পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমাদের চিরপরিচিত মাস ফেব্রুয়ারী। যেটাকে আমরা বছরের দ্বিতীয় মাস হিসেবে চিনি এবং জানি। তবে আমরা অনেকেই এই মাসটি কিভাবে এলো, সেটা খুব একটা পরিস্কার জানি না।
খ্রীষ্টীয় এই মাসটা অনেক নামেই পরিচিত। যেমনঃ গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী, গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জী, পাশ্চাত্য বর্ষপঞ্জী, খ্রীস্টীয় বর্ষপঞ্জী। আর খ্রীস্টীয় বর্ষপঞ্জী/ দিনপঞ্জিকা হল আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় সর্বত্র স্বীকৃত বর্ষপঞ্জী/দিনপঞ্জিকা।
রোমান ক্যালেন্ডারে ফেব্রুয়ারী ঠাঁই পেয়েছিল "ফেব্রুয়ারিয়াস" নামে। তিনি ছিলেন বাতাস এবং মৃত্যুর দেবী। এই "ফেব্রুয়ারিয়াস" শব্দটির উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ "ফেব্রুয়াম" থেকে। যার অর্থ বিশুদ্ধতা। প্রাচীনকালে রোমানরা ফ্রেব্রুয়া নামে একটি ‘শুদ্ধিকরণ উৎসব’ করত। উৎসবে ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি চাবুক ‘ফ্রেব্রুয়া’ দিয়ে নিঃসন্তান মহিলাদের অত্যাচার করা হত। মনে করা হত, এর ফলে তাঁরা পবিত্র হয়ে সন্তানের জন্ম দেবেন। সম্রাট নিউমা পম্পিলিয়াস (খ্রীষ্টপূর্ব ৭৫৩-৬৭৩) এই উৎসবের জন্য মাসের নাম রাখেন ফ্রেব্রুয়ারী। তিনিই ৭১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নিউমা পম্পিলিয়াস (খ্রীষ্টপূর্ব ৭৫৩-৬৭৩) এই মাসটি যুক্ত করেন। সেসময় ফেব্রুয়ারী ছিল বছরের শেষ মাস। পরবর্তীতে ডেসিমভার্সের সময়কালে (প্রায় ৪৫০ খ্রীষ্টপূর্ব.) এটিকে বছরের দ্বিতীয় মাস করা হয়। যা আজ পর্যন্ত সেই স্থানেই রয়ে গেছে।
ফেব্রুয়ারী হচ্ছে গ্রেগরীয় ও জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসারে বছরের দ্বিতীয় মাস। এটা ইংরেজী বছরের সবচেয়ে ছোট মাস, এবং একমাত্র মাস যার দিনসংখ্যা ত্রিশের কম। অধিবর্ষে (লিপ ইয়ারে) এইমাস মোট ২৯ দিনে হয়। অন্যান্য সময়ে ২৮ দিনে হয়। উত্তর গোলার্ধে ফেব্রুয়ারী হচ্ছে শীতের তৃতীয় মাস। দক্ষিণ গোলার্ধে এটি অনেকটা উত্তর গোলার্ধে আগস্ট মাসের সমতুল্য। অর্থাৎ গ্রীষ্মের তৃতীয় মাস হয়ে থাকে। প্রাচীন ইংরেজী ভাষায় ফেব্রুয়ারী'কে ডাকা হত "সোলমোনাথ" (কাদার মাস) বা কেলমোনাথ (বাঁধাকপির মাস)।
প্রাচীন ইংরেজী বলতে এই ভাষাটি ৫ম শতকের মধ্যভাগ থেকে ১২শ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত বর্তমান ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের দক্ষিণভাগে প্রচলিত ছিল। এটি একটি পশ্চিম জার্মানীয় ভাষা। প্রাচীন ফ্রিজিয়ান ভাষার সাথে ভাষাটির মিল আছে। এছাড়াও উত্তর জার্মানীয় প্রাচীন নর্স ভাষা দ্বারা এটি গভীরভাবে প্রভাবিত।
ফিনিশিয় (ফিনল্যান্ড) ভাষায় এই মাসকে বলা হত হেলমিক্যু বা মুক্তার মাস। শীতের দেশে এই মাসে দিনে বরফ গলে পাতার ডগায় বিন্দু বিন্দু শিশির জমে। রাতের বেলা এই শিশির যখন ঠাণ্ডায় শক্ত হয়ে যায়। তখন তা দেখতে মুক্তার মতো লাগে, এজন্যই এমন নাম।
পোলিশ (পোল্যান্ড) ভাষায় এই মাসের নাম ছিল ল্যুটি বা বরফের মাস।
ম্যাকডোনিয়ানরা ফেব্রুয়ারীকে বলতো সেচকো বা কাঠ কাটার মাস। ম্যাকডোনিয়ানভাষীগণ বর্তমানে ইউরোপের আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, গ্রীস, রোমানীয়া, সার্বিয়া এবং আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা জুড়ে বিস্তৃত।
ক্রোয়েশিয়া'য় এই মাসকে বলা হত ভেলজ্যাকা। এই শব্দটির মানে জানা যায় না। সম্ভবত এটি বৃদ্ধি থেকে উদ্ভূত। সেক্ষেত্রে ব্যাখ্যা হতে পারে প্রতি ৪ বছর পর পর ফেব্রুয়ারির দিন সংখ্যা এক বেড়ে যায় বলে হয়ত একে ভেলজ্যাকা বলা হত।
সাধারণ বছরে ফেব্রুয়ারী, মার্চ আর নভেম্বর মাসের প্রথম তারিখ একই বার থাকে। সেই সময় এই মাস আর জানুয়ারী'র শেষ দিন একইবার পড়ে। অধিবর্ষের (লিপ ইয়ার) সময় ফেব্রুয়ারী আর আগস্ট মাস একই বার দিয়ে শুরু হয়। এই মাসের একটি মজার দিক হচ্ছে অধিবর্ষ হোক আর নাই হোক, ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ দিন যে বার থাকে। অক্টোবর মাসের শেষ দিন সেই একই বার থাকে।
ফেব্রুয়ারী মাসটি রোমান বর্ষপঞ্জিতে সবার শেষে যুক্ত হয়েছিলো। শুরুর দিকে ফেব্রুয়ারী'র দিনসংখ্যায় নানা পরিবর্তন হয়েছে। কখনো এর দিনসংখ্যা ধরা হয়েছে ২৩ দিন, কখনো ২৪ দিন আবার কখনোবা ২৭ দিন। বেশ পরে জুলিয়াস সিজার (খ্রীস্টপূর্ব ১০২-৪৪) ক্যালেন্ডারে সংশোধনী আনেন। নিয়মিতভাবে অধিবর্ষ গণনা শুরু হয়, সেই সময় ফেব্রুয়ারী তার পরিচিত ২৮ দিনের রূপটি লাভ করে।
ফেব্রুয়ারী মাসের জন্মফুল হচ্ছে ভায়োলা বা ভায়োলেট। এই মাসের জন্মপাথর ধরা হয় অ্যামেথিস্ট। যা কিনা দয়া, মনুষ্যত্ব, জ্ঞান ও কর্তব্যবোধের প্রতীক বলে বিবেচনা করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।