Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খাতা জমা দিয়ে ফের পরীক্ষা দিলেন ৩ ছাত্রলীগ নেতা

শিক্ষককে গালাগাল দেখে নেয়ার হুমকি

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

শিক্ষককে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে খাতা জমা দিয়ে ফের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আদায় করে নিয়েছে তিন ছাত্রলীগ নেতা। আর তাদের এ আবদার আদায়ে সহযোগীতা করেছেন ছাত্র সংসদের এক নেতা। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিডিউটে এই ঘটনা ঘটে। নগরীর ওমর গণি এম ই এস কলেজে এক শিক্ষিকাকে প্রকাশ্যে থাপ্পর মারার একদিন পর পলিটেকনিকে এমন কাণ্ড ঘটালো সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতারা।

জানা গেছে পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে খাতা জমা দেন ওই তিন ছাত্র। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে আবার পরীক্ষা দেওয়ার আবদার করেন তারা। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাহদাত হোসেন ওমর, সাদমান সাকিবসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা। কিন্তু শিক্ষক রাজি হচ্ছিলেন না। তখন তারা শিক্ষককে তিন ছাত্রের খাতা ফেরত দিতে বাধ্য করেন। যাওয়ার সময় ওই শিক্ষককে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে যান ছাত্রলীগ নেতারা।

ছাত্রলীগের হুমকির শিকার ওই শিক্ষকের নাম প্রকাশ সিকদার। তিনি ইনস্টিটিউটের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর। ওই তিন পরীক্ষার্থী হলেন-মুহিতুল আজিম, মিফজাহুল আশরাফ ও মোশাররফ হোসেন। তিনজনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
জানা গেছে, সকাল ১০টায় চতুর্থ পর্বের পরীক্ষা শুরু হয়। ৩১১ নম্বর কক্ষে পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছিলেন প্রকাশ সিকদার ও সাদিয়া জাহান নামের দুই শিক্ষক। এ সময় তিন ছাত্র তাদের আসন পরিবর্তন করে পছন্দমতো আসনে বসে পড়েন। শিক্ষকেরা তাদের নিজ নিজ আসনে বসার নির্দেশ দেন। এরপর তিন ছাত্র পরীক্ষায় এক ঘণ্টা না যেতেই পরীক্ষার খাতা জমা দিয়ে চলে যান। এ সময় নিয়মানুযায়ী তাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্রও রেখে দেওয়া হয়।

কিছুক্ষণ পর পলিটেকনিক ছাত্র সংসদের জিএস শাহদাতসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা ওই তিন ছাত্রকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হন। এ সময় ছাত্র সংসদের নেতারা তিন ছাত্রকে পরীক্ষার খাতা ও প্রশ্নপত্র ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। এতে অস্বীকৃতি জানান প্রকাশ সিকদার। পরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শহীদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। তার নির্দেশে তিন ছাত্রকে আবার খাতা ফেরত দেওয়া হয়। তারা ফের পরীক্ষায় অংশ নেন।
শিক্ষক প্রকাশ সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, খাতা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে গালাগাল করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন শাহদাত ও সাকিবেরা। পরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের নির্দেশে তাদের খাতা ফেরত দিয়েছি। ক্যাম্পাস থেকে বের হলে আমাকে দেখে নেওয়া হবে বলে তারা হুমকি দিয়ে যান। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেব। শিক্ষার্থীরা জানায়, শাহদাত হোসেন পলিটেকনিকের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান যুবলীগ নেতা মো. মহিউদ্দিনের অনুসারী। সাদমান সাকিবও ইনস্টিটিউটের ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

ছাত্র সংসদের জিএস শাহদাত হোসেন পাল্টা অভিযোগ করেন, ওই শিক্ষক বামপন্থী রাজনীতি করেন। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে পরীক্ষার হলে নানা কথা বলে বেড়ান। ওই তিন ছাত্রকে কোন কারণ ছাড়াই পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেন। পরে আমরা অধ্যক্ষ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে বলে তাদের পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। কেউ শিক্ষককে কোনো হুমকি দেয়নি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শহীদুল ইসলাম বলেন, ছাত্র সংসদের জিএস পরীক্ষার হলে গিয়ে ছাত্রদের পরীক্ষার খাতা দেখাদেখি করার সুযোগ দিতে চাপাচাপি করেছেন। শিক্ষককে দেখে নেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের কথাকাটাকাটি হয়েছে। ওই তিন ছাত্রকে পরে পরীক্ষা দিতে দিয়েছি।
গত মঙ্গলবার এম ই এস কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষিকা ববি বড়ুয়াকে লাঞ্ছিত করেন ছাত্রলীগ নেতা রাকিব হায়দার। তিনি ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ