পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাকিস্তান এখনও গত গ্রীষ্মে মৌসুমি বন্যার বিধ্বংসী প্রভাব ভোগ করছে, যা দেশটির ৮ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং আনুমানিক ৩ হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি করেছে। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট উচ্চ মূল্যস্ফীতি পাকিস্তানের পরিস্থিতিকে আরো কঠিন করে তুলছে। ফলে পাকিস্তান তার ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পতিত হয়েছে। জানুয়ারিতে দেশটির বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি ২৭.৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ১৯৭৫ সালের পর সর্বোচ্চ। পাকিস্তানি রুপির দরপতন ঘটতে ঘটতে এ সপ্তাহে ডলারের বিপরীতে সর্বকালের সর্বনিম্ন ২শ’ ৭৫-এ লেনদেন সম্পন্ন করেছে, যা জানুয়ারির মাঝামাঝি ২শ’ ৩০ রুপি এবং এক বছর আগে ১শ’ ৭৫ রুপি ছিল। বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি হ্রাসের সাথে দেশটি তার সবচেয়ে খারাপ আর্থিক ভারসাম্য সঙ্কটের মুখোমুখি।
পাকিস্তান জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ, সর্বদাই অস্থিতিশীল, পারমাণবিক অস্ত্রবেষ্টিত এবং চরমপন্থি বেষ্টিত। ২০২১ সালে প্রতিবেশী আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর দেশের উত্তর-পশ্চিমে সন্ত্রাসবাদ এবং বিদ্রোহের ধ্বংসাত্মক তরঙ্গ শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারের একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৮৪ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। দেশটির রাজনৈতিক অব্যবস্থাপনা পাকিস্তানে দুর্নীতির মতো সর্বব্যাপী। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত এপ্রিলে তার পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা অক্টোবরের মধ্যে একটি নির্বাচনের জন্য পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন। অনিবার্যভাবে এসব বিপর্যয়ের মধ্যে পাকিস্তানের ঋণের পাহাড় একটি ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি করেছে।
পাকিস্তানে খাদ্য ও জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ডলার সাশ্রয়ের জন্য আমদানি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যা আমদানিকৃত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল শিল্পগুলিকে আঘাত করেছে। গাড়ি, রাসায়নিক এবং বুনন শিল্পসহ বড় আকারের উৎপাদন ২০২২ সালের নভেম্বরে আগের বছরের তুলনায় ৫.৫ শতাংশ কমে গেছে। বন্যায় তুলা ফসলের প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় দেশটির রফতানির প্রধান উৎস্য বস্ত্র শিল্পও প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। গত গ্রীষ্ম থেকে প্রায় ৭০ লাখ বুনন শ্রমিক তাদের চাকরি হারিয়েছে। এর মধ্যে ব্যাপক হারে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে শিল্পটির অতিরিক্ত ৭ কোটি ডলার খরচ হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এ বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি মাত্র ৩০০ কোটি ডলারে নেমে গেছে, যা দিয়ে মাত্র তিন সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মোটানো সম্ভব।
পাকিস্তানে বন্যা কারণে এবং চাকরি হারানোর ফলে ৮৪ লাখ থেকে ৯১ লাখ বেশি লোক দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছে এবং বেশিরভাগই গ্রামাঞ্চলে। দেশটির সিন্ধু অঞ্চলের অন্যতম প্লাবিত জেলা দাদুতে হাজার হাজার মানুষ এখনও তাঁবুতে দিনযাপন করছে। বিদেশী দাতারা জানুয়ারিতে ত্রাণস্বরূপ পাকিস্তানকে ৯শ’ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল; সেই প্রতিশ্রুতির মাত্র ৮০ কোটি মার্কিন ডলার দেশটি পেয়েছে। পাকিস্তানের পানিবদ্ধ ক্ষেতগুলোর মাত্র অর্ধেক শীতকালীন গম বপন করার জন্য পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, ফলে দেশটির বেশিরভাগ অংশ আরেকটি ফসলহানীর মুখোমুখি। এ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত সঙ্কটগুলো পারস্পরিকভাবে একটি শক্তিশালী দুষ্টচক্র তৈরি করেছে। দেশটির ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, এক সময় আশা ছিল যে, তারা এ সঙ্কট ধেকে বেরিয়ে আসবেন। কিন্তু এখন সেই আশা হভীর হাতাশা এবং আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।
ইসলামাবাদের সাথে আইএমএফ-এর ঋণ আলোচনায় সাফল্য আসলে, অন্যান্য বহিরাগত ঋণদাতাদের ঋণের হার বাড়াতে বা বিদ্যমান ঋণের জন্য অর্থ প্রদান স্থগিত করতে উৎসাহিত করতে পারে। তবুও, আরো ঋণের মাধ্যমে পাকিস্তানের বিদ্যমান সঙ্কট থেকে মুক্ত পাওয়াটা হবে সাময়িক সমাধান। পাকিস্তানে বর্তমান আইএমএফ কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হচ্ছে জুনে; শাহবাজ শরিফের মেয়াদ শেষ হবে আগস্টে। দেশটির জাতীয় নির্বাচনের আগে দুই মাসের রাজনৈতিক শূন্যতা কী ফলাফল বয়ে আনবে, তার তত্ত্বাবধান করবে একটি তত্বাবধায়ক সরকার প্রশাসন। সার্বিক পরিস্থিতিকে বিশৃঙ্খলা অনিবার্য। এ প্রেক্ষাপটে আইএমএফ তহবিল সুরক্ষিত করার জন্য পাকিস্তানের হতভাগ্য জনগণের ওপর রাজস্ব এবং বিদ্যুতের শুল্ক বাড়ানোসহ অতিরিক্ত সংস্কার পাকিস্তানের জন্য আরো বেশি কঠিন সঙ্কট বয়ে আনবে। সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।