Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সাত মন্ত্রণালয়ে ৩২ কোটি টাকা লুটপাট

| প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্থানীয় সরকার-যোগাযোগ-কৃষি ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বেশি
হাবিবুর রহমান : স্থানীয় সরকার, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ, বিমান ও পর্যটনসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সাতটি মন্ত্রণালয়ে এক বছরে ৩২ কোটি টাকারও বেশি অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয়েছে প্রতিরক্ষা খাতে। ক্রয় প্রক্রিয়ায় সরকারি বিধি-বিধান না মেনে সরকারের ক্ষতি করা হয়েছে ৯ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৬ টাকা।
অনিয়মের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে আছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা আন্তর্জাতিক রুটে বাস পরিচালনার ক্রটিপূর্ণ চুক্তি সম্পাদনসহ নানাভাবে সরকারের আট কোটি সাত লাখ ১৭ হাজার ৭৯৪ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় উপস্থাপিত ২০০৯-১০ অর্থ বছরের অডিট প্রতিবেদনে এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কমিটি অনিয়মগুলো তদন্ত করে আগামী বৈঠকে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে।
সবচেয়ে বেশি অনিয়ম প্রতিরক্ষায়
উপস্থাপিত প্রতিবেদন অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে প্রতিরক্ষা খাতে। সরকারি বিধি-বিধান তথা টেন্ডার ও ক্রয়-প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ না করে অনিয়মের মাধ্যমে সরাসরি নগদ টাকায় মালামাল ক্রয় দেখিয়ে সরকারের ক্ষতি করা হয়েছে ৯ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৮১৬ টাকা।
অনিয়মে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়
যোগাযোগ খাতে অনিয়ম হয়েছে আট কোটি সাত লাখ ১৭ হাজার ৭৯৪ টাকা। এর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয় পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের একটি হিসাব থেকে সাত কোটি ৪১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪২ টাকা লেনদেন হলেও কোনো সুদ প্রদান না করায় আয় থেকে প্রতিষ্ঠান বঞ্চিত হয়েছে। শর্তানুসারে দোকান ভাড়া আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৪০ টাকা।  বিআরটিসি ভবনের ভাড়া বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ না করায় সংস্থার ক্ষতি হয়েছে ১১ লাখ ১২ হাজার ৬২ টাকা। রাজস্ব আদায় না করে সরকারের ক্ষতি করা হয়েছে ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৮০ টাকা এবং ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা আন্তর্জাতিক রুটে বাস পরিচালনার ক্রটিপূর্ণ চুক্তি সম্পাদন এবং চুক্তিপত্রের শর্ত মোতাবেক রয়েলটি আদায়ে ব্যর্থতায় ক্ষতি হয়েছে ২৫ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭০ টাকা।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়
এ মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের ক্ষতি করা হয়েছে ছয় কোটি ৩১ লাখ ২৮ হাজার ২৬৮ টাকা। এর মধ্যে অবৈধ ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করে অর্থ উত্তোলনের মাধ্যমে আত্মসাৎ করায় ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ১৬ লাখ ৯৭ হাজার ৩৫৯ টাকা। নি¤œমানের পাট ক্রয়ে উৎপাদন হ্রাসের কারণে ক্ষতি হয়েছে চার কোটি ৭৯ লাখ ২০ হাজার ৮৫০ টাকা এবং নি¤œমানের পাট ক্রয়ে উৎপাদন হ্রাসে মিলের ক্ষতি হয়েছে ৩৫ লাখ ১০ হাজার ৫৯ টাকা।
কৃষি মন্ত্রণালয়
কৃষি মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে দুই কোটি ৪৮ লাখ ৬২ হাজার ৫৭২ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। এর মধ্যে আমদানিকৃত এমওপি সারের ঘাটতি মূল্য জাহাজ মালিকের নিকট থেকে আদায় না করতে না পারায় ক্ষতি ৯৪ লাখ ৩০ হাজার ৯৬৩ টাকা, পুনঃ চুক্তির মাধ্যমে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের টন প্রতি অতিরিক্ত কমিশন প্রদান করায় ক্ষতি ৩০ লাখ ৫৪ হাজার ৭৫৪ টাকা, প্রকল্প বহির্ভূত খাল পুনঃখনন কাজে অনিয়মিত ব্যয়ের মাধ্যমে ক্ষতি ৪৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫৮৫ টাকা, দরপত্র যাচাই-বাছাই ছাড়াই মংলা ও খুলনা হতে নড়াইল গুদামে ছয় হাজার ৭৫২ মেট্রিক টন সার পরিবহন করায় সংস্থার ক্ষতি ২৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৫৫ টাকা এবং খুলনা হতে নওগাঁ অপেক্ষা ঠাকুরগাঁওয়ের দূরত্ব প্রায় দেড়গুন বেশি হওয়া সত্ত্বেও ঠাকুরগাঁওয়ের পরিবহন দর অপেক্ষা নওগাঁর পরিবহন ভাড়া অত্যাধিক বেশি পরিশোধ দেখিয়ে ক্ষতি করা হয়েছে ৩০ লাখ ৫ হাজার ৪১৫ টাকা।  
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের ক্ষতি করা হয়েছে দুই কোটি ৪১ লাখ ৭৮ হাজার ৩৪ টাকা। এর মধ্যে দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রয়লব্ধ অর্থ ব্যাংকে জমা না করে আত্মসাৎ এবং মজুদ মালামালের ঘাটতি করে ক্ষতি করা হয়েছে ২৫ লাখ ৪০ হাজার ৭২৪ টাকা। প্রতিষ্ঠানে ক্রয়কৃত লিকুইড মিল্ক ফিলিং মেশিন যথাযথ না হওয়ায় এর মূল্য বাবদ ক্ষতি দুই কোটি ৩২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৩৪ টাকা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়
বিএসএল-এ কর্মরত স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা আন্তর্জাতিক চেইন হোটেল ব্যবস্থাপনার চুক্তিভিক্তিক নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রদান করা, আবাসিক বাসা থেকে ন্যূনতম ভাড়া আদায় না করা এবং সার্ভিস চার্জের উপর উৎসে কর কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমা না করে এক কোটি পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ৮০ টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। এ ছাড়া টোল আদায় না করায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ক্ষতি করা হয়েছে  এক কোটি ৮০ লাখ পাঁচ হাজার ৭৬০ টাকা।
কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য এ কে এম মাঈদুল ইসলাম, মো.: আব্দুস শহীদ, মোহাম্মদ আমানউল্লাহ, আ ফ ম রুহুল হক, মো: আফছারুল আমিন, মো: শামসুল হক টুকু, রেবেকা মমিন এবং ওয়াসিকা আয়শা খান অংশ নেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, প্রতিরক্ষা, কৃষি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, বস্ত্র ও পাট, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ