পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তার পূর্বপুরুষরা ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজকীয় অঞ্চল শাসন করেছিলেন এবং তার দাদা পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হওয়ায় ১৯৬৭ সালে হায়দ্রাবাদের অষ্টম এবং শেষ নিজাম হিসেবে সিংহাসনে আরোহণের সময় মুকাররম জাহ বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌভাগ্যের উত্তরাধিকারীও হয়েছিলেন। তবুও তিনি ১৯৯৬ সালে তুরস্কে পালিয়ে যান, যখন তার অর্থসম্পদ এবং তার স্বপ্নের পৃথিবীর পতন ঘটে। বলা হয়ে থাকে, হায়দ্রাবাদের নিজামদের কাছে ভারতের অন্যান্য রাজপরিবারগুলির চেয়ে বেশি গহনা ও সম্পদ ছিল। মুকাররম তার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হীরাগুলো কিলোগ্রামে, মুক্তাগুলো একরে এবং তার স্বর্ণের বারগুলো টনে গণনা করেছিলেন। তারপরেও, তার অবস্থা এতোটাই শোচনীয় হয়ে গিয়েছিল যে, তাকে কাপড় পরে গোসল করে ধোপার খরচ বাঁচাতে হত। তিনি যখন চলতি বছরের জানুয়ারির ১৪ তারিখে ইস্তাম্বুলে মারা যান, তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
মুকাররমের নানা ছিলেন শেষ অটোম্যান সুলতান এবং খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল মজিদ। ১৯২৪ সালে মজিদ এবং তার পরিবারকে একটি ট্রেনে অনাড়ম্বরভাবে তৎকালীন শাসক কামাল আতাতুর্ক সুইজারল্যান্ডে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন, যেখানে তাদের দুর্দশা মুকাররমের দাদা তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং হায়দ্রাবাদের সপ্তম নিজাম ওসমান আলী খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সাত বছর পর ওসমান তার ছেলে আজমের জন্য মজিদের একমাত্র কন্যা অটোম্যান প্রিন্সেস দুরুশেভারকে ফ্রান্সের নিসে একটি জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। ১৯৩৩ সালের ৬ অক্টোবর আজম ও দুরুশেভারের প্রথম ছেলে এবং হায়দ্রাবাদের শেষ নিজাম মুকাররমের জন্ম হয়।
হায়দ্রাবাদের দুন স্কুলে পড়াশোনার পর বেশ কয়েক বছর তিনি ব্রিটেনের হ্যারো স্কুলে পড়েন, যেখানে তার সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন ইরাকের কিং ফয়সাল ও তার চাচাতো ভাই জর্ডানের বাদশাহ হুসেন। ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে মুকাররম কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীনতম আবাসিক কলেজ পিটারহাউসে ইংরেজি এবং ইতিহাস পড়া শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে তৃতীয়-শ্রেণী নিয়ে স্নাতক হওয়ার পর তিনি স্যান্ডহার্স্টের রয়্যাল মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন, যেখানে তিনি প্রকৌশলের প্রতি তার অনুরাগ প্রকাশ করেন। ১৯৫৮ সালে ইস্তাম্বুলে ছুটি কাটানোর সময় একজন রসায়ন গবেষকের ব্রিটিশ-শিক্ষিত কন্যা এসরা বিরগিনের সাথে তার সখ্য ঘটে। ১৯৫৯ সালের ১২ এপ্রিল কেনসিংটনে এ দম্পতি গোপনে বিয়ে করেন।
স্যান্ডহার্স্ট থেকে স্নাতক হওয়ার পর মুকাররম সংক্ষিপ্তভাবে জওহরলাল নেহরুর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তার দাদা ওসমান মারা যাওয়ার সময় মুকাররম হায়দ্রাবাদের চৌমহাল্লা প্রাসাদের দরবার হলের চেয়ে লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রিটের জ্যাজ ক্লাবগুলোতে বেশি সময় কাটাতেন। ১৯৭২ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়া সফর করেন এবং তার প্রাইভেট সেক্রেটারিকে একটি ‘ছোট’ খামারবাড়ি কেনার নির্দেশ দেন, যেখানে তিনি হায়দ্রাবাদ দরবারের মধ্যযুগীয় ষড়যন্ত্র থেকে পালিয়ে থাকতে পারেন। অস্ট্রেলিয়াতে তার ক্রয়কৃত পাঁচ লাখ একর জমিসহ মুর্চিসন হাউস স্টেশনটি ভারতের নয় বন্দুকবিশিষ্ট রাজ্যগুলোর চেয়েও বড় ছিল।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী পার্থের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন অংশে অবস্থিত মুর্চিসন হাউস অঞ্চলটি ছিল উষর এবং নয়-ঘণ্টার পথ। কিন্তু মুকাররম মনের সুখে সেখানে তার প্রিয় বিনোদনে লিপ্ত হতেন, তার ডি৯ বুলডোজার দিয়ে স্থানটি পরিষ্কার করতেন, তার কেনা পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতি মেরামত করতেন, যেগুলোর মধ্যে ছিল একটি ব্রিটিশ-নির্মিত উভচর ট্যাঙ্ক এবং ১৯৩৮ সালের লেল্যান্ড স্ক্যামেল ট্যাঙ্ক, যেটিতে বাসের একটি বড় আকারের রেডিয়েটর লাগানো হয়েছিল। তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পত্তি ছিল কোরিয়ান যুদ্ধে থেকে পাওয়া একটি রূপান্তরিত মাইনসুইপার।
মুকাররম তার উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া গহনার বেশিরভাগই জেনেভায় পাচার করেছিলেন, যেখানে সেগুলো একটি বিশাল সুইস ব্যাঙ্কের ভল্টে রাখা হয়েছিল এবং তার নগদ অর্থের ক্রমাগত প্রয়োজন মেটানোর জন্য সেগুলোর সত্যিকার মূল্যের ভগ্নাংশ দামে নিলাম করা হয়েছিল। হায়দ্রাবাদে তার আর্থিক অবস্থার দ্রæতই পতন ঘটতে থাকে। তিনি তার উত্তরাধিকারের ব্যবস্থাপনা বিশ্বাস করে এমন লোকদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন, যারা বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনে। জেনেভায় মেট্রোপোলে তার খামার কর্মীদের এবং পেন্টহাউস স্যুটগুলির ভাড়া মেটাতে হায়দ্রাবাদের ঐতিহ্যগুলি অনেক সউদী শেখ, হলিউড অভিনেত্রী এবং বন্ড স্ট্রিট জুয়েলার্সের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়।
মুর্চিসন হাউস স্টেশনটি লোকসানে চলছিল এবং মুকাররম তার আর্থিক উপদেষ্টাদের দ্বারা শেয়ার বা বন্ডের মতো জিনিসগুলিতে অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য সমস্ত পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করায়, তার অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক দেয়াই ছিল তার আয়ের একমাত্র উৎস। ১৯৯০ সালের মধ্যে তিনি তার বিলগুলি পরিশোধ করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। একজন পুরানো পারিবারিক বন্ধু প্রয়াত হায়দ্রাবাদি রতœকার সদরুদ্দিন জাভেরি তাকে টাকা ধার দিয়েছিলেন এবং সংক্ষিপ্তভাবে তার সমস্যাগুলির সমাধান করেন। কিন্তু ততোদিনে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছিল এবং ১৯৯৬ সালে জাভেরির ঋণ পরিশোধের জন্য মুকাররমের মুর্চিসন হাউস স্টেশন এবং পার্থের বাড়ি নিলামে তোলা হয়।
হায়দ্রাবাদের অস্টম নিজামের ব্যক্তিগত জীবনও ছিল বিপর্যস্ত। মুর্চিসন হাউস কেনার পরপরই যখন এসরা তাকে তালাক দেন। এরপর তিনি পার্থের স্থানীয় হেলেন সিমন্সকে বিয়ে করেন, যিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তার নাম পরিবর্তন করে আয়েশা রাখেন। এটি ছিল একটি রূপকথার গল্পের মতো, যা ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে শেষ পর্যন্ত একটি করুণ কাহিনীতে পরিণত হয়, যখন হেলেন অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্কের কারণে ১৯৮৭ সালে এইডসে আক্রান্ত হন। তার মৃত্যুর কয়েক মাসের মধ্যে মুকাররম বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। তারপর, তিনি ঋণখেলাপি হিসাবে গ্রেফতার হতে চলেছেন এই ভয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে পালিয়ে তুরস্কে চলে যান, যেখানে তিনি নিভৃতে তার শেষ জীবন কাটান।
২০০২ সালে বেশ কিছু দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর তিনি ‘নিজামদের রতœ সম্ভার’ রাখার জন্য ভারত সরকারের কাছ থেকে ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন, যা তিনি নিলাম প্রতিষ্ঠান সোথেবি’স এর মাধ্যমে বিক্রি করার চেষ্টা করেছিলেন, যেগুলির মূল্য কম করে হলেও পঞ্চাশ কোটি ডলার। তিনি একজন প্রকৌশলী হওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত ছিলেন, শত শত কোটি ডলার মূল্যের রাজত্ব পরিচালনা করার জন্য নয়। এক সময় যার অধীনে ১৪ হাজারেরও বেশি কর্মী ছিল, তিনি এক পর্যায়ে তার বন্ধুদের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। হায়দ্রাবাদের শেষ নিজাম মুকাররম জাহের জীবনের শেষ বছরগুলোর সমাপ্তি ঘটে ইস্তাম্বুলে একজন পরিচর্যাকর্মীর তত্ত¡াবধানে। সূত্র : ডন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।