Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে খুলনার অবৈধ ১৪ ইটভাটায় উচ্ছেদ অভিযান

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৭ এএম

উচ্চ আদালতের নির্দেশে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া এলাকায় হরি ও ভদ্রা নদী দখল করে গড়ে ওঠা ১৪টি ইটভাটা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা এসকল ইটভাটা সকল আইনকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিবেশ দূষণ করে আসছিল। একাধিকবার উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়েও শেষ পর্যন্ত তাদের উচ্ছেদ করা যায়নি। ইটভাটাগুলো উচ্ছেদের ফলে হরি ও ভদ্রা নদী দিয়ে ডুমুরিয়াসহ পাঁচটি উপজেলার পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।

অভিযানে থাকা খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আতিকুল ইসলাম জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে তারা নদী দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হয়। ছয়টি বুলডোজার দিয়ে ইটভাটাগুলোর চিমনি ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি কাঁচা ও পোড়ানো ইট এবং মাটির স্তূপ অপসারণ করা হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহীন সুলতানা জানান, তাদের অনুমোদন ছাড়াই এই ইটভাটাগুলো গড়ে উঠেছিল। কয়েক দফা নোটিশ দেওয়ার পরও তারা অবৈধভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। সে কারণে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলো। উচ্ছেদ অভিযানে পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদফতর, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া ও রুদাঘরা ইউনিয়নের পশ্চিম পাশে বহমান ভদ্রা ও হরি নদীর দুইপাশে ব্যক্তি মালিকানার জমির সঙ্গে নদীর চর দখল করে এলাকার প্রভাবশালীরা বেশ কয়েকটি ইটভাটা গড়ে তোলেন। এ ঘটনায় পরিবেশের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ২০২১ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টে একটি রিট করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদী দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ১৪টি ইটভাটার মধ্যে থাকা সরকারি নদীর জায়গা থেকে ইটভাটা উচ্ছেদ বা অপসারণ করে জমি অবমুক্ত করার জন্য খুলনা জেলা ও ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের সেই আদেশ যথাযথভাবে প্রতিপালন না হওয়ায় গত বছরের ৭ ডিসেম্বর রিটকারী আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট খুলনা জেলা প্রশাসক ও ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে জবাব দেয়ার নির্দেশনা দেন।

জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত ১০ জানুয়ারি আদালতে উপস্থিত হয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এরপর বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই ১৪টি অবৈধ ইটভাটা অপসারণ করে নদীর জায়গা অবমুক্ত করে আগামি ৮ ফেব্রæয়ারির মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরপর ইটভাটা মালিকপক্ষ সময় চেয়ে উচ্চ আদালতে একাধিক আবেদন করলেও তা খারিজ করে দেয়া হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানুয়ারি মাসে ওইসব ভাটার মধ্যে থাকা সরকারি জমির সীমানা নির্ধারণ করা হয়। এরপর বুধবার সকাল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হয়।
প্রথমে খর্ণিয়া ব্রিজ সংলগ্ন ‘নুরজাহান ব্রিকসের চিমনি ও চুল্লি ভাঙা হয়। এরপর এক এক করে কেপিবি ব্রিকস, এসবি ব্রিকস, কেবি-২ ব্রিকস, সেতু-১ ব্রিকস, এফএমবি ব্রিকস, কেবি-২ ব্রিকসের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা এরই মধ্যে ওই ১৪টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। তাছাড়া সিএস রেকর্ড অনুযায়ী নদীর জমি চিহ্নিত করে তা উদ্ধার করতে বৃহষ্পতিবার ছয়টি ইটভাটার অংশ বিশেষ ও দুটির চিমনি ভাঙা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ