Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পৌষের শীত উধাও

| প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : পৌষ মাস প্রায় মাঝভাগে এখন। ডিসেম্বর শেষের দিকে। পঞ্জিকা অনুসারে ঋতুচক্রে পৌষ-মাঘ দুই মাস ভরা শীতকাল। অথচ শীত উধাও। অগ্রহায়ণ মাসের শেষ ও পৌষের গোড়াতে ক’দিন হালকা শীত পড়লেও গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ‘স্বাভাবিক’ শীত নেই। যদিও ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়ছে। অথচ পৌষের এ সময়েই যখন হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হওয়ার কথা, সেখানে এখন বিরাজ করছে হালকা ভ্যাপসা ও গুমোট গরমে ‘ভাপ’। লেপ-কম্বল, শীতবস্ত্র তো গায়ে জড়ানো যাচ্ছেই না। বরং মানুষজন এ অসময়েও ঘামাচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, বরিশালসহ অনেক জায়গায় দিনে-রাতে ফ্যান চালাতে হচ্ছে। স্বাভাবিক শীত উধাও হওয়ার কারণে খেজুরের রস এখন আর সুমিষ্ট নয়। রসও পড়ছে কম। নবান্নের পিঠা-পুলি-পায়েসের মজাও তেমনিটি পাওয়া যাচ্ছে না।   
গতকাল (সোমবার) দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে ২৯.৪ ডিগ্রি সে.। ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ২৮.২ ও ১৮.৫ ডিগ্রি সে., চট্টগ্রামে ২৮ ও ১৮.১ ডিগ্রি সে.। যা এ সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে স্থানভেদে ২ থেকে ৬ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত বেশি রয়েছে। তবে আবহাওয়া বিভাগ গতকাল জানায়, আগামী ৭২ ঘণ্টার (৩ দিন) মাথায় প্রায় সারাদেশে তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পারে। এর ফলে আশা করা যায়, শিগগিরই স্বাভাবিক শীতের আমেজ আসবে।  
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, গত বেশ কিছুদিন ধরে ঊর্ধ্বাকাশের শীতল বা হিমেল জেট বায়ুমালা নিচে স্থলভাগের দিকে নেমে আসার
স্বাভাবিক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া আকাশ অনেক সময়ই মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। মেঘের নিচে বিরাজ করছে উষ্ণ আবহাওয়া। একই সঙ্গে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে বিরাজমান একটি স্বাভাবিক লঘুচাপের বর্ধিতাংশ (ট্রাফ) উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। এসব প্রভাব-বলয় বা নিয়ামকগুলো সক্রিয় থাকার কারণে পৌষের বর্তমান প্রায় মাঝামাঝি সময়ে যে শীত পড়ার কথা তা নেই। বরং বিরাজ করছে এক ধরনের উষ্ণতা। তবে কুয়াশাপাত প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। আবহাওয়ার এহেন বিপরীতমুখী এবং বৈরী আচরণের কারণে বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধদের ভাইরাস জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের হার বেড়ে গেছে। আবার ফল-ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ ধরনের আবহাওয়া অনেক ক্ষেত্রে উপকারও বয়ে আনছে।      
এদিকে চলতি ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ-পৌষ) মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আবহাওয়া বিভাগ ইতোপূর্বে জানিয়েছিল, এ মাসে রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে। ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধে এসে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২টি মৃদু কিংবা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সময় তাপমাত্রা নেমে আসতে পারে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সে.। আর মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে তাপমাত্রার পারদ ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সে. নামতে পারে।  
আবহাওয়ার পালাবদলের কারণেই শুধু নয়, আবহাওয়া ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ুর নেতিবাচক বিবর্তনের ফলে বাংলাদেশেও ষড়ঋতুর চিরাচরিত বৈচিত্র্য ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যেতে চলেছে। প্রতিনিয়ত উষ্ণ থেকে উষ্ণতর, রুদ্র ও রুক্ষ হয়ে উঠছে আবহাওয়া-জলবায়ু। ভরা বর্ষাকালে স্বাভাবিক পরিমাণে ও অঞ্চলভেদে আনুপাতিক হারে বৃষ্টিপাত হয় না। অথচ ‘অকাল’ বর্ষা দীর্ঘায়িত হয়। গ্রীষ্মকাল জুড়ে দাবদাহও ছিল অসহনীয়। আবার প্রতিবছরই যেন শীতকাল ছোট হয়ে আসছে।
শীত নামানো বৃষ্টি!        
গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চাঁদপুরে ২৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনি¤œ তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ১১.৫ ডিগ্রি সে.। এ সময় রংপুর বিভাগের কয়েক জায়গায় বিক্ষিপ্ত, হালকা ও অস্থায়ী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে দিনাজপুরে ১১ মিলিমিটার, সৈয়দপুরে ৬ ও রংপুরে ১ মি.মি. বৃষ্টি হয়। যা এ সময়ে ‘স্বাভাবিক শীত’ নামানো বৃষ্টি।  
আবহাওয়া বিভাগ আরও জানায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় একটি পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ (ট্রাফ) বিরাজ করছে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি মৌসুমি লঘুচাপ রয়েছে।
আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা কিংবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হতে পারে। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এছাড়া প্রায় সারাদেশে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল অবধি নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া প্রায় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় (২ দিন) সার্বিকভাবে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ