Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তিপণের বিশ লাখ টাকা না দেওয়ায় তিতাসে স্কুল ছাত্রকে খুন

| প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কুমিল্লা উত্তর সংবাদদাতা : মুক্তিপণের বিশ লাখ টাকা না দেওয়ায় কুমিল্লার তিতাসে হৃদয় নামে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে খুন করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে অপহরণকরীরা। অপহরণকারিরা হৃদয়ের বাবার নিকট মোবাইলে ২০ লাখ টাকা দাবি করলে তিনি তিতাস থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে অপহরণে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী একই উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি মেম্বার রেনু মিয়ার ছেলে রিয়াদ হোসেন (২০), আকালিয়া গ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে মোহাম্মদ আলী (৩০), গুনপুর গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে সাকিব (২২) ও নজরুল ইসলামের ছেলে মহিন আহমেদ (২৪)কে আটক করে। গত সোমবার সকালে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আশরাফ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পুলিশ আটককৃতদের তথ্যানুসারে সোমবার সকাল থেকে হোমনার তিতাস নদীতে লাশ উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছেন। নিহত স্কুলছাত্র আবু তাহের হৃদয় তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের মধ্যে আকালিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বশির আহম্মেদের একমাত্র ছেলে। সে বাতাকান্দি সরকার সাহেব আলী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র। হৃদয়বিদারক এ চাঞ্চল্যকর অপহরণ ও হত্যাকা-ে এলাকায় শোকের মাতম চলছে। ছয়দিন যাবৎ পুত্র শোকে কাতর বাবা মা’সহ স্বজনদের আহাজারিতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
তিতাস থানা ও নিহত ছাত্রের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত  ২১ ডিসেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় গ্রামের পাশে খেলার মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলার  জন্য নিহত স্কুল ছাত্রের ফুফাতো বোনের ছেলে মাহিন বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ১০টা পরও সে যখন বাড়ি ফিরে আসেনি, তখন তার বাবা-মা বিভিন্ন স্বজনদের বাড়িতে খোঁজ করতে থাকে। পরের দিন বৃহস্পতিবারে একটি অপরিচিত মোবাইল নাম্বার (০১৭৪৫৫০৯৮৪৮) থেকে মোবাইল ফোন আসে হৃদয় অপহরণকারীদের হেফাজতে রয়েছে। তাদের ছেলেকে ফেরত পেতে হলে বিশ লাখ টাকা লাগবে এবং “এ বিষয়টি কাউকে জানালে তার ছেলেকে জীবিত দেওয়া হবেনা।” এ কথা বলেই ফোন বন্ধ করে দেয়। পরে বিকেল ৩টায় আবার একই নাম্বার থেকে ফোন করে টাকা জোগার করা হয়েছে কিনা জানতে চায়। নিহতের বাবা  টাকা কিভাবে পাঠাবো জানতে চাইলে পরে জানাবে বলে আর ফোন করেনি অপহরণকারীরা। ছাত্রের বাবা বশির আহমেদ শুক্রবার রাতে তিতাস থানা পুলিশকে জানায় এবং রাতেই একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা তিতাস থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ শহিদুল হক জানান, মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই রোববার দিবগাত রাতে অভিযান চালিয়ে ৪জন অপহরণকারীকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হৃদয়কে অপহরণের কথা স্বীকার করেছে। পুলিশ নিহত হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে তিতাস নদীতে ডুবুরি দিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে।
বাবা বশির আহমেদ একমাত্র ছেলে হৃদয়কে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন, কথা বলার বাকশক্তিও হারিয়ে ফেলছেন। তারপরও তিনি বলেন, আমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিশ লাখ টাকা কোথায় থেকে কিভাবে যোগাড় করবো। এরপরও অনেক ধার হাওলাত করে তিন লাখ টাকা জোগাড় করে বলেছি আপনারা আমার ছেলের প্রাণভিক্ষা দেন। আমাকে সময় দেন ভিটামাটি বিক্রি করে টাকা যত পারি যোগাড় করে দিমু। ঘাতকরা আমার একমাত্র সোনার ধন হৃদয়রে মেরে নদীতে ভাসাইয়া দিছেরে...বাবা। এ বলেই মুর্চ্ছা যান।
তিতাস থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, অপহরণের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই থানায় মামলা নিয়ে অপহরণকারীদের ধরার জন্য অভিযান চালাই। রোববার রাতেই ৪জন অপহরণকারী ধরার পর তাদের নিকট হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছি। মেধাবী স্কুল ছাত্র হৃদয়ের লাশ উদ্ধার এবং অপহরণকারী অন্যান্যদের ধরার জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।  
বাতাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ভূইয়া বলেন, গতকাল সকালে শিক্ষকম-লীকে নিয়ে হৃদয়ের বাড়িতে গেলে আত্মভোলা হয়ে পড়ি। ওর বাবা-মা ও বোনদের আর্তনাদ একজন রক্ত মাংসের গড়া মানুষ হিসেবে আমি নিজকে তখন অপরাধী ভেবেছি। এ ঘুনেধরা সমাজের জন্য কি আমাদের কিছুই করণীয় নেই? আমার দৃঢ় বিশ্বাস অপহরণকারী ও খুনিরা কেউ পেশাধারী নয়। এটা সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফসল। এটা প্রতিরোধের কোন বিকল্প নেই।
আমি বাতাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে এ পৈশাচিক ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ