পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে অবস্থিত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়াতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ও ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে দু-দেশের সাধারণ মানুষ। সহনশীল এ পরিবেশের মধ্যে শঙ্কা তৈরি করছে ভারতীয় খাসিয়া নাগরিকেরা। সীমান্ত এলাকায় তাদের প্রভাব বেড়েছে। প্রায় সময় খাসিয়াদের গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় খাসিয়া নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও প্রতিকার মিলছে না।
গত ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উৎমা সীমান্তের ওপারে ভারতীয় খাসিয়ার ছোড়া গুলিতে জৈন উদ্দিন (১৮) নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়। সে ছিল উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের বনপুর আদর্শ গ্রামের নুর মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ভারতীয় খাসিয়া নাগরিককে আসামি করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। নিহত জৈন উদ্দিনের সাথে থাকা অন্যরা জানায়, তারা লাকড়ি সংগ্রহ করতে ওপারে গিয়েছিল। গুলি ও হতাহতের ঘটনা ঘটছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তের উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের কালাইরাগ থেকে দমদমা এলাকার মধ্যে।
২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়া ও বিএসএফ এর গুলিতে ৭ বাংলাদেশি নিহত হয়। এ সময়ে আরো ৮ জন বাংলাদেশী নাগরিক আহত হয়েছে। এ ছাড়াও নুরুজ্জামান নামে এক বাংলাদেশি নিখোঁজ আছে। এসব ঘটনার কোনটিতে বিজিবি বিএসএফ পতাকা বৈঠক হলেও অনেক ঘটনায় পতাকা বৈঠকও হয়নি। বিজিবির পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠক ছাড়া হতাহতের ঘটনায় দৃশ্যমান আর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের প্রথম দিন ও বছরের শেষ দিনসহ ৪টি গুলির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ২ জন বাংলাদেশি নিহত ও ৫ বাংলাদেশি নাগরিক আহত হয়েছে। ১ জানুয়ারি ২০২২ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে লুকেশ রায় (৩৬) নিহত হয়। ওই দিন তার সাথে থাকা শৈলেন কন্দ (২৬) আহত হয়। ওই বছরের ১৪ জুলাই মাঝেরগাঁও গ্রামের সুধাংশ দাস (৪৫), একই গ্রামের মোখলেছুর রহমান (৩৫) ও শাহীন আহমদ (৩২) আহত হয় ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে। একই বছরের ২৪ ডিসেম্বর ছয়ফুল নামে একজন বাংলাদেশি আহত হন। আর ৩১ ডিসেম্বর নিহত হয় জৈন উদ্দিন।
গত চার বছরে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুলি ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ২০২২ সালে। ২০২১ সালে ভারতীয়দের গুলিতে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক নিহত না হলেও বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর শৈলেন কন্দ (২৬) নামে এক বাংলাদেশি আহত হয়। এ ছাড়াও ওই বছরের ২৮ এপ্রিল নুরুজ্জামান (২৫) নামে এক বাংলাদেশি নিখোঁজ হয়। সে ওপারে যাওয়ার পর ভারতীয় খাসিয়ারা গুলি ছুড়লে তার সাথে থাকা ৩ জন বাংলাদেশে আসতে পারলেও নুরুজ্জামানের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২০২০ সালের ২০ জুন ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে বাবুল বিশ্বাস নামে এক বাংলাদেশী নিহত ও ইন্দ্র বিশ্বাস নামে একজন আহত হয়। একই বছরের ১১ জুলাই বাবুল মিয়া নিহত হয় ও কয়েস মিয়া নামে একজন আহত হয়। ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ মো. বাবুল মিয়া নিহত হয়। ২০১৮ সালের ৩ জুন ইসরাইল আলী ও ১২ নভেম্বর সাদ্দাম হোসেন নিহত হয়।
এসব গোলাগুলির ঘটনার মধ্যে মাত্র একটি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক আর অন্য সবকটি গুলির ঘটনা ঘটেছে ভারতীয় খাসিয়াদের নাগরিকদের দ্বারা।
এ বিষয়ে উত্তর রণিখাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমান বলেন, অনেক সময় বিজিবি আমাদেরকে বলেন সীমান্ত এলাকা গরম। আপনারা সবাইকে জানিয়ে দিন যাতে কেউ সীমানার ওপারে না যায়। আমরা এলাকায় তা জানিয়ে দেই। কখনো কখনো মাইকিং করাও হয়। এর বাহিরেও বিজিবি সচেতনতামূলক সভা করে থাকে যাতে কোন বাংলাদেশি সীমানার ওপারে না যায়।
সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শেখ মো. সেলিম এ বিষয়ে বলেন, আমরা বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করি। সীমান্ত এলাকায় আমাদের কিছু করার থাকে না। তারপরেও আমরা গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আরো কাজ করব এই এলাকায়।
বিজিবি সিলেট সদর দফতরের সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল জি এইচ এম সেলিম হাসান বলেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধে আমরা সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। বিএসএফ এর সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক বৃদ্ধি করেছি। তাদের সাথে আমাদের প্রতিটি লেভেলের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে আমাদের সরকারের অবস্থান সীমান্ত হত্যা জিরোতে নিয়ে আসতে হবে বলি। তারাও আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন। যখনই এই ধরনের কোনো ঘটনা হয় তার প্রতিবাদ আমরা পাঠাই। তারাও আমাদেরকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিবে বলে এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আমরা সব সময় বলি যদি কেউ অপরাধ করে তাহলে অস্ত্রের ব্যবহার না করে যেন প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাসিয়া নাগরিকরা যাতে অস্ত্রের ব্যবহার না করে সে বিষয়েও আমরা তাদের সাথে কথা বলেছি। সীমান্ত হত্যা বন্ধে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।