পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উত্তাল যমুনার বুকে এখন দৃশ্যমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার অদূরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু নির্মাণের কাজ এখন দৃশ্যমান হয়েছে। সেতু নির্মাণের কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলছে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ৪৯টি স্প্যানের মধ্যে ২৪টি স্প্যান এরই মধ্যে সাইটে এসেছে। অবশিষ্ট ২৫টি স্প্যানের বিভিন্ন ধরনের কাজ চলছে। জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৪০ দশমিক ৯০ শতাংশ। পিলারের পাইলের কাজের জন্য স্টিলের পাইপ দরকার হচ্ছে। জাপানি স্টিলের এসব পাইপ আমদানি করা হচ্ছে ভিয়েতনাম থেকে। মূল সেতুতে যে স্টিলের সুপারস্ট্রাকচার বা স্প্যান বসবে, সেগুলো জাপানি স্টিল দিয়েই তৈরি হবে। এসব সুপারস্ট্রাকচার তৈরি হবে ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারে। তারপর বাংলাদেশে আনা হবে। এর মধ্যে কিছু সুপারস্ট্রাকচার বাংলাদেশেও করা হবে। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতুটির পূর্বপ্রান্তে দুইটি স্প্যান বসানোর পর এটি এখন দৃশ্যমান হচ্ছে।
নতুন প্রযুক্তির লোহা আর কংক্রিটের সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে এই সেতু। অত্যাধুনিক স্প্যানও বসছে সেতুটিতে। এগিয়ে চলছে দ্বিতীয় স্প্যান বসানোর কাজ। সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে নদীর দুই পাড়ে দুই প্যাকেজে চলছে এই সেতুর নির্মাণকাজ। দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী আর কর্মীদের তত্ত¡াবধানে রাতদিন সমান তালে চলছে পাইলিং ও সুপার স্ট্রাকচার বসানোর কাজ। এবারে বড় আকারে রেলপথ সংযোগের আওতায় আসতে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ। যার শুরুটা হচ্ছে যমুনা নদীর ওপরে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু দিয়ে। রেল বিভাগ বলছে, পুরো দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেই উদ্যোগের একটি অংশ উত্তরের জনপদের রেলসংযোগ সংস্কার ও নতুন রেলপথ সংযোজন।
রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতুর নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে। যে গতিতে কাজ করছে তাতে ২০২৪ সালের আগস্টের নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
রেলমন্ত্রী গত সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প এর অগ্রগতি পরিদর্শনের সময় পূর্ব প্রান্তে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর মধ্যে ১ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। বারোটি পিলারের উপর এগারটি স্প্যান বসে গেছে। পূর্ব প্রান্তের অগ্রগতি অনেক ভালো। পশ্চিম প্রান্তে অগ্রগতি কিছুটা কম তবে ঠিকাদার তাদের কাজের গতি বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে পুরো প্রকল্পটি তার নির্ধারিত সময় ২০২৪ সালের আগস্টের আগেই যান চলাচলের জন্য খুলে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, সেতু ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন হচ্ছে। এখানে ব্রডগেজে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে এবং সেতু পার হতে পাঁচ মিনিট সময় লাগবে যেটি এখন প্রায় ৪০ মিনিট সময় লাগছে। ফলে সময় অনেক কমে যাবে। এই সেতুর মাধ্যমে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হবে ।ফলে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটানের সাথে ট্রেন যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে। অধিক সংখ্যক ট্রেন চালানো সম্ভব হবে যার ফলে অভ্যন্তরীণ ট্রেন বৃদ্ধিসহ আন্তঃদেশীয় ট্রেনও অধিকারে চালানো যাবে এবং ভারত থেকে সরাসরি মালবাহী ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।
পরিদর্শনের সময় টাঙ্গাইলের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান, বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত পরিচালক অবকাঠামো মো. শহিদুল ইসলাম, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, যমুনা নদীর বুকে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল প্রান্তে সহস্রাধিক দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের তত্ত¡াবধানে চলছে সেতুর এ কাজ। তিনটি প্যাকেজে আন্তর্জাতিক ৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এরমধ্যে ডবিøউডি-১ প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে জাপানের ওবাইসি-আইএইচআই ও এসএমসিসি নামে তিনটি জয়েন্ট ভেনচার কোম্পানি। ডবিøউডি-২ প্যাকেজের কাজ করছে জাপানের আইএইচআই ওএসএমসিসি কোম্পানি এবং ডাবিøউডি-৩ প্যাকেজের কাজও করছে দু’টি জাপানের দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপন হয়। তবে ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তর লেনে প্রথম ফাটল দেখা দেয়। পরে ফাটলটি দক্ষিণ লেনেও ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকৃত ট্রেনের গতিসীমা কমিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়, বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ ও জাপানের যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকায় রেল সেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জাইকা। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। অতিদ্রæত কাজ চলছে। স্প্যানের উপর যে রেলটা বসবে তা মূলত জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এখানে কোন সিøপার নেই। এই রেলপথ নিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে, প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর বিভিন্ন পর্যায়ের নির্মাণকর্মী ও কর্মকর্তারা জানান, দেশের বৃহৎ মেগা প্রকল্পে যুক্ত হতে পেরে খুশি তারা। কাজের ব্যাপারে তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে খুবই সচেতন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত সেতুর কাজের অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু খুলে দেয়া হলে মানুষের সহজ যাতায়াত যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি খুলবে উত্তর জনপদের ব্যবসা বাণিজ্যসহ সম্ভাবনার নানা দ্বার।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।