতে বা ঘুরতে আসছেন। তবে সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ ভালোই বিক্রি হয়েছে বলে জানান তারা।
গতকাল সকাল ১১টা থেকে ১ টা পর্যন্ত মেলার শিশু কর্ণারে ছিল শিশুপ্রহর। এসময় শিশুদের জন্য আয়োজন করা হয় জনপ্রিয় শিশুতোষ ধারাবাহিক ১, ২, ৩ সিসিমপুরের শো। অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় চরিত্র হালুম আর টুকটুকিদের সাথে নেচে গেয়ে সময় কাটিয়েছে শিশুরা। অনেকেই মা বাবার হাত ধরে এ দোকান ও দোকান ঘুরে সংগ্রহ করেছেন পছন্দের সব শিশুতোষ বই।
গতকাল শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার ১৭তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ২৭৬টি। সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব। বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মহীবুল আজিজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অনিরুদ্ধ কাহালি ও মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আকরম হোসেন।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মাসুদুজ্জামান, ভাগ্যধন বড়ুয়া, ম্যারিনা নাসরিন এবং ইউসুফ মুহম্মদ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন ফরিদ আহমদ দুলাল, ফেরদৌস নাহার, তপন বাগচী, জাহিদ মুস্তাফা, আফরোজা সোমা এবং আশরাফ জুয়েল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সুকান্ত গুপ্ত, রুবিনা আজাদ এবং মো. শওকত আলী। এছাড়া ছিল ফরিদ আহমদ দুলাল রচিত এবং নাট্যাঙ্গন নাট্যপরিবার নিবেদিত নাটক ‘উন্মোচন রহস্য’ এবং রুবিনা আজাদের পরিচালনায় ‘উদয় দিগঙ্গন’-এর শিল্পীদের পরিবেশনা।
আজকের সময়সূচি: আজ শনিবার বইমেলার ১৮তম দিন। মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে। সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন গোলাম মুস্তাফা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মোহিত কামাল ও রাজীব কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সুব্রত বড়ুয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ