Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উত্তরায় ফ্ল্যাটবন্দি নারী ও সন্তানরা সুস্থ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ক্ষুধার তাড়নায় উচ্চ শব্দে কান্না করছিল ১০ বছর বয়সী জমজ দুই মেয়ে শিশু। কিন্তু অসহায় মা খাবার জোগাড় করতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। লোকলজ্জার ভয়ে দুই মেয়েকে ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আটকে রেখেছিলেন ৩৫ বছর বয়সী ওই মা। ওই মা নিজেও ক্ষুধার তাড়নায় অচেতন হয়ে পড়লে এভাবেই কেটে যায় তিন দিন, তিন রাত। অতঃপর গত শনিবার গভীর রাতে ওই দুই শিশুর চিৎকার করে কান্নার শব্দ শুনতে পায় টহল পুলিশ।

পরে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় মা ও মেয়েকে উদ্ধার করে উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। এখন তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আগের চেয়ে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার একটি বাড়িতে। গত শনিবার মা ও দুই মেয়েকে উদ্ধার করা হলেও সোমবার তা প্রকাশ্যে আসে। ওই নারীর বাড়ি নোয়াখালীতে। তার বাবা মারা গেছেন। পেশায় ছিলেন আইনজীবী। ওই নারীর চার ভাই রয়েছে। তার ছোট ভাই বিসিএস (রাজস্ব) কর্মকর্তা। এই ভাইয়ের সঙ্গে বনানীর বাসায় থাকেন ওই নারীর মা। আরেক ভাই শ্যামলীতে, আরেকজন কানাডায় থাকেন। আর বড় ভাই চাকরির সুবাদে থাকেন খুলনায়। অথচ তারা কেউই খোঁজ রাখছিলেন না স্বামীহীন ওই নারীর।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গত ১০ বছর আগে জমজ দুই শিশু মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় ওই নারীর সঙ্গে স্বামীর বিচ্ছেদ হয়। এ সময় স্বামী গর্ভে থাকা সন্তানদের থাকার জন্য উত্তরার ওই ফ্ল্যাটটি দিয়ে দেন। এরপর ওই নারী তার বাবা-মাকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন। আর এর মধ্যেই জন্ম নেয় জমজ দুই মেয়ে শিশু। তিন বছর আগে মারা যান ওই নারীর বাবা। এরপর তার মাও চলে যান ওই নারীর ছোট ভাইয়ের বাসায়। বাবার রেখে যাওয়া সামান্য টাকা দিয়ে কোনোমতে এই তিনটি বছর পার করেন ওই নারী। অতঃপর ওই ফ্ল্যাট থেকেই ক্ষুধার জ্বালায় অচেতন হয়ে পড়া অবস্থায় ওই ফ্ল্যাট থেকেই উদ্ধার হলেন ওই নারী।

উত্তরা পূর্ব থানার পরিদর্শক তদন্ত মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, অচেতন অবস্থায় একটি কক্ষে পড়েছিলেন মা। পাশের কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল দুই সন্তানকে। বাসায় আসবাব বলতে শুধু একটি খাট রয়েছে। রান্নাঘরে গিয়ে মনে হয়েছে এক মাস বাসায় কোনো রান্না হয়নি।

উদ্ধার নারীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অন্তঃস্বত্তা অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে ওই নরীর। পরে যমজ দুই মেয়েশিশু জন্ম নেয়। এরপর শিশু দুটি নিয়ে উত্তরায় বাবা-মায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার আগে ওই শিশুদের বাবার দেওয়া ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের একটি ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন ওই নারী। তিন বছর আগে ওই নারীর বাবা মারা যান। এরপর ভাইয়েরা আর তার খোঁজ রাখেননি। যদিও ঢাকা শহরেই বাস করেন ওই নারীর দুই ভাই। যাদের একজন বিসিএস কর্মকর্তা।

পুলিশ ওই নারীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, ওই নারীর বাবার রেখে যাওয়া সামান্য টাকায় দুই সন্তান নিয়ে কোনোমতে চলছিল তার সংসার। সেই টাকা এক সময় শেষ হয়ে গেলে অর্থাভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় শিশু দুটির। তাদের বয়স এখন ১০ বছর। আর ঘটনার শুরু ১০ বছর আগেই। শুধু পড়াশোনা বন্ধ হওয়াই নয়, বিল পরিশোধ না করায় ফ্ল্যাটের বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ তিন মাস আগে কেটে দেয়া হয়।
পুলিশ জানায়, এ অবস্থায় খাবার কেনার টাকা নেই ওই নারীর কাছে। ক্ষুধার কষ্টে দুই মেয়ে গত বুধবার কান্না শুরু করে। অসহায় শামীমা সহ্য করতে না পেরে সন্তানদের একটি কক্ষে আটকে রাখেন।

পরিদর্শক তদন্ত মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ওই নারী ও তার দুই সন্তানকে হাসপাতালে চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন তারা আগের চেয়ে ভালো আছেন। তার ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তারা ধরা দিতে চাচ্ছেন না। বিষয়টি এড়াতে চাচ্ছেন। ওই নারী কাউকে বিশ্বাস করতেন না। ফলে পরিবারের সদস্যদের সাথে তার দুরত্ব বাড়ে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ