পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের সঙ্গে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে
প্রমত্তা পদ্মায় দ্বিতলসেতু হিসেবে রেল সেতু নির্মাণে যোগাযোগের এক নতুন দ্বার উনমোচনের আশায় প্রহর গুনছেন দক্ষিণাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার বাসিন্দারা। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক জেলায় এখনও কোন রেল যোগাযোগ নেই। প্রমত্তা পদ্মায় দ্বিতলসেতু হিসেবে রেলসেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ৪টি নতুন জেলায় চলবে এই রেল। এতে মানুষের সহজ যোগাযোগের পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্য ও এলাকায় বসবাসকারী লোকজনদের জীবনযাত্রার মান অনেকাংশে বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন সংযুক্ত হওয়া জেলাগুলোর লাখ লাখ মানুষ।
তথ্যমতে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প (পিবিআরএলপি) বাংলাদেশ সরকারের একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনষ্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট (সিএসসি) এর তত্ত¡াবধানে স্বনামধন্য চাইনিজ ঠিকাদার কোম্পানি চায়না রেলওয়ে গ্রæপ লিমিটেড (সিআরইসি) এর মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়িত্ব ও গুণগত মান বজায় রেখে এই প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলেছে।
জানতে চাইলে পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মায় দুটি সেতু। নিচে রেলসেতু, ওপরে ছয় লেনের সড়কপথ। ট্রেন যাবে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে। এটা ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের একটা অংশ। পদ্মা সেতু দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার উন্নয়নের সঙ্গে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে।
এদিকে, ঢাকা থেকে রেলপথে পদ্মাসেতুকে যুক্ত করতে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে রেলসেতু। এরইমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে এই সেতু। এটি চালু হলে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেন যাবে যশোর। ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ কাজ এগিয়েছে ৬৭ শতাংশ।
বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর দিয়ে ট্রেন যাবে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোরে। এই রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনে বুড়িগঙ্গার ওপর নির্মিত হচ্ছে রেল সেতু। ৪শ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের এই সেতু যুক্ত করেছে ঢাকার কেরাণীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাকে। সেতুর ৪টি স্প্যানের মধ্যে ৩টি বসানো হয়েছে। বাকি স্প্যানটি বসানো হবে নভেম্বরে।
ঢাকা-যশোর রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত হচ্ছে এই সেতু। ঢাকার জুরাইন থেকে বুড়িগঙ্গা হয়ে ধলেশ্বরী নদী পর্যন্ত হচ্ছে উড়াল রেলপথ। এই অংশের দৈর্ঘ্য ১৭ কিলোমিটার। বুড়িগঙ্গায় নৌযান চলাচল যাতে নির্বিঘ্ন থাকে সেজন্য পানি থেকে ২০ মিটার উচ্চতায় নির্মিত হচ্ছে রেল সেতু।
ঢাকা-মাওয়া রেল প্রকল্পের ব্রিজ ও ভায়াডাক্ট ইনচার্জ আমিনুল করিম বলেন, ধলেশ্বরী রেল সেতু ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জকে সংযোগ করবে। এই সেতুর ৫টি স্প্যানের মধ্যে ২টি বসানো হয়েছে। বাকিগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। একই সঙ্গে ঢাকা মাওয়া রেলপথ নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলছে।
জানা যায়, গত ১৪ অক্টোবর ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা রেল সেতু প্রকল্প কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং সকল কিছু পেরিয়ে সু-বিশাল এই কর্মকাÐ মাঠ পর্যায়ে শুরু হয় পরবর্তী বছর অর্থ্যাৎ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পটির আওতাধীন রয়েছে ২৩ দশমিক ২৯ কি. মি. দীর্ঘ ভায়াডাক্ট বা উড়াল রেল সেতু, ৫৯টি বড় দৈর্ঘ্যর সেতু, ১৪২টি কালভার্ট ও ১৩৫টি আন্ডারপাস। জনগণের যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের সুবিধার্থে এই প্রকল্পে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত ১৬টি নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে এবং ৪টি পুরাতন স্টেশনের সংস্কার কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
প্রকল্পটিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মুন্সীগঞ্জ, শরিয়তপুর, নড়াইল ও মাদারীপুরকে নতুন করে সরাসরি রেল সংযোগের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি ভবিষ্যতে বরিশাল ও পায়রা বন্দরকেও সংযুক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে এই নির্মাণ কাজে। সর্বোপরি কাজ বাস্তবায়ন শেষে এ রেল ব্যবস্থা হবে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা আনুমানিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে বলে আশা করছেন রেল কর্তৃপক্ষ। রেল-লাইন পরিচালনায় থাকছে অত্যাধুনিক কম্পিউটার বেস্ড রিলে ইন্টারলক্ড সিগনালিং সিষ্টেম, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দ্রæতগতির পরিবেশ বান্ধব ইলেকট্রিক রেললাইন ক্সতরীর সকল সুযোগও উম্মুক্ত থাকছে।
বর্তমান সরকারের দেওয়া বহু প্রতিশ্রæতির মধ্যে এই প্রকল্পটির কার্যক্রম দ্রæতগতিতে এগিয়ে চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় রেল লাইনের শতভাগ কাজের মধ্যে ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া সেকশনে কাজের অগ্রগতি ৭৩ শতাংশ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা সেকশনে কাজের অগ্রগতি ৯০ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর সেকশনের কাজের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে গড়ে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৭৪ শতাংশ। বর্তমানে পদ্মা মূল সেতুতে মাওয়া এবং জাজিরা দুই প্রান্ত থেকে পাথর বিহীন রেল লাইন বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। পদ্মা মূল সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কি. মি. এর মধ্যে ২ দশমিক ৯৯ কি. মি. সম্পন্ন হয়েছে। যা মূল সেতুর দৈর্ঘ্যরে ৪৯ শতাংশ।
আগামী মার্চ ২০২৩ তারিখের মধ্যে পদ্মা সেতুতে পাথর বিহীন রেল লাইনের কাজ সম্পন্ন শেষ হবে। প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের বাকি কাজ নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ লক্ষ্যে সিএসসি এবং সিআরইসির প্রতিনিধিগণ নিরলস ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেশের বুকে সবচেয়ে বড় অবকাঠামোর নাম পদ্মা সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের সেতুটি ঢাকা বিভাগের দুই জেলা মুন্সীগঞ্জ আর শরীয়তপুরকে সংযুক্ত করেছে। সেতুর ডাঙার অংশ যোগ করলে মোট দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার। স্টিল আর কংক্রিটের তৈরি দ্বিতল সেতুর ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক আর নিচে একক রেলপথ।
বিশ্বের খরস্রোতা নদীর তালিকায় আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান। এমন খরস্রোতা নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। তাই সেতুকে টেকসই করতে নির্মাণের সময় বিশেষ প্রযুক্তির পাশাপাশি উচ্চমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা ৪২ আর স্প্যান ৪১টি। খুঁটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়। অর্থাৎ প্রায় ৪০তলা ভবনের উচ্চতার গভীরে পাইল নিয়ে যেতে হয়। বিশ্বে এখন পর্যন্ত কোনো সেতুর জন্য এত গভীর পাইলিং হয়নি।
শরীয়তপুর জেলায় চলছে এই রেল লাইন নির্মাণের কর্মকাÐ। ঢাকা-মাওয়া, মাওয়া-ভাঙ্গা, ভাঙ্গা-যশোর পর্যন্ত তিনধাপে চলছে রেল লাইন নির্মান। যেখানে ছিল না আদৌ কোন রেল যোগাযোগ। পদ্মায় দ্বিতল রেল সেতু থেকে নেমে এই লাইন যাবে নড়াইল পর্যন্ত। নতুন রেল লাইন নির্মাণ কাজ দেখে খুশি ঐ সব জেলার বাসিন্দারা। ট্রেনে চড়ার স্বপ্ন তাদের ঘনিয়ে আসছে।
জীবনে কখনো ট্রেনে চড়তে পারেননি এসব জেলার অনেকেই। আবার অনেকেই আছে যারা নিজ জেলায় ট্রেন না থাকায় নিজ জেলার বাইরে দূরে কোথাও গিয়ে ট্রেন উঠে ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু এবার তাদের স্বপ্ন পূরণের পালা। সবাই নিজ বাড়ির কাছে ট্রেনের হুইসেল শুনবে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য পদ্মা রেল সেতুর হওয়ার কারণে বদলে যাচ্ছে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই রেল লাইন যুক্ত করবে মোট ৯ জেলাকে। এর মধ্যে ঢাকার পাশে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল এই ৪ জেলায় এই প্রথম নতুন রেল লাইন হচ্ছে। এনিয়ে স্থানীয়দের আগ্রহও বেশি। প্রত্যাশা পূরণের অগ্রগতি চোখের সামনে দেখে তারা উচ্ছ¡সিত। এই রেল লাইন শুধু যোগাযোগের অগ্রগতিই সাধন করবে না, পদ্মার দুই পাড়ের মানুষের মেল বন্ধনকে করবে আরও দৃঢ়।
গত বছর ২৫ জুন বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু উদ্ধোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিচতলার রেললাইন দিয়ে আগামী বছর ট্রেন চলাচলের আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকারের সেতু বিভাগ।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের সার্বিক কাজের ৭৩ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। কাজের যে অগ্রগতি হয়েছে তা সন্তোষজনক। আগামী জুনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলবে। সেভাবেই কাজ এগিয়ে চলছে। আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের রেল প্রজেক্টের মেয়াদ আছে। আগেই ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত রেলসংযোগ করা হয়েছে। আর আগামী জুনের মধ্যে ভাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত কাজ শেষ হবে। কাজের সুবিধার জন্য ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া পর্যন্ত রেলের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত রেললাইন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। আমাদেরকে সফলভাবে কাজ করে যেতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।