Inqilab Logo

সোমবার ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারত ‘গরু আলিঙ্গন দিবস’ পালন করবে

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকার বিজাতীয় অপসংস্কৃতি তথাকথিত ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ তথা ১৪ ফেব্রুয়ারি এবার ‘কাউ হাগ ডে’ (গরু আলিঙ্গন দিবস) হিসেবে পালন করবে। দেশটির পশু কল্যাণ বিষয়ক ডিপার্টমেন্ট দেশবাসীর প্রতি মোদী সরকারের এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এ তথ্য জানানোর পর গরু আলিঙ্গন দিবস নিয়ে তুমুল বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নেটিজেনরা এ নিয়ে নানান মন্তব্য করছেন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, শিবসেনা এবং বজরং দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে মাঠে নামার আহবান জানাচ্ছেন। তারা বলছেন বিজেপি সরকার ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানাতে নতুন কৌশল নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে হিন্দুত্ববাদী মূল্যবোধকে আরো ভালভাবে জাগ্রত করতে ভ্যালেন্টাইন্স ডে’কে ভালবাসা দিবসে দিনটিকে ‘কাউ হাগ ডে’ বা গরু আলিঙ্গন দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো ঝড় চলছে। আল জাজিরার খবরে বলা হয়, এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড অব ইন্ডিয়া গত বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, গরুকে আলিঙ্গন করার মাধ্যমে মানসিক সমৃদ্ধি অর্জন হবে। বৃদ্ধি পাবে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক সুখ। ভারতে ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা গরুকে পবিত্র হিসেবে গণ্য করে এর পুজা করেন। ভ্যালেন্টাইন্স ডে সম্পর্কে তারা বলেন, পশ্চিমা ধারা ভারতীয় প্রচলিত মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যায়।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে অশ্লীলতাকে অনুপ্রেরণা যোগায়- এমনটা বলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উগ্র ডানপন্থি হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলো ভারতের বিভিন্ন শহরে দোকানে দোকানে তল্লাশি চালিয়েছে। তারা ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে বানানো কার্ড এবং উপহারগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে। রেস্তোরাঁ ও পার্কের ভিতরে হাত ধরাধরি করে থাকা যুগলদের তারা পাকড়াও করে বের করে দিয়েছে। শিবসেনা এবং বজরং দলের মতো গ্রুপগুলো বলে যে, এসব কর্মকা- হিন্দু পরিচয় পুনরুদ্ধারের পথ তৈরি করে দেয়।

১৯৯০এর দশকের শুরুর দিকে ভারত যখন অর্থনৈতিক উদারীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে, বিশেষ করে তখন থেকেই ভারতের অন্যান্য উৎসবের মতোই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে শিক্ষিত নাগরিকরা ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে জনাকীর্ণ পার্ক, রেস্তোরাঁয় সমবেত হন। সময় কাটান উপহার বিনিময় করেন। পার্টি আয়োজন করেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাকে সামনে ঠেলে দিয়েছে। ভারত জাতিগত বৈচিত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য পরিচিত। সেখানে তারা ধর্মীয় আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছেন। ভারতের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। এর মধ্যে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ হিন্দু। শতকরা ১৪ ভাগ মুসলিম। খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ এবং জৈন মিলে আছেন শতকরা ৬ ভাগ। হিন্দু রাষ্ট্র বানাতে তারা মাঝে মাঝে মুসলমানদের ওপর জুলুম নির্যাতন করছে।

জানা যায়, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই হিন্দুদের মানসিকতায় গেঁথে রাখা হয় গরু। তাদের অনেকে গভীরভাবে গরুকে শ্রদ্ধা করেন মায়ের মতো। গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে ভারতের বেশির ভাগ রাজ্যে। ইন্ডিয়া স্পেন্ড সাইটের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরে গরু বিষয়ক হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলো হত্যা করেছে কমপক্ষে ৪৫ জন মুসলমানকে। গরুর গোশত খাওয়ার অপরাধে(!) তাদের হত্যা করা হয়। সেখানে এনিমেল ওয়েলফেয়ার বোর্ড জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ১৪ ফেব্রুয়ারি ঘরের বাইরে যান এবং ফিজিক্যালি বা শারীরিকভাবে গরুকে আলিঙ্গন করুন।

নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় নামের একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এই আবেদনকে একেবারেই পাগলাটে এবং অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করে বলেছেন, দুর্ভাগ্য হলো এটা এখন সরকারি অনুমোদন পেয়েছে। এটা ধর্ম এবং রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি ‘ইরেজার’ হিসেবে দেখা হচ্ছে (অর্থাৎ রাষ্ট্র এবং ধর্ম এক হয়ে যাচ্ছে)। যা গভীর হতাশাজনক। রাজনৈতিক এবং হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলো যা করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, এখন রাষ্ট্রই তাই করছে।



 

Show all comments
  • salman ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৪:৪৭ এএম says : 0
    Goru, Sagol er Sontan raa to ta e korbay
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ