পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত’। কণ্ঠশিল্পী লগ্নজিতা চক্রবর্তীর গান ‘বসন্ত এসে গেছে’। সত্যিই বসন্ত এসে গেছে। গতকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। শীতের রিক্ততা ভুলিয়ে আবহমান বাংলার প্রকৃতিতে ফাগুনের ছোঁয়া, আগুনরাঙা বসন্তের সুর। গাছে গাছে ফুটেছে রক্ত শিমুল-পলাশ, কৃষ্ণচ‚ড়া, রাধাচ‚ড়া, নাগলিঙ্গম। গত কয়েক বছর ধরে এই ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেনটাইন ডে (বিশ্ব ভালোবাসা দিবস) হিসেবে পালন করছে কিছু বিকৃত সংস্কৃতিমনা মানুষ। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির ধারক-বাহকরা বাংলাদেশের তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী এবং শিক্ষার্থীদের বেলেল্লাপনায় মেতে উঠতে উৎসাহী করে তোলে। দেশের কিছু গণমাধ্যম সেটা ফলাও করে প্রচার করে সারাদেশে বেলেল্লাপনা ছড়িয়ে দেয় পরিকল্পিত ভাবে। গতকাল কিছু টিভি চ্যানেলে বেলেল্লাপনার সেই তথাকথিত ‘ভালবাসা দিবস’ নিয়ে প্রচারণা অনুষ্ঠান প্রচার হলেও রাজধানীর সাধারণ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বেশি আগ্রহ দেখা যায়নি।
ভোরেই ছেলে-মেয়ে এবং শিশুরা পহেলা ফাল্গুনে বাসন্তি রংয়ের শাড়ি পড়ে মাথায় ফুল গুজে বের হলেও তথাকথিত ভালোবাসা দিবস পালনের নামে বেলেল্লাপনা করতে দেখা যায় হাতে গোনা কিছু মানুষকে। ইসলামবিদ্বেষী তথাকথিত প্রগতিশীল সংস্কৃতি সেবীদের আনাগোনাও কম চোখে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এদেশের মানুষ ধর্মভীরু। তরুণ-তরুণীরা দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছেন বিশ্বভালোবাসা দিবস নামের অপসংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসানো বেমানান। ফলে সচেতন ভাবে তরুণ-তরুণীরা বসন্ত উৎসব পালন করলেও ভালোবাসা দিবসের নামে বেলেল্লাপনায় গা-ভাসানোর চেতনা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে গতকাল গানে গানে বসন্তবরণ করার উৎসবে মেতেছিল সবাই। সকালে শুরু হয় বসন্তের এ অনুষ্ঠান। সারেঙ্গি বাদন ও শাস্ত্রীয় সংগীতে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। রাগ-সুর, গান আর নৃত্যের তালে তালে বসন্তকে অভিবাদন জানায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। হলুদশাড়ি, রঙিনপাঞ্জাবি আর ফুলের মালা পরে ফাগুনের প্রথম দিনকে স্বাগত জানান তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ।
বসন্ত উৎসবে আসা শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ, সবার পোশাকেও ছিল বাসন্তী সাজ। বকুলতলা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে চষে বেড়াচ্ছেন তারা। টিএসসি, হাকিম চত্বর, লাইব্রেরি, অপরাজেয় বাংলা, বিজনেস ফ্যাকাল্টি, শ্যাডো, কার্জন হল, এনেক্স ভবন, শহীদ মিনারসহ পুরো এলাকায় বাসন্তী সাজে দেখা গেছে অধিকাংশকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষেও ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বাসন্তী সাজে দেখা গেছে। চারুকলার বকুলতলা ছাড়াও পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক এবং উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরণি রোডের বঙ্গবন্ধু উন্মুক্ত মঞ্চে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়াও বসন্ত উৎসব-১৪২৯ আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি। বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চে শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য শিল্পীরাও অংশ নেন। তাদের সংগীত, কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, নৃত্যের পাশাপাশি বসন্তের পোশাক প্রদর্শনী ও কোরিওগ্রাফির নান্দনিক আয়োজন করা হয়।
হলুদে প্রকৃতির ছোঁয়া শিশু-কিশোর-তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সি মানুষের মনে লাগলেও তথাকথিত বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ছোঁয়া খুব কমই লেগেছে। আগে দেখা যেত প্রিয়জন বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথাও বেরিয়ে আসার মোক্ষম সময়। তবে সেই পরিকল্পনায় ভাটা পড়েছে রাজধানীবাসীর। তারই প্রভাব দেখা গেছে রাজধানীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র হাতিরঝিলে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত হাতিরঝিলে অবস্থান করে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা গেছে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাপ বাড়তে দেখা যায়। সন্ধ্যার মধ্যে সেই সংখ্যা আরো কিছুটা বেড়ে যায়।
এসময় হাতিরঝিলের প্রধান আকর্ষণ নৌ-ভ্রমণেও তেমন চাপ দেখা যায়নি। গত বছর ভালোবাসা দিবসে যেখানে দীর্ঘক্ষণ নৌকায় ওঠার টিকিট না পেয়ে অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন, সেখানে এবছর অনায়াসে নৌকায় ভ্রমণ করছেন দর্শনার্থীরা। তবে বাসন্তী শাড়ি পড়ে হাতিরঝিলে আসা অধিকাংশ মানুষ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে দেখা যায়। গল্প-আড্ডায় মশগুল বিভিন্ন বয়সি মানুষ। ফুটপাতে ছোটাছুটি করতে দেখা যায় শিশুদের। ঘুরতে আসা সবার চোখেমুখে আনন্দের ছাপ পরিলক্ষিত হয়।
হাতিরঝিলে তরুণীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বসন্তের সাজে হলুদ শাড়িতে সেজেগুজে প্রিয়জনের সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন তারা। শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং করে পরেছেন বাহারী গয়না। মাথায় ফুলের রিংতোড়া, খোঁপায় লাল গোলাপ। কেউ কেউ আবার খোঁপায় পরেছেন বেলির মালা। তরুণদের পরনে ছিল বাহারি রঙের পাঞ্জাবি। গল্পের পাশাপাশি বিভিন্ন স্পটে ছবি-সেলফি তোলায় ব্যস্ত তারা। অনেককে আবার টিকটক ভিডিও বানাতে ব্যস্ত দেখা যায়। তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা পহেলা বসন্তকে বরণ করতে এসেছেন, ‘বিশ্বভালোবাসা দিবস’ নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। সৈয়দা সাবিনা ইয়াসমিন নামের একজন তরুণী বললেন, আমাদের কাছে বছরের প্রতিটি দিন ‘ভালোবাসা দিবস’। পশ্চিমারা একটি দিবসকে ‘ভ্যালেনটাইন ডে’ তকমা দিয়ে সারাবিশ্বে অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে দিয়েছে। সেই অপসংস্কৃতি কোলকাতার দাদাদের হাত ধরে বাংলাদেশে এসেছে। ইসলাম এমন বেলেল্লাপনাকে প্রশ্রয় দেয় না। একটি ব্রীজে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন দুই বান্ধবী তাজরুবা ও দীপ্তি। তারা বলেন, কষ্ট করে হলেও হাতিরঝিলে এসেছি। কারণ ফাগুন উপভোগের সেরা জায়গা এটা। এখানের মতো স্নিগ্ধ পরিবেশ আর কোথাও মেলে না। আমাদের অন্যকিছু মনে করবেন না।
হাতিরঝিলে দীর্ঘদিন ধরে মুড়ি বিক্রি করছেন আব্বাস মিয়া। তিনি বলেন, আজ লোকজন তুলনামূলক কম। অভাবের কারণে মানুষ ঘোরাফেরা ছেড়ে দিচ্ছে। তবে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে শালীনতা দেখা যাচ্ছে। আগে ভালবাসা দিবসের নামে তরুণ-তরুণীরা ঢলাঢলি করত; এবার সেটা দেখা যাচ্ছে না।
অনুসন্ধান করে দেখা গেল, গণমাধ্যম তথা টেলিভিশনগুলোতে তথাকথিত ‘ভ্যালেনটাইন ডে’ নিয়ে বেশি মাতামাতি। সাধারণ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সেটা খুবই কম। শাহবাগের একাধিক ফুল বিক্রেতা জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে ফুলের বিক্রি বেশি। বিশেষ করে গোলাপের চাহিদা অন্য সময়ের চেয়ে শতগুন বেশি। কিন্তু এবার ততটা চাহিদা বাড়েনি। তবে ফুলের বিক্রি ভাল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।