Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ভাষা শহীদ ভাষা সৈনিক লও সালাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সইমু না আর সইমু না, অন্য কথা কইমু না/ যায় যদি ভাই দিমু সাধের জান...। মুখের ভাষা কেড়ে নেয়ার প্রশ্নে পুরো বাঙালি জাতি এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। যে কোন জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো সেই জাতির মাতৃভাষা। তেমনি বাঙালি জাতির দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য ও জাতীয়তাবাদের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বাংলা ভাষা। কিন্তু সেই ভাষা কেড়ে নিয়ে পাকিস্তানি শাসক শ্রেণি বাংলার পরিবর্তে উর্দু চাপিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। পাকিস্তানি শাসকশ্রেণির এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি বাঙালির বীর সন্তানরা। তাই তারা গর্জে উঠেছিল। বছর ঘুরে আবার এলো রক্তঝরা ফেব্রæয়ারি। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেকে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষাকে রক্ষা করেন। মায়ের ভাষা কেড়ে নেয়ার ওই সংগ্রামে সেদিন ছাত্র জনতা এক সঙ্গে রাজপথে নেমে পড়েন। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষা নিয়ে এমন আন্দোলন আর কোথাও হয়নি। ভাষার প্রশ্নে জেগে ওঠে পুরো বাঙালি জাতি। যার চ‚ড়ান্ত পরিণতি লাভ করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ওই বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে সূচিত হয় পৃথিবীর ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় এবং এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। এ মাসেই ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়ার বিরল ইতিহাস রচিত করেছিল বাঙালির আপোষহীন বীরেরা। আর সেই থেকেই ফেব্রæয়ারি মাসকে ভাষার মাস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। আজ ১ ফেব্রæয়ারি। ভাষার মাসের প্রথম দিন। তাই প্রাণে বাজতে শুরু করবে সেই বেদনাÑ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি...। অমর একুশের চেতনার রঙে সাজতে শুরু করবে বাংলা। ভাষার মাস ঘিরে নতুন জাগরণের সৃষ্টি হবে। সময়জুড়ে থাকে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন।

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে নামেন। ভাষার দাবি চিরতরে স্তব্ধ করতে বর্বর পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালাতেও দ্বিধা করে না। ফলে ঘটনাস্থলেই আবুল বরকত, আবদুল জব্বার ও আবদুস সালাম, শফিক, রফিকসহ নাম না জানা অনেক ছাত্র-যুবা শহীদ হন। ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হন। ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রæয়ারি আবারও রাজপথে নেমে আসেন। তারা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশ নেন। স্বজন হারানোর স্মৃতি অমর করে রাখতে ২৩ ফেব্রæয়ারি রাতে মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে স্মৃতিস্তম্ভ। ২৬ ফেব্রæয়ারি এটি গুঁড়িয়ে দেয় পাক বাহিনী। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়।

১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে। ৯ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ঐক্য ও জাতীয়তাবাদকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানী শাসকের শোষণ ও শাসন থেকে মুক্তি লাভের জন্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে বাঙালিরা। স্বাধীনতা পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের কাছে কানাডা প্রবাসী দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম একুশে ফেব্রæয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রæয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে প্রতিবছর একুশে ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ