Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মমেক হাসপাতাল ‘বিদেশী ডাক্তার আপা’!

| প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. শামসুল আলম খান : তার বাড়ি ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে। স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে এসেছেন বাংলাদেশে। বছর পাঁচেক আগে স্যার সলিমুলাহ মেডিকেল কলেজ থেকে স্থানান্তরিত হয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। পড়াশুনা শেষ করে এখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই চলছে তার ইন্টার্নশিপ। তার নাম সিয়াব খাজাওয়াল।
সেবাই তার কাছে পরম ধর্ম। মানব সেবার মহান ব্রত নিয়েই একজন চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলছেন। আর এজন্য তিনি বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশকে। এখানে শিক্ষারমান যেমন ভালো তেমনি খরচও কম। হাতে-কলমে শেখার পাশাপাশি রোগ ও রোগীর বৈচিত্র্যও থাকায় দেশের অন্যতম সেরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের মাধ্যমেই চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে তৈরি করছেন এ তরুণী।  
খেটে খাওয়া থেকে শুরু করে সব শ্রেণির রোগীদের সঠিক সেবা নিশ্চিত করতেই ২৮ বছর বয়সী এ তরুণী দায়িত্ব সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন। সহৃদয়তার কারণে রোগীরাও তাকে পছন্দ করেন। তার সম্পর্কে সবাই জানেন তিনি বাংলাদেশী নন, কাশ্মীরের মেয়ে।
এ কারণে রোগীরা তাকে সম্মান আর আস্থার সঙ্গে সম্বোধন করেন ‘বিদেশী ডাক্তার আপা’। তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়ও তিনি। শুক্রবার রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে আলাপ হয় এ ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে।
প্রায় ৫৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় ৫শ’ শয্যার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। শুধু ময়মনসিংহ জেলা নয়, ময়মনসিংহ অঞ্চলের ৬ জেলার মানুষের চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসাস্থল এ হাসপাতাল। সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাজীপুরের একাংশের লোকও প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে আসেন।
পরবর্তীতে এর শয্যা সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়। ২০ শয্যার হৃদরোগ বিভাগে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। আর প্রতি মাসে এ সংখ্যা প্রায় ১ হাজার থেকে ১২শ’।
২০১১ সালে স্কলারশিপ নিয়ে ভারতের কাশ্মীর থেকে ঢাকার স্যার সলিমুলাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন সিয়াব খাজাওয়াল। এরপর নিজেই পছন্দ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত হন। বর্তমানে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে খাজাওয়াল ছাড়াও ইরান ও কাশ্মীরের আরো দু’শিক্ষার্থী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন।
দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে অবস্থান করে ময়মনসিংহকে ভালোবেসে ফেলেছেন সিয়াব খাজাওয়াল। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের এ কন্যা বাংলাদেশকে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ মনে করেন। ময়মনসিংহের মাটি, জল ও আবহাওয়াকে একান্তই আপন করে নিয়েছেন। ময়মনসিংহের মানুষ অনেক বেশি আন্তরিক, বলতে ভুলেননি এ চিকিৎসক।
পরিবারের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকলেও বাবা-মা’র জন্য মন কাঁদে। বছরে অন্তত একবার ছুটে যান কাশ্মীরে। আবার দিন বিশেক অবস্থান করে ফিরে আসেন এখানে। ময়মনসিংহকেই এখন তিনি ভাবেন ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে।
আলাপচারিতায় নিজের চিকিৎসক হবার গল্প বলছিলেন কাশ্মীর কন্যা- ‘শৈশব থেকেই স্বপ্ন দেখতাম চিকিৎসক হয়ে মানবসেবা করবো। প্রকৌশলী বাবা নাজির আহম্মেদ ও মা নাসরিন উৎসাহ দিতেন।
কঠোরশ্রম আর একাগ্রতায় ধীরে ধীরে চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলছি। মানবসেবায় নিয়োজিত থেকে আমি মানসিকভাবেও সন্তুষ্ট।’
প্রতিদিন দু’শিফটে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সিয়াব খাজাওয়াল। বছর খানেক আগে সহপাঠীদের কাছ থেকে বাংলা শিখে নিয়েছেন। এখন শুদ্ধ বাংলাতেই তিনি কথা বলেন রোগীদের সঙ্গে। এতে করে রোগীদের সমস্যাও ভালভাবে বুঝতে পারেন, চোখে-মুখে সারল্য নিয়ে জানান খাজাওয়াল।
হাসপাতালের করোনারী কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বেশ কয়েকজন রোগী জানান, বিদেশী ডাক্তার আপা’র কাছ থেকে নিরন্তর সহযোগিতা মেলে। রোগীর সঙ্গে অনেকক্ষণ সমস্যা নিয়ে তিনি কথা বলেন। তার মাঝে রয়েছে সারল্য আর মানবপ্রীতি।’
‘বিদেশী ডাক্তার আপা’ সম্পর্কে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের রেজিস্ট্রার বিশ্বনাথ সাহা বলেন, কাজের প্রতি ডেডিকেটেড সিয়াব খাজাওয়াল। রোগীদের এ তরুণ ইন্টার্ন চিকিৎসক আন্তরিকতা নিয়েই শতভাগ সেবা দেয়ার চেষ্টা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ