Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খুলবে শিল্পায়নের দুয়ার

৪৩ বছর পর ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ

ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

চার দশকের বেশি সময় পর ফের চালু হচ্ছে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর। ১৯৪০ সালে নির্মিত বিমানবন্দরটি লোকসানের অজুহাতে ১৯৮১ সালে বন্ধ করে দেয়া হয়। দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটানোর পর আকাশ পথের বিস্তৃতি বাড়াতে দেশের বন্ধ বিমানবন্দরগুরো পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করা হবে বলে জানা গেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বিমানবন্দর সম্পর্কে আমি মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু হলে এই এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে তা বিশাল ভ‚মিকা রাখবে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। শেষ জেলা প্রশাসন সম্মেলনে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর অবশেষে চালু হচ্ছে এমন খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা জেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দের জোয়ার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্লাটফর্মে আসতে থাকে অভিনন্দন। তবে খবরের সত্যতা কতটুকুু জানতে চায় ঠাকুরগাঁওয়ের আপামর জনতা। এলাকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিমানবন্দরটি চালু হলে মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্য বেড়ে যাবে। পঞ্চগড় এখন চা’চাষের জন্য বিখ্যাত। কাছাকাছি পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ও লালমনির হাটের বুড়িমারি স্থলবন্দর হওয়ায় ঢাকার অনেকে শিল্পপতি জমি ক্রয় করেছেন। বিমানবন্দর চালু হলে তারা নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন। এতে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং শিল্প ও ব্যবসার বিকাশ ঘটবে। পাশাপাশি নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ ও বাণিজ্যের অন্যতম হাব হিসেবেও গড়ে উঠবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লি. এর এমডি শফিউল আজিম বলেন, আমাদের বেশ কিছু পুরাতন বিমানবন্দরে এক সময় বিমান চলাচল করতো সেগুলো চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, পাবনার ইশ্বরদী, খানজাহান আলী, কুমিল্লার নাম রয়েছে। এগুলোর কাজ শুরুর জন্য ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে।

প্রায় ৪৩ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা বিমানবন্দরটি ১৯৪০ সালে ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ সড়কের পাশে মাদারগঞ্জ এলাকায় ৫৫০ একর জমির উপর নির্মিত করে বৃটিশ সরকার। স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এর যোগাযোগ ছিলো। কিন্তু ১৯৮০-৮১ সালে লোকসানের অজুহাত এ বিমান বন্দরটিকে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় জনগণের দাবির মুখে ১৯৯৪ সালে ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে রানওয়ে মেরামতসহ কিছু সংস্কার কাজ করা হয়। টাকা খরচ হয় ঠিকই, কিন্তু বিমানবন্দর আর চালু হয়নি।

পরবর্তীতে বিগত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে এ বিমান বন্দরটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই উদ্যোগও ভেস্তে যায়। ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রæয়ারি তৎকালীন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ঠাকুরগাঁওয়ে এসে বিমানবন্দরটি পরিদর্শন করে ১ বছরের মধ্যে তা চালু করার আশ্বাস দেন। তিনিই আবার পরের বছর ২০১৭ সালর ১১ এপ্রিল ঠাকুরগাঁওয়ে এসে বলেন, বিমানবন্দর চালু করা সম্ভব নয়।
বর্তমান বিমানবন্দরের রানওয়েটি স্থানীয় গ্রামবাসী যে যার মতো করে ব্যবহার করছে। সারা বছরই ধান, গম ও ভুট্টাসহ গৃহস্থালি পণ্য সামগ্রী শুকানোর কাজ চলছে রানওয়ের মাঝে। ভুট্টা মাড়াইয়ের মেশিন এখানে বসিয়ে মাড়াইয়ের কাজ চলছে।

বছরের বিভিন্ন বিশেষ দিনগুলো ঈদ, পূজাতে শিশু ও তরুণ-তরুণীরা রানওয়েটি বিনোদনের জায়গা হিসেবেও বেছে নিয়েছেন। বিমান বন্দরটি চালু হলে এ এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখবেন।
বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে ডা. এস.কে জাকারিয়া বলেন, বিমানবন্দরটি চালু হলে আমরা যারা ঢাকাতে বিমানে চলাচল করি তাদের জন্য প্রায় চার ঘণ্টা সেভ হবে এবং বাড়তি প্রায় ৪ থেকে ৫০০ টাকা বেঁচে যাবে। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু হলে এই এলাকার মানুষ সকালে ঢাকাতে গিয়ে কাজ সেরে আবার রাতের ফ্লাইটে ফিরে আসতে পারবে।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে তত্ত¡াবধায়ক ডাক্তার ফিরোজ জামান জুয়েল বলেন, আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ের সময়ের দাবি, ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করুন। তবে আমরা বিশ্বাস করি ঠাকুরগাঁও বিমান বন্দরটি চালু হলে যারা দ্রæত চিকিৎসার জন্য ঢাকা যান বিশেষ করে তাদের সময় অপচয় হবে না এবং খুব তাড়াতাড়ি তারা যেতে পারবেন। বিমানবন্দরটি চালু থাকলে আমরা চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা পাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এ জেলার মানুষ অনেক বড় বড় চিকিৎসকও পাবেন বলে আমি মনে করছি। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ থাকবে তারা যেন বিষয়টি আমলে নিয়ে এটি চালুর ব্যবস্থা করেন।

জেলা চেম্বার অফ কমার্সের সদস্য শাওন চৌধুরী বলেন, দেশি-বিদেশি কোনো বড় বিনিয়োগকারী হাজার হাজার কোটি টাকা শিল্প খাতে বিনিয়োগ করতে চাইলে সবার আগে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেবে। কিন্তু উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলাটিতে শিল্পের বিকাশে প্রধান বাধা যোগাযোগ ব্যবস্থা। এখানে বিমানবন্দরটি চালু হলে শিল্পের বিকাশ ঘটবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যার ফল ভোগ করবে এ অঞ্চলের প্রত্যেক পেশার মানুষ।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কুরাইশী জানান, বিমানবন্দরটি চালু করার জন্য তিনি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন সভা ও সমাবেশে এ অঞ্চলের মানুষের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিমানবন্দরটি চালুর দাবিও তুলেছেন। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বন্ধ বিমানবন্দরটি ফের চালু হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে ঠাকুরগাঁওবাসীর দাবি এবং সম্ভাবনার দিকটি বিবেচনায় এনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন এমনটিই আশা করছে জেলার সর্বস্তরের মানুষ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ