পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খরায় পুড়ছে ৬ জেলাসহ পুরো উত্তর জনপদ। শুকিয়ে গেছে খালবিল, নদী নালা। খরিফ ফসলসহ বোরো ধানের চাষাবাদের খরচ বাড়ছে। রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর আবহাওয়া অফিসের রিডিং অনুযায়ী ডিসেম্বরে মাত্র একবার ২ দশমিক ০৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। যেটা মাটির ধূলিকণা ভেজানোর জন্যও যথেষ্ট ছিলনা।
দেশের মানুষের প্রধানতম খাদ্যসামগ্রী চালের উৎপাদনে বড় ধাক্কার আশঙ্কা হচ্ছে প্রবলতর। কেবল এ বছরই নয়, গত এক দশক জুড়েই উত্তরে কমছে বৃষ্টির স্বাভাবিক বর্ষণের হার। ফলে বোরো মৌসুমেই শুধু নয় এমনকি বর্ষাকালেও সেচ ব্যবস্থা নির্ভরশীল হয়ে উঠছে ভ‚গর্ভস্থ পানির ওপর। ফলে প্রতি বছর নেমে যাচ্ছে ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর।
জাতীয় ও স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, বরেন্দ্র জনপদসহ উত্তরাঞ্চলে ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর বিপজ্জনকভাবে নিচে নেমে গিয়ে ভ্যাকুয়াম বা শূণ্যতার সৃষ্টি হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে তা মারাত্মক বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে বিপজ্জনক মাত্রায় ভ‚মিকম্প হলে মারাত্মক ভ‚মি ধ্বসের ফলে কৃষি ব্যবস্থাপনায় বিপর্যয় ঘটাতে পারে ।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত থেকে প্রবাহমান নদ-নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা এবং একই পাইকারীভাবে ভ‚গর্ভস্থ পানির ব্যবহার রোধ করা না গেলে পূর্বে কুড়িগ্রাম থেকে পশ্চিমে রাজশাহী, কুষ্টিয়া এবং উত্তরে পঞ্চগড় থেকে বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মহাবিপর্যয়ের কারণ ঘটাবে। তাদের সুপারিশ হল সরকারকে ভারত থেকে উত্তর সীমান্তে প্রবেশ করা নদীর পানি প্রবাহের ন্যায্য প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং একই সাথে মৌসুমি বৃষ্টি এবং বর্ষা মওসুমে টইটম্বুর নদ-নদীসমূহের তথা ভূউপরিস্থত পানির ব্যবহার বাড়ানোর আর কোন বিকল্প নেই। এদিকে একটানা অনাবৃষ্টির ফলশ্রæতিতে উত্তরাঞ্চলের ছোটবড় নদ-নদীর পানি প্রবাহ এতটাই কমে গেছে যে বগুড়ার ধুনট, সারিয়াকান্দি হয়ে গাইবান্ধার বালাসি, কুড়িগ্রামের চিলমারি পর্যন্ত দেড়শ কিলোমিটার বিস্তৃত ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, ধরলার মত বড়বড় নদীগুলোতে ফেরি, স্টিমার, লঞ্চ এমনকি বড় আকারের যান্ত্রিক নৌযান চালানো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। জেগে উঠেছে হাজার হাজার ছোটবড় চর। শতশত নৌযান ও নৌকা আটকা পড়ে আছে নদীর শুকনো বুকে। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা মৎস্য শিকারের ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হওয়ায় শতশত জেলে পরিবারে নেমে এসেছে দুর্দিন। জেলেদের মতে, এভাবে পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপ হতে থাকলে বিলীন হয়ে যাবে হরেক প্রজাতির নদীর মাছ।
দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো)’ এর একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, রাজশাহীসহ বরেন্দ্রভ‚ক্ত জেলাসমুহে কৃষিকাজে বিশেষ করে বোরো ধান আবাদের কাজে ভ‚গর্ভস্থ পানির ব্যবহারের ফলে এখন কোথাও কোথাও ১০০ ফিট বা তারও বেশি পরিমাণে পাম্প বসিয়েও আর পানির লেয়ার মিলছেনা। কেবল বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) কর্তৃপক্ষের আওতায় ৮ হাজারেরও বেশি গভীর নলক‚প বসিয়ে ভ‚গর্ভের পানি উত্তোলন করছে। বিএমডিএ’র বাইরেও কমপক্ষে বেসরকারি পর্যায়ে আরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার পাম্প বা সেচ স্কিমের মাধ্যমে এতবেশি পানি তোলা হচ্ছে সেচ কাজের জন্য যে প্রতিবছরই ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর বিপজ্জনকভাবে নেমে যাচ্ছে। এই সংস্থাটি তাদের জরিপ ও গবেষণার পর নির্ধারণ করবে ঠিক কতটা গভীর পর্যন্ত বোরিং করে পানির উত্তোলন সীমা নির্ধারণ করা হবে ।
বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের পানি ক্রমশ যে কতটা দুর্লভ এবং ব্যয়বহুল হচ্ছে তার বড় উদাহারণ হল গত বছরের মার্চে রাজশাহীর গোদাগাড়িতে দুই সাঁওতাল বর্গাচাষির আত্মহত্যা করার চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি উল্লেখ করে রুরাল ডেভলপমেন্ট অথরিটি এর সাবেক মহা পরিচালক আব্দুল মতীন বলেন, উত্তরের চাষাবাদে সেচের ব্যয় বাহুল্য ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের কাছে রীতিমত দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে চলেছে। তাই চাষাবাদে পরিকল্পিত পরিবর্তনের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি ।
এদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা ), পানি নিয়ে গবেষণা ও প্রতিষ্ঠান এনজিও ফোরামের একাধিক রিপোর্ট অনুযায়ী উত্তরাঞ্চলের সাম্প্রতিক সাংবাৎসরিক খরার পেছনে কিছু বৈশি^ক কার্যকারণও রয়েছে । হিমালয়ের পাদদেশের লাদাখ ও অরুনাচলের ওপর আধিপত্য বিস্তার, পানিবাহিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ , নিজ নিজ দেশের সেনাবাহিনীর চলাচলের সুবিধার্থে বনজ সম্পদ ধ্বংস করে সড়ক, সেতু, সেনা ছাউনি, চেকপোষ্ট এবং পর্যটনভিত্তিক অবকাঠামো নির্মাণ করে চলেছে ভারত ও চীন কর্তৃপক্ষ। এসব কারণেই সন্নিহিত বাংলাদেশী ভ‚খÐেও এর প্রবাহে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি উজানে বৃষ্টি নাহওয়ায় হিমালয় থেকে প্রবাহমান নদ-নদীর পানি প্রবাহও কমছে বলে একাধিক জার্নালে প্রকাশিত তথ্যে এসব ওঠে আসছে ।
চলতি বছরসহ গত তিন বছর ধরে শীত তথা শুষ্ক মওসুম বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া পর্যবেক্ষক আব্দুল হান্নান বলেন, শীত মওসুমে সাধারণত বার্ষিক বৃষ্টিপাতের মাত্র দুই শতাংশ বৃষ্টি হয়। এটা স্বাভাবিক। তবে এবছর সেই পরিমাণ বৃষ্টিও হয়নি। তিনি বলেন, ফেব্রæয়ারির দ্বিতীয় প্রান্তিকে নিম্নচাপ ও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফেব্রæয়ারির দ্বিতীয় প্রান্তিক বলতে মাঘের শেষ বোঝায়। মাঘের শেষে যদি মাঝারি বা ২ থেকে ১ দফায় ভারি বর্ষণ হয় তবে সেটা খনার বচন যদি বর্ষে মাঘের শেষ , ধন্যি রাজার পুণ্যদেশ বচনটিই স্মরণে চলে আসবে ।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের সিনিয়র বিজ্ঞানী , কীটতত্ত¡বিদ ও কৃষি গবেষক জুলফিকার হায়দার প্রধান ইনকিলাবকে বলেন , এ মওসুমে সারা দেশের মতো উত্তরাঞ্চল জুড়ে ব্যাপকভাবে রায় সরিষার আবাদ হয়েছে। বৃষ্টি সরিষার জন্য খুবই ক্ষতিকর। ফলে গত এক দশকের মধ্যে এবারই বাম্পার ফলন হচ্ছে সরিষার ।
বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের সেচ নিশ্চিত করার জন্য বিএমডিএ’র যাত্রা শুরু হয়। বিএমডিএর গভীর নলক‚প ওই সময় বোরাধান, গমসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে এক ধরনের নিরব বিপ্লবের সূচনা করে। বেড়ে যায় খাদ্য শস্যের উৎপাদন। তবে সময়ের প্রভাবে প্রমাণিত হয়, কৃষিকাজে বিশেষ করে ধান উৎপাদনের কাজে বিপুল পরিমাণে ভ‚গর্ভস্থ পানির ব্যবহার সুদূর প্রসারি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ভ‚গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভ‚উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানোর ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়েছে ।
তিনি জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০১৪ সাল থেকে নতুন করে গভীর নলক‚প স্থাপনের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। পুকুর পুনঃখনন ও ভ‚উপরস্থিত পানি উন্নয়নের মাধ্যমে সেচ ব্যবহার শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিএমডিএ। এই প্রকল্পের অওতায় পদ্মা ও মহানন্দা নদী কেন্দ্রিক প্রকল্প কার্যক্রম শুরুও হয়েছে । আগে যেখানে বিএমডিএ’র আওতায় শতভাগ ভ‚গর্ভস্থ পানির ব্যবহার হত এখন তা কমে ৮৮ শতাংশে এসেছে। এই প্রকল্পের আওতায় আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ ভ‚গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।