Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতিত হলে ভারত চুপ থাকতে পারে না

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সম্মেলনে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় কমিশন গঠন এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন হিন্দু নেতারা। এছাড়া বিভিন্ন সময় ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার দ্রæত শেষ করাসহ নানাবিধ সংকটের আশু সমাধানের দাবিও জানান নেতারা। গত শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সম্মেলনের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে এসব দাবি জানানো হয়।

ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সম্মেলনের উদ্ধোধন ঘোষণা করেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের হিন্দু স¤প্রদায় নির্যাতিত হলে ভারত চুপ করে বসে থাকতে পারে না। বাংলাদেশে দিন দিন হিন্দুর সংখ্যা কমে যাচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। ভারতে এতধিকবার মুসলিম স¤প্রদায়ের মানুষ প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছে। ভারতে সংখ্যা লঘু মন্ত্রণালয় আছে, সংখ্যা লঘু কমিশন আছে। সব ক্ষেত্রে বিশেষ বরাদ্দ আছে। যে কারণে ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভারত থেকে কোন মুসলমান অত্যাচারিত হয়ে অন্য দেশে যাচ্ছে না। আমরা চাই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু স¤প্রদায় দাবি দাওয়া অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হোক। তিনি আরো বলেন, ভারত-বাংলাদেশের ইতিহাস একই সূত্রে গাঁথা। আলাদা দুটি ভ‚খÐ সত্তে¡ও দু’দেশের জনগণের সংস্কৃতি ও পরম্পরাও অভিন্ন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বেরও রজতজয়ন্তী পূর্ণ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব।

সম্মেলনে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু এদেশে অসা¤প্রদায়িকতার বীজ বপন করেছিলেন। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাই বাঙালী হয়ে যুদ্ধ করেছিল, জয় বাংলা বলে আত্মাহুতি দিয়েছিল। কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শক্তি বিভিন্ন সময় সা¤প্রদায়িকাতে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করেছে। সংবিধানে এখনো সা¤প্রদায়িকতার ছাপ রয়েছে, সামরিক শাসনের ছাপ রয়েছে। তাই অসা¤প্রদায়িক দেশ গঠনে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার বিকল্প নেই। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন ধর্মীয় সংখ্যালঘু কমিশন।
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামানিক বলেন, দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৭.৯ শতাংশে নেমেছে। বিভিন্ন স্থানে হিন্দু স¤প্রদায়ের ওপর হামলা হলেও প্রতিবাদ হয়েছে নামমাত্র। জাতীয় সংসদে ধর্মীয় সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের প্রতিনিধত্বকারী সদস্যের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। এজন্য সংখ্যানুপাতিক তত্তে¡র ওপর ভিত্তি করে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের জন্য সংসদীয় আসন নির্ধারণ করতে হবে। সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ সা¤প্রদায়িক নয়, কিন্তু একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ভাবাদর্শ সা¤প্রদায়িক। কমিশন গঠন করে সা¤প্রদায়িক গোষ্ঠী কর্তৃক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বিচার দ্রæত নিষ্পত্তি করতে হবে। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঘিরে সা¤প্রদায়িক হামলা ঠেকাতে প্রয়োজন কার্যকর আইন।

হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট বিধান বিহারি গোস্বামীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যন্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সংগঠনের নেতা দিনবন্ধু রায়, বিজয় কৃষ্ণ ভট্টাচার্য, অ্যাড: প্রদীপ পাল সুশান্ত চক্রবর্তী প্রমূখ।

বইমেলার আঙ্গিকগত বিন্যাসের পরিবর্তনে প্রকাশকদের মিশ্র অনুভ‚তি
রাহাদ উদ্দিন
বাংলা একাডেমি ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। এবছর মেলার আঙ্গিকগত বিন্যাসে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে বাংলা একাডেমি। এ নিয়ে মিশ্র অনুভ‚তি প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা।

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, গতবার মেলার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশন অংশে ১৮২টি স্টল এবং ১১টি প্যাভিলিয়ন ছিল। কিন্তু এবছর এই জায়গায় বিরাট পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবার এসব স্টলকে মেলার দৃশ্যমান অংশ আনা হয়েছে এবং ইনস্টিটিউশনের ওই অংশে নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

এছাড়া খাবারের স্টলগুলোকে এবার এমনভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে যেন এলোমেলোভাবে খাবারের স্টল বইমেলায় আগত পাঠকের মনোযোগ বিঘিœত না করে। শিশু চত্বরটির পরিধি কম হওয়ায় এবার এই চত্বরটি মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে। যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাক্সিক্ষত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে। এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে উদ্যানের গ্রন্থ-উন্মোচন অংশের কাছাকাছি। সেখানে ১৫৩টিসহ ৫টি উন্মুক্ত স্থানে লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় মোট প্যাভিলিয়ন রয়েছে ৩৮টি।

আঙ্গিকগত ও বিন্যাসের এ পরিবর্তনে অনেকেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের ওই অংশ থাকা স্টলগুলোকে এবার মেলার দৃশ্যমান অংশে নিয়ে আসায় গতবারের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন প্রকাশকরা।

অনিন্দ্য প্রকাশের প্রকাশক আফজাল হোসেন বলেন, এবছর মেলার আয়তনটা ছোট করা হয়েছে এতে প্যাভিলিয়ন ওস্টল কারো কোন অভিযোগ নেই। প্রতিবছর মেলার বিন্যাসটা একই রকম থাকলে ভালো হয়। বারবার পরিবর্তন আনার ফলে পাঠকদের অসুবিধা হয় লেখকদের খুঁজে পেতে। তবে এবছর মেলা প্রাঙ্গণে হাঁটার জন্য ইট বিছানো হয়নি। এতে করে ধুলাবালিতে পাঠক দর্শনের্থীদের অসুবিধা হচ্ছে।
অন্বেষা প্রকাশের প্রকাশক মো. শাহাদাত হোসাইন বলেন, গত বছর মেলার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশের সেসব স্টল ও প্যাভিলিয়নকে এবছর মেলার দৃশ্যমান অংশ নিয়ে আসায় প্রকাশকরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। এছাড়া এবার স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলো পাশাপাশি হওয়ায় দুই জায়গায় পাঠকদের উপস্থিতি থাকছে। এটা সবার জন্যই ভালো।

একই ধরনের অনুভ‚তি ব্যক্ত করেন পার্ল পাবলিকেশন্স এর স্বত্বাধিকারী হাসান জাইদি। তিনি বলেন, গত বছর মেলা প্রাঙ্গণে অনেক বেশি স্পেস ছিল। যে কারণে মেলা অনেকটাই ফাঁকা মনে হতো। তবে এবছর মেলার পরিধি সংকুচিত করায় পাঠকদের সমাগম হচ্ছে এবং এতে রমরমা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মানুষের সাথে মানুষের দেখা সাক্ষাৎ হওয়া, একটা মেলবন্ধন ; এটাই তো মেলার সৌন্দর্য।

মিজান প্রকাশনির স্বত্বাধিকারী এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, বিগত বছরগুলোতে উদ্যানের মন্দির গেইটের প্রবেশপথে বিশাল অংশ ফাঁকা ছিল। একারণে অনেকেই ঢুকেই ভাবতো এদিকটাতে কিছুই নেই। মেলা কেবল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেই হচ্ছে। তবে এবার এ অংশে শিশুচত্বর থাকায় তেমনটা আর হচ্ছে না। পাঠকরা বুঝতে পারতেছে যে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও মেলা হচ্ছে। এছাড়া মেলায় স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলো পাশাপাশি থাকায় পাঠকদের পছন্দের লেখক ও প্রকাশনীর বই খুঁজে পেতে সহজ হবে।

এদিকে মেলার এসব নতুনত্বে ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারীরা মো. মনিরুল হক। তিনি বলেন, মেলার আয়তন সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় মেলায় অনেক বেশি ভীড় হবে। মানুষের গায়ে গা লাগবে। এতে প্রকৃত পাঠকরা বিরক্ত হবে। তারা বই কিনতে পারবে না। অনেকেই বিরক্ত হয়ে প্রথমদিকে মেলায় আসবে না। মেলা কেবল শুরু হলো। এখনই ধুলাবালিতে একাকার। আরো কয়েকদিন যাক, তখন দেখা যাবে কি অবস্থা হয়। এদিকে মেলা প্রাঙ্গণে ইট না বিছানোর কারণে একটু বৃষ্টি হলেই মেলাপ্রাঙ্গণে কাদামাটি দেখা দেয়ার আশঙ্কা করছেন প্রকাশকরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ