Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার ৮১তম জন্মবার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া (সুধা মিয়া)’র আজ বৃহস্পতিবার ৮১তম জন্মবার্ষিকী। বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী বরেণ্য এই পরমাণু বিজ্ঞানী ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার লালদিঘী ফতেহপুর গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ৬৭ বছর বয়সে তিনি ২০০৯ সালের ৯ মে রাজধানী ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পর তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে তাঁর বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।

যথাযোগ্য মর্যাদায় ড. ওয়াজেদ মিয়ার জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে রংপুর জেলা ও পীরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন সংগঠন ও পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর জন্মস্থান পীরগঞ্জ উপজেলার লালদিঘী ফতেহপুর গ্রামে এবং রংপুর মহানগরীতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে।

ড. ওয়াজেদ স্মৃতি সংসদ (ডিডবি¬উএসএস), ড. ওয়াজেদ ফাউন্ডেশন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ড. ওয়াজেদ মিয়া’র পরিবার, রংপুর জেলা ও পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনগুলো তাঁর কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, কবর জিয়ারত, মিলাদ মাহফিল ও গরীবদের মাঝে খাবার বিতরণ এবং স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানীর ভাতিজা, পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম জানান, বৃহস্পতিবার সকালে লালদিঘী ফতেহপুর গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে জন্মবার্ষিকী পালন কর্মসূচি শুরু হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি তাঁর সমগ্র কর্মজীবনে মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা দিয়ে দেশ, জাতি ও জনগণের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করেছেন।

পিতা মরহুম আব্দুল কাদের মিয়া ও মাতা মরহুমা ময়জুন্নেসার চার পুত্র ও তিন কন্যার মধ্যে তিনি ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী ও পীরগঞ্জ থানার হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন শেষে তিনি ১৯৫২ সালে রংপুর জিলা স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে এই স্কুল থেকে ডিস্টিংশনসহ ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে বোর্ডের মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৬১-’৬২ শিক্ষা বছরের জন্য হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
তিনি ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার ও কারাবরণ করেন। ১৯৬৩ সালের ১ এপ্রিল তিনি তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৬৩-’৬৪ শিক্ষা বছরে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ডিপে¬ামা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের ‘ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলে তাকে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকার আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে পদায়ন করা হয়। তিনি ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

১৯৬৯ সালে ইতালির ট্রিয়েস্টের আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তাকে এসোসিয়েটশিপ প্রদান করে। তিনি ১৯৬৯-’৭৩ ও ১৯৮৩ সালে ওই গবেষণা কেন্দ্রে প্রতিবার ছয় মাস ধরে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬৯ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের ড্যারেসবেরি নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির কার্লসরবয়ে শহরের ‘আণবিক গবেষণা কেন্দ্রে আণবিক রিঅ্যাক্টর বিজ্ঞানে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লি¬র ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি অনেক জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর অনেক গবেষণামূলক ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় এবং সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকান্ডের পর দীর্ঘ সাত বছর নির্বাসিত জীবন কাটান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পদার্থ বিজ্ঞান, ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্রদের জন্য দু’টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে এবং ৩২০ পৃষ্ঠার ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়।



 

Show all comments
  • Saiful Islam ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:৩২ এএম says : 0
    শুভ জন্মদিন
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:৩৩ এএম says : 0
    কোন কর্মসূচি নাই, আপনি জাতির কেউ না,অভাগা জাতি গুণিজনের কদর বুঝল না।
    Total Reply(0) Reply
  • Munna Jamal ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:৩৩ এএম says : 0
    Happy birthday to you sir
    Total Reply(0) Reply
  • মাওঃসাইফুল ইসলাম পারভেজ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:৩৩ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ পাক এই গুনী ব্যাক্তিকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ